বৃহস্পতিবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা
প্রথম ওয়ানডে আজ

ট্রায়াল সিরিজে লড়াইয়ের গন্ধ

মেজবাহ্-উল-হক

ট্রায়াল সিরিজে লড়াইয়ের গন্ধ

দুয়ারে কড়া নাড়ছে বিশ্বকাপ। আর মাত্র সপ্তাহ তিনেক বাকি। এমন সময় এই সিরিজ। একে বিশ্বকাপের ট্রায়াল সিরিজই বলা যায়। তবে দুই দলের কাছে এই সিরিজের আবেদন দুই রকম। যদিও বিশ্বকাপের জন্য সতর্ক থাকতে দুই দল তাদের সেরা ক্রিকেটারদের খেলাচ্ছে না।

বাংলাদেশ যে তাদের সেরা দলকে খেলাচ্ছে না তা তো সবারই জানা। নিয়মিত অধিনায়ক সাকিব আল হাসান নেই। নাজমুল হোসেন শান্তর ইনজুরি। মুশফিকুর রহিম নেই। দলের সেরা তিন পেসার তাসকিন আহমেদ, শরিফুল ইসলাম ও হাসান মাহমুদ নেই। খেলবেন না অলরাউন্ডার মেহেদী হাসান মিরাজ। বলা যায়, বিশ্বকাপ দলে যারা থাকবেন তাদের সাত ক্রিকেটারই নেই।

আর নিউজিল্যান্ডের হয়ে যারা সামনের বিশ্বকাপে খেলবেন তাদের মধ্যে মাত্র পাঁচ ক্রিকেটার আছেন এই দলে- লকি ফার্গুসন, ট্রেন্টবোল্ট, রাচিন রবীন্দ্র, ঈশ সুধী ও উইল ইয়াং। নিউজিল্যান্ডের জন্য এই সিরিজের গুরুত্ব অনেক। কারণ, সামনের মাসেই ভারতে অনুষ্ঠিত হবে বিশ্বকাপ। তাই কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়াটা তাদের জন্য জরুরি। নিউজিল্যান্ডের এই দলের অধিকাংশ ক্রিকেটারই এর আগে বাংলাদেশে আসেননি। এমনকি এই সিরিজের জন্য নিউজিল্যান্ড দলের অধিনায়ক লকি ফার্গুসনও প্রথমবারের মতো এসেছেন।

বাংলাদেশে ওয়ানডে সিরিজ খেলতে নিউজিল্যান্ড সব শেষ এসেছিল ২০১৩ সালে। কিন্তু সে সিরিজে তারা হোয়াইটওয়াশ হয়েছিল। তার আগে ২০১০ সালেও ওয়ানডে সিরিজে নিউজিল্যান্ড হোয়াইটওয়াশ হয়েছিল। তবে টাইগারদের বাংলার মাটিতে ব্ল্যাক ক্যাপসরা ওয়ানডেতে সব শেষ হারায় ২০০৮ সালে। তাই নতুন দল নিয়ে এলেও অধিনায়ক ফার্গুসন জয়ের জন্য মরিয়া। তবে এখানকার চ্যালেঞ্জ সম্পর্কেও তার জানা। ফার্গুসন বলেন, ‘প্রতিটি সিরিজই আমরা জয়ের জন্য খেলি। বাংলাদেশ তাদের কন্ডিশনে খুবই ভালো, আমাদের জন্য এখানে বিশাল এক চ্যালেঞ্জ।’

বাংলাদেশের কাছে এটি বিশ্বকাপের আগে আরেকটি পরীক্ষা-নিরীক্ষার সিরিজ। কারণ, বিশ্বকাপের স্কোয়াড দেওয়ার আগে আরেকবার ঝালিয়ে নেওয়া। যদিও বাংলাদেশের ১৫ সদস্যের ১২ জনই চূড়ান্ত (সাকিব, তামিম, লিটন, মুশফিক, শান্ত, মিরাজ, হৃদয়, তাসকিন, হাসান মাহমুদ, শরিফুল, মুস্তাফিজ, নাসুম)! সত্যি কথা বলতে, শেষের তিনটি স্লটের জন্য এই সিরিজ। তাই তিন ক্রিকেটার শেখ মেহেদী হাসান, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ও সৌম্য সরকারের সামনে দারুণ সুযোগ। যদিও এশিয়া কাপের শেষ ম্যাচে ভারতের বিরুদ্ধে দুর্দান্ত পারফর্ম করে বিশ্বকাপ স্কোয়াডে নিজের জায়গা বুকিং নিয়েই রেখেছেন। তবে এই সিরিজে ভালো করলেই বিশ্বকাপ টিকিট নিশ্চিত হয়ে যাবে।

মাহমুদুল্লাহ রিয়াদকে বিশ্বকাপ দলে দেখার জন্য তো গণদাবি উঠেছিল। কিন্তু শুধু আবেগ দিয়ে তো আর চলে না। তাই এই সিরিজে নিজেকে নতুন করে প্রমাণ করতে হবে মাহমুদুল্লাহকে। একই সুযোগ সৌম্য সরকারের সামনেও। টিম ম্যানেজমেন্টও খুব করে চাচ্ছেন সৌম্যর মতো একজন মাল্টি ট্যালেন্টেড ক্রিকেটার স্কোয়াডে থাকুক। কেননা, সৌম্য ভালো ফিল্ডার, ওপেনিংয়ের জন্য ভালো ব্যাকআপ, ব্যাটিং অর্ডারের সাত নম্বর পজিশনেও ব্যাটিং করতে পারেন, আর পঞ্চম পেস বোলার হিসেবেও তার জুড়ি নেই। এখন সৌম্যই পারেন নিউজিল্যান্ড সিরিজে পারফর্ম করে নিজেকে বিশ্বকাপ দলে সুযোগ করে নিতে।

ক্যারিশমেটিক পারফরম্যান্স করে অন্য যে কেউও জায়গা করে নিতে পারেন বিশ্বকাপ দলে।

এই সিরিজটি লিটন দাসের জন্যও বড় চ্যালেঞ্জিং। একে তো এশিয়া কাপে তার সময়টা ভালো কাটেনি। তাই বিশ্বকাপের আগে আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে নেওয়ার মিশন। অন্যদিকে অধিনায়ক হিসেবে নিজেকে মেলে ধরা। সাকিবের পরে তাকেই যে বাংলাদেশের অধিনায়ক হিসেবে পরিকল্পনায় রেখেছে বিসিবি।

লিটনের মতো একই চ্যালেঞ্জ নিউজিল্যান্ডের অধিনায়ক ফার্গুসনেরও। তিনিও চান এই সিরিজ জিতে নিজেকে ভালো অধিনায়ক হিসেবে মেলে ধরতে। ফার্গুসন বলেন, ‘অধিনায়ক হওয়াটা আমার জন্য দারুণ সম্মানের। ফাস্ট বোলার হিসেবে আমি জানি, ব্যাপারটা একটু ভিন্ন। তবে সুবিধাও আছে। বোলারদের সঙ্গে কথা বলা, পরিকল্পনা সাজানো, চাপের মুহূর্তে তাদের পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাওয়ার অভিজ্ঞতা। তবে আমি শুধু আমাদের দলে দারুণ নেতৃত্বের ধারাটাই ধরে রাখতে চাইব এ সিরিজেও।’

তাই বিশ্বকাপের আগে এই সিরিজকে ট্রায়াল সিরিজ মনে হলেও এখানে লড়াইয়ের গন্ধও পাওয়া যাচ্ছে। দ্বিতীয় সারির স্কোয়াড নিয়েও দুই দল জয়ের জন্য মুখিয়ে আছে।

 

সর্বশেষ খবর