বুধবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা
ফাইনালে ভারত

ক্যারিশমেটিক জয় ভারতের

মেজবাহ্-উল-হক

ক্যারিশমেটিক জয় ভারতের

আগের দিন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে মহাচাপের ৩২ ঘণ্টার ম্যাচের পর পুরস্কার বিতরণী মঞ্চে উপস্থাপক সঞ্জয় মাঞ্জেরেকারকে ভারতের সুপারস্টার ব্যাটার বিরাট কোহলি বললেন, ‘আমি বড্ড ক্লান্ত। সাক্ষাৎকারটা ছোট করে নেন।’

পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ম্যাচে কোহলি আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের ৭৭তম সেঞ্চুরি করেছেন। ১৩ হাজার রানের মাইফলক স্পর্শ করেছেন। তারপরও কোহলির চোখে-মুখে ক্লান্তি। তিনি বলেন, ‘মাঠে প্রচুর দৌড়ে রান নিয়েছি। প্রত্যেক সময়েই মনে হচ্ছিল, আগামীকাল (গতকালকের ম্যাচ) আবার দুপুর আমাদের মাঠে নামতে হবে।’

শেষ পর্যন্ত কোহলির আতঙ্কই সত্যি হলো। টানা তৃতীয় দিনের মতো শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে গতকাল কলম্বোয় খেলতে নামে ভারত। ক্লান্ত কোহলি ৩ রানের বেশি করতেই পারলেন না। ধসে পড়ে পুরো ভারতীয় ব্যাটিং লাইনআপ।

আগের দিনই পাকিস্তানের শক্তিশালী বোলিং লাইনআপের বিরুদ্ধে যে ভারতীয় ব্যাটাররা ৩৫৬ রানের পাহাড় গড়েছিলেন তারাই যেন গতকাল ক্লান্তির কাছে হেরে গেলেন। ২১৩ রানেই অলআউট।

কিন্তু ক্লান্ত ভারতের করা ২১৪ রানের সহজ টার্গেটেই পৌঁছাতে পারল না স্বাগতিক শ্রীলঙ্কা। তারা মাত্র ১৭২ রানেই গুঁড়িয়ে গেল। ৪১ রানের ক্যারিশমেটিক জয়ে এক ম্যাচ হাতে রেখেই সবার আগে ফাইনালে উঠে গেল ভারত।

আগের দিন পাকিস্তানকে মাত্র ১২৮ রানে অলআউট করার নেপথ্যে ছিলেন ভারতের স্পিনার কুলদীপ যাদব। একাই নিয়েছিলেন ৫ উইকেট। শ্রীলঙ্কাও সেই যাদবের কাছেই ধরাশায়ী। ৪৩ রানে নিয়েছেন ৪ উইকেট।

তবে গতকাল ভারতীয় ব্যাটাররা ক্লান্তিতে নুয়ে পড়লেও উজ্জীবিত ছিলেন বোলাররা। পুরো বোলিং ইউনিটই দুর্দান্ত পারফর্ম করেছে। শুরুতে দুই পেসার জাসপ্রিত বুমরাহ এবং মোহাম্মদ সিরাজ আগ্রাসী বোলিং করে লঙ্কান ব্যাটারদের ওপর মহাচাপ তৈরি করেন। এ সুযোগে স্পিনাররা টপাটপ উইকেট তুলে নেন।

কলম্বোয় ভারতের ব্যাটিংয়ের শুরুটা কিন্তু মোটেও খারাপ ছিল না। তারা ১১ ওভারে বিনা উইকেটে ৮০ রান করেছিল। এরপর লঙ্কান দুই স্পিনার দুনিথ ভেল্লালাগে ও চারিথ আশালঙ্কা ভারতের শক্তিশালী ব্যাটিং লাইনআপকে বিধ্বস্ত করে দেন। ওয়েলালেগ ৪০ রানে নিয়েছেন ৫ উইকেট। আর আশালঙ্কা নেন ৪ উইকেট। লঙ্কান স্পিনার ওয়েলালেগ তার ওয়ানডে ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো পাঁচ উইকেট পেলেন। এটিই তার ক্যারিয়ারে সেরা বোলিং ফিগার। আশালঙ্কাও তার ক্যারিয়ারে সেরা বোলিং করেছেন। ৯ ওভারে তিনি মাত্র ১৮ রান দিয়েছেন। দারুণ শুরুর পরও কাল ২০০ রানের আগেই ৯ উইকেট হারায় ভারত। ৪৭তম ওভারে বৃষ্টিতে যখন খেলা বন্ধ হয় তখন ভারতের স্কোর ছিল ১৯৭/৯। পুনরায় খেলা শুরু হলে দলীয় স্কোরে আর মাত্র ১৬ রান যোগ করতে পারে।

আগের দিন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে হাফ সেঞ্চুরি করা ভারত দলপতি লঙ্কানদের বিরুদ্ধেও তুলে নিয়েছেন আরেকটি ফিফটি। তবে ভারতের স্কোর বোর্ডে রোহিতের ৫৩ রানই সর্বোচ্চ। এ ছাড়া পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সেঞ্চুরি করা লোকেশ রাহুলের ব্যাট থেকে এসেছে ৩৯ রান। ৩৩ রান করেছেন ইশান কিষান।

ভয়ংকর ওপেনার শুভমন গিলকে বোল্ড করে ভারতীয় ইনিংসের ধস নামানো শুরু করেন ভেল্লালাগে। এরপর পরের ওভারে এসে ভারতের সেরা ব্যাটার কোহলিকে ফিরিয়ে দেন তিনি। দলীয় ৯১ রানে রোহিত শর্মাকেও বিদায় করে দেন তিনি। টানা তিন ওভারে ভারতের সেরা তিন ব্যাটার গিল, কোহলি ও রোহিতকে ফিরিয়ে দিয়ে ম্যাচের চিত্রই পাল্টে দেন তিনি।

এরপর ইষান কিষান ও লোকেশ রাহুল মিলে ইনিংস মেরামত করতে নামেন। তারা ৬৩ রানের জুটি গড়ে বড় ইনিংসের ইঙ্গিত দেন। কিন্তু এরপর আবারও ভারতীয় ইনিংসে ধস নামে। মাত্র ১৬ রানের মধ্যেই ৫ উইকেট হারায় ভারত।

১৭০-১৮৬ রানের মধ্যে একে একে সাজঘরে ফেরেন ইশান, হার্দিক পান্ডিয়া, রবীন্দ্র জাদেজা, জাসপ্রিত বুমরাহ ও কুলদ্বীপ যাদব। বিনা উইকেটে ৮০ রান করা ভারত কিন্তু ১৮৬ রানে ৯ উইকেট হারিয়ে ফেলে। শেষ পর্যন্ত দলীয় স্কোর ২১৩ হয় অক্ষর প্যাটেলের করা ২৬ রানের সুবাদে।

কিন্তু ভারতীয় বোলাররা ক্যারিশম্যাটিক বোলিং করে এই ২১৩ রানকেই শ্রীলঙ্কার সামনে ‘এভারেস্ট’ হিসেবে দাঁড় করায়। আর লঙ্কানদের পক্ষে এভারেস্ট জয় করা সম্ভব হলো না। বেসক্যাম্পেই তাদের যাত্রাভঙ্গ।

সর্বশেষ খবর