বুধবার, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

স্কোয়াডে কেন নেই তামিম!

বিশ্বকাপের টিকিট যাদের হাতে

মেজবাহ্-উল-হক

তামিমের ইনজুরির বিষয়টি মাথায় রেখেই সবার সঙ্গে আলোচনা করে তামিমকে বিশ্বকাপ স্কোয়াডে রাখা হয়নি

মিনহাজুল আবেদীন নান্নু, প্রধান নির্বাচক

 

তামিম ইকবাল কেন দলে নেই? ফেসবুকে দল ঘোষণার পর প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন নান্নু যখন গতকাল মিরপর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে প্রেস কনফারেন্সে  সশরীরে হাজির হন তখন তার কাছে এটিই ছিল প্রথম প্রশ্ন! উত্তরে তিনি বলেন, ‘তামিম ইকবালের ইনজুরি অনেক দিন থেকেই ছিল। ইনজুরির সঙ্গে তিনি ফাইট করছিলেন। নিউজিল্যান্ড সিরিজে তাকে রাখা হয়েছিল ফিটনেস দেখার জন্য। কিন্তু তিনি অস্বস্তিবোধ করেছেন। এখানে তার ইনজুরির বিষয়টি মাথায় রেখেই সবার সঙ্গে আলোচনা করে তামিমকে বিশ্বকাপ স্কোয়াডে রাখা হয়নি।’

তামিমকে দলে না রাখার বিষয়ে বিসিবির মেডিক্যাল টিমের সঙ্গে আপনারা কথা বলেছেন কি না? নান্নু বলেন, ‘আমরা  সবার সঙ্গেই আলোচনা করেছি। মেডিক্যাল টিম আমাদের আপডেট দিয়েছে। তাদের কাছ থেকে না জেনে যে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি এমন নয়।’

তামিমের বিষয়ে কোচ হাতুরাসিংহে ও অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের অবস্থান কী ছিল? নান্নু বলেন, ‘এটা টিম ম্যানেজমেন্টের বিষয়। আমরা সবার সঙ্গে আলোচনা করেছি। টিম ম্যানেজমেন্টে তো কোচ আছে, ক্যাপ্টেন আছে। সবার সঙ্গেই আলোচনা হয়েছে।’

মিডিয়ায় এসেছে ক্যাপ্টেন সাকিব নাকি বলেছেন, ‘আনফিট’ কোনো ক্রিকেটার স্কোয়াডে থাকলে তিনি দলের নেতৃত্বে থাকবেন না! এ কথার সত্যতা কতটা? নান্নু, ‘আমরা এ ধরনের কোনো কথা শুনিনি। এ ধরনের ইনফরমেশন ছিল না।’

ফর্মে থাকা ৮০ ভাগ ফিট বা ‘আনফিট’ তামিম ভালো নাকি শতভাগ ফিট কিন্তু ফর্ম নেই এমন ওপেনার ভালো? নান্নু বলেন, ‘আমরা কিন্তু তামিমের জন্য দল ঘোষণা করতে দেরি করেছি। তার ফিটনেসের জন্য অপেক্ষা করেছি। নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে শেষ ম্যাচটা তিনি খেলতে পারেননি। কিছু কিছু ইনজুরি এমন আছে, যেগুলো যে কোনো সময় ফিরে আসতে পারে। তামিম কিন্তু নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ম্যাচ খেলার পর ব্যথা অনুভব করেছেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘তামিম ইকবাল আমাদের অন্যতম সেরা ক্রিকেটার। কিন্তু ইনজুরির বিষয়ে তো কিছু করার নেই।’

গতকাল সকাল থেকেই একটা নাটকীয় পরিস্থিতি মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে। প্রেসবক্সের আবহটাও অন্যরকম। মাঠে বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ড ম্যাচ চলছিল, কিন্তু মিডিয়া কর্মীদের মনোযোগ বিশ্বকাপ স্কোয়াড নিয়ে।

তামিম ইকবাল কি স্কোয়াডে থাকছেন? এক দিন আগেও এই প্রশ্নটা অবাস্তব মনে হচ্ছিল! কিন্তু তামিম নিজেই যখন প্রেস কনফারেন্সে বারবার জানিয়ে দেন তিনি পুরোপুরি ‘ফিট’ নন, তারপরই যেন টিম ম্যানেজমেন্ট বেঁকে বসে। তবে তামিম না থাকলেও এই দলটিকে ভারসাম্যপূর্ণ বলেছেন সহঅধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। তিনি বলেন, ‘বিশ্বকাপ দলটা খুবই ভালো হয়েছে। ভারসাম্যপূর্ণ। তবে তামিম ভাইকে মিস করব।’

বারবার বিশ্বকাপ এলেই স্কোয়াড ঘোষণা নিয়ে শুরু হয় তুমুল বিতর্ক। সেই প্রথম থেকেই এমন ঘটনা ঘটছে। ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করে। সেই আসরে মিনহাজুল আবেদীন নান্নুকে (বর্তমান প্রধান নির্বাচক) স্কোয়াডে রাখা হবে কি না তা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা হয়।

২০০৭ বিশ্বকাপে বিতর্কের প্রধান বিষয় ছিল উইকেটকিপিং নিয়ে। উইকেটের পেছনে কে থাকবেন, খালেদ মাসুদ পাইলট নাকি মুশফিকুর রহিম। ২০১১ সালে ঘরের মাঠে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে মাশরাফি বিন মর্তুজার কান্না এখনো সমর্থকদের চোখে ভাসে। নির্বাচকরা সেবার ‘আনফিট’ বলে নড়াইল এক্সপ্রেসকে বাদ দিয়েছিলেন। কিন্তু মাশরাফির দাবি ছিল তিনি ‘ফিট’! যদিও শেষ পর্যন্ত মাশরাফিকে ছাড়াই বিশ্বকাপে খেলে বাংলাদেশ। দারুণ পারফর্ম করেছিল ‘টিম বাংলাদেশ’। কিন্তু নেট রানরেটে পিছিয়ে থাকায় পরের রাউন্ডে যেতে পারেনি টাইগাররা।

২০১৫ সালে বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন পেসার রুবেল হোসেন। ‘নারী কেলেঙ্কারী’ ঘটনায় জেলেও গিয়েছিলেন এই পেসার। তারপর জামিন পেয়ে বিশ্বকাপ খেলতে যান। শেষ পর্যন্ত তার এক জাদুকরী স্পেলে ইংল্যান্ডকে হারায় বাংলাদেশ। শেষ পর্যন্ত প্রথম বারের মতো বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে সুযোগ পেয়ে যায় লাল-সবুজরা। ২০১৯ বিশ্বকাপের দৃশ্যপটে ছিলেন পেসার তাসকিন আহমেদ। সদ্য চোট থেকে মুক্তি পাওয়া তাসকিনকে দলে রাখা হয়নি। তারপর তাসকিনের সেই কান্না ভক্তদের মন ছুঁয়ে যায়।

তবে এই বিশ্বকাপ স্কোয়াডে জায়গা না পাওয়া তামিম এখনো তার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেননি। কিন্তু এটা তো বুঝতে সমস্যা হওয়ার কথা নয় যে, স্বপ্নের বিশ্বকাপ স্কোয়াড থেকে বাদ পড়াটা কতটা কষ্টের! কতটা বেদনার!

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর