বুধবার, ১১ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা

ইংলিশে ‘দুর্বল’ সাকিবরা!

মেজবাহ্-উল-হক

ইংলিশে ‘দুর্বল’ সাকিবরা!

সব কিছুই যেন বাংলাদেশের ফেভারে ছিল। স্লো উইকেট। ধর্মশালার এই মাঠে জয়ের অভিজ্ঞতা। এমনকি টস জিতে বাংলাদেশের কাজটা আরও সহজ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু সমস্যা এক জায়গাতেই ‘মনস্তাত্ত্বিক’! প্রতিপক্ষ বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন- এই ভয়টাই যেন বাংলাদেশ দলকে গ্রাস করেছিল।

সবকিছু অনুকূলে থাকার পরও ১৩৭ রানের বিশাল ব্যবধানে হেরে গেল লাল-সবুজরা। না বোলিং না ব্যাটিং, না ফিল্ডিং- কোনো বিভাগেই নিজেদের মেলে ধরতে পারলেন না বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা।

ইংল্যান্ড প্রথমে ব্যাট করে ৩৬৪ রান করে। আর বাংলাদেশের ইনিংস গুটিয়ে যায় মাত্র ২২৭ রানেই। প্রথম ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ৯ উইকেটের বিশাল ব্যবধানে হারার পর এমন আগ্রাসী জয়ে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা যেন আত্মবিশ্বাস ফিরে পেল।

গতকাল ৪০.২ ওভারে ইংলিশদের দলীয় রান ৩০০ হওয়ার পর মনে হচ্ছিল যেন স্কোরটা নির্ঘাত চারশ ছাড়িয়ে যাবে। দুই দিন আগেই লঙ্কানদের বিরুদ্ধে দক্ষিণ আফ্রিকা যে ৪২৮ রান করে বিশ্বকাপে দলীয় সংগ্রহের নতুন রেকর্ড গড়েছিল, ধারাভাষ্যকররা বারবার বলছিলেন সেটিও ছাড়িয়ে যেতে পারেন ধর্মশালায়। কিন্তু শেষ ১০ ওভারে যেন বাংলার বোলারদের ঘুম ভাঙে। ফিল্ডাররাও কিছুটা চনমনে হয়ে ওঠেন। সে কারণেই রানের গতিটা কমে যায়। স্লগ ওভারে ইংল্যান্ডকে সুবিধা করতে দেয়নি বাংলাদেশ।

তবে ম্যাচের প্রথম ৪০ ওভারে বোলিং ছিল যাচ্ছেতাই। একমাত্র সাকিব আল হাসান ছাড়া আর কোনো বোলারই সুবিধা করতে পারেননি। টাইগার ক্যাপ্টেন ইংলিশদের সাইক্লোন গতির ব্যাটিংয়ের মধ্যেও নিজের কোটার ১০ ওভার শেষ করেছেন ৫২ রান দিয়ে।

প্রথম ম্যাচের মতো গতকালও প্রতিপক্ষের প্রথম উইকেট শিকার করেন সাকিব। কিন্তু পেসারদের কোনো সহায়তাই পেলেন না। দলের সেরা পেসাররা একের পর এক শর্ট বল দিতে থাকেন। আর এই সুযোগে ইংলিশ ব্যাটাররা বাইশ গজে রীতিমতো ঝড় তোলেন। ওপেনার ডেভিড মালান মাত্র ১০৭ বলে খেলেছেন ১৪০ রানের ঝড়ো ইনিংস। এটাই তার ক্যারিয়ারে সেরা ইনিংস। জো রুট খেলেছেন ৬৮ বলে ৮২ রানের ইনিংস। হাফ সেঞ্চুরি করেছেন ওপেনার জনি বেয়ারস্টোও।

মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের জায়গায় একাদশে সুযোগ পাওয়া শেখ মেহেদী হাসান স্লগ ওভারে ৪ উইকেট নিয়েও রানের গতি থামাতে পারেননি। স্লগ ওভারে এসে ভালো করেছেন পেসার শরিফুলও। তিনিও নিয়েছেন তিন উইকেট। 

বোলিং ও ফিল্ডিংয়ের চেয়েও দৃষ্টিকটু ছিল টাইগারদের ব্যাটিং। ৩৬৫ রানের পাহাড় সামনে রেখে ব্যাট করতে ১০ ওভারের মধ্যেই সেরা চার ব্যাটার ড্রেসিংরুমে। ৪৯ রানের মধ্যে তানজিদ তামিম, নাজমুল হোসেন শান্ত, সাকিব আল হাসান ও মেহেদী হাসান মিরাজকে হারানোর পর লিটন দাস ও মুশফিকুর রহিম লড়াই করেও ম্যাচে কোনো গতি আনতে পারেননি।

ওপেনিংয়ে নেমে এক প্রান্ত আঁকড়ে থেকে ৬৬ বলে ৭৬ রান করলেন। আর মুশফিকুর রহিম খেললেন ৬৪ বলে ৫১ রানের ইনিংস। আবারও টপ অর্ডারের ব্যর্থতায় ৫০ ওভারই খেলতে পারলেন না বাংলাদেশের ব্যাটাররা।

ধর্মশালার এই মাঠে অভিজ্ঞ বাংলাদেশ। এর আগে কখনো হারেনি। এমনকি আগের ম্যাচে এ মাঠেই আফগানদের উড়িয়ে বিশ্বকাপে উড়ন্ত যাত্রা শুরু করেছিল। কিন্তু এই ম্যাচে মনের ভয়ই সাকিবদের শেষ করে দিল। বোলিং-ব্যাটিং মিলে ১০০ ওভারের ম্যাচে এক মুহূর্তের জন্যও মনে হয়নি বাংলাদেশ ম্যাচে আছে! 

বাংলাদেশের স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের বড় সমস্যা ইংলিশে। কি যেন এক অদ্ভুত কারণে ‘ইংলিশ’-সাবজেক্টে অন্যরকম ভীতি কাজ করে মনে। সাকিবদের অবস্থাও একই রকম। মনের ভয়েই কিনা আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে রেকর্ড জয়ে আত্মবিশ্বাসে টইটম্বুর দলটা হেরে গেল বাজেভাবে।

বোলিং, ব্যাটিং, ফিল্ডিং- তিন বিভাগেই হতশ্রী। সত্যিই ইংলিশদের কাছে বড্ড ‘দুর্বল’ সাকিবরা।

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর