বৃহস্পতিবার, ১২ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা

ধর্মশালার ধকল শেষে মিশন চেন্নাই

মেজবাহ্-উল-হক

ধর্মশালার ধকল শেষে মিশন চেন্নাই

ধর্মশালা থেকে চেন্নাইয়ের পথে এয়ারক্রাফটে মেহেদী মিরাজের সঙ্গে দাবা খেলায় মেতেছেন টাইগার ক্যাপ্টেন সাকিব আল হাসান।

নয়নাভিরাম ধর্মশালায় আফগানদের বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচটি যেমন বাংলাদেশ দলকে সুখস্বপ্নে আচ্ছন্ন করে দিয়েছিল, ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ঠিক পরের ম্যাচটি এসেছিল দুঃস্বপ্ন হয়ে! আফগানদের বিরুদ্ধে জয়টি ছিল বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় (বলের হিসাবে) জয়, তেমনি ইংলিশদের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বাজে হার!

টাইগারদের ভরসার জায়গা হচ্ছে- বোলিং আক্রমণ! পেস এবং স্পিন দুই বিভাগেই দুর্দান্ত। আর ব্যাটিং খুবই এভারেজ মানের! টপঅর্ডার যাচ্ছেতাই। এই বিশ্বকাপে অংশ নেওয়া দলগুলোর মধ্যে কেবলমাত্র নেদারল্যান্ডসের চেয়ে ভালো! ২০২২ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ‘১ থেকে ৪ নম্বর ব্যাটসম্যানের গড় মাত্র ৩২.০৪।

তাই ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে প্রথমে বোলিং নেওয়ার পর যখন বোলিং লাইনআপ সুবিধা করতে পারল না তখনই যেন মনস্তাত্ত্বিকভাবে হেরে যায় বাংলাদেশ! তাই বলে যে উইকেটে ইংলিশরা ৩৬৪ রান করে সেখানে টাইগাররা মাত্র ২২৭ রানেই অলআউট!

যে কোনো দলের ব্যাটিংয়ে প্রধান ভূমিকা রাখেন টপঅর্ডারের। চলতি বিশ্বকাপে তো রীতিমতো রানবন্যা চলছে। ৩০০ প্লাস রান করেও স্বস্তিতে থাকতে পারছে না প্রথমে ব্যাট করা দল। প্রতিটি দলের টপঅর্ডার ব্যাটসম্যানদের ব্যাটে রীতিমতো রানের ফোয়ারা ফুটছে। শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ৩৪৫ রানের টার্গেটে পাকিস্তান পৌঁছে যায় টপঅর্ডারের ক্যারিশমায়।

ভারতের এমন ‘তক্তা মার্কা’ উইকেটেও বাংলাদেশের টপঅর্ডার নিজেদের খুঁজে পাচ্ছেন না। প্রথম ম্যাচে আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে প্রথম চার উইকেট পড়ে যায় মাত্র ১১২ রানে। ওই ম্যাচে বোলাররা আফগানদের মাত্র ১৫৬ রানে অলআউট করে দিয়েছিল বলে রক্ষা।

ধর্মশালায় ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ম্যাচটি সাকিবদের জন্য ছিল ‘মনস্তাত্বিক’ ধকলের। বিশ্ব চ্যাম্পিয়নের বিরুদ্ধে খেলা মানেই যেন বাড়তি চাপ। তবে ধর্মশালার ধকল শেষে এখন টাইগারদের মিশন চেন্নাই। যদিও সেখানে বাংলাদেশের সামনে আরেক চ্যালেঞ্জিং প্রতিপক্ষ- বিশ্বকাপের শেষ দুই আসরের ফাইনালিস্ট নিউজিল্যান্ড।

কিন্তু ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে যেখানে টার্গেট ৩৬৫ রান সেই ম্যাচেই কি না ৪৯ রানেই প্রথম চার ব্যাটসম্যান ফিরে গেলেন ড্রেসিংরুমে। দলীয় হাফ সেঞ্চুরি হওয়ার আগেই ভেঙে যায় ব্যাটিং লাইনআপের মেরুদণ্ড। সবচেয়ে ভয়াবহ বিষয় হচ্ছে, এই ম্যাচে প্রথম যে চার ব্যাটসম্যান আউট হয়েছেন তাদের রানের যোগফল মাত্র ১০!

ওপেনার তানজিদ তামিম দুটির বেশি বলই মোকাবিলা করতে পারেননি। প্রথম বলেই ফিরে গেছেন বাংলাদেশ দলের সবচেয়ে ধারাবাহিক ব্যাটসম্যান নাজমুল হোসেন শান্ত। ভরসার প্রতীক ক্যাপ্টেন সাকিব ৯ বল খেলে ১ রানের বেশি করতেই পারলেন না। এদিন শুরু থেকেই কেমন যেন অস্থির মনে হচ্ছিল বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারকে। আগের ম্যাচের সেরা ক্রিকেটার মেহেদী হাসান মিরাজও এদিন যেন স্রোতে গা ভাসিয়ে দিলেন। ৭ বল খেলে ৮ রানে বিদায়। যে দলের প্রথম চার ব্যাটসম্যানের কেউ-ই দুই অঙ্কের কোটায় নিজের স্কোরকে নিয়ে যেতে পারেন না সেই দলের স্কোর আর কতই-বা হবে! তারপরও লিটন দাস ও মুশফিকুর রহিম ৭২ রানের জুটি গড়েছিলেন বলেই দলের ইনিংস শেষ পর্যন্ত দুই শ পার হয়েছিল।

ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে একমাত্র পজিটিভ দিক হচ্ছে- ‘লিটনের ফর্মে ফেরা’! এক প্রান্তে যখন একের পর এক উইকেট পড়ছিল অন্য প্রান্তে লিটন ব্যাট চালাচ্ছিলেন দুর্বার গতিতে। তার ৬৬ বলে ৭৬ রানের ইনিংসটি ছিল দারুণ। তবে টপঅর্ডারের এভাবে ভেঙে পড়া নিয়ে বিরক্ত ক্যাপ্টেন! কোচ চন্ডিকা হাতুরাসিংহেও এমন হ-য-ব-র-ল ব্যাটিং নিয়ে উদ্বিগ্ন! টাইগার কোচ বলেন, ‘উদ্বিগ্ন হওয়ার মতোই বিষয়। আমাদের দলে সাতজন ব্যাটসম্যান, চেয়েছিলাম টপঅর্ডার হাত খুলে খেলবে। পাওয়ার প্লেতে ৩-৪ উইকেট হারিয়ে ফেললে তো আপনি বেশি ম্যাচ জিততে পারবেন না।’

তবে এমন হারের পরও আশার কথা শুনিয়েছেন সাকিব। টাইগার ক্যাপ্টেন বলেছেন, ‘আমরা পরের ম্যাচেই শক্তিশালী হয়ে ফিরব।’

ধর্মশালায় ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ম্যাচটি সাকিবদের জন্য ছিল ‘মনস্তাত্বিক’ ধকলের। বিশ্ব চ্যাম্পিয়নের বিরুদ্ধে খেলা মানেই যেন বাড়তি চাপ। তবে ধর্মশালার ধকল শেষে এখন টাইগারদের মিশন চেন্নাই। যদিও সেখানে বাংলাদেশের সামনে আরেক চ্যালেঞ্জিং প্রতিপক্ষ- বিশ্বকাপের শেষ দুই আসরের ফাইনালিস্ট নিউজিল্যান্ড। তবে ব্ল্যাক ক্যাপসদের একাধিকবার হোয়াইটওয়াশ করার অভিজ্ঞতা আছে টাইগারদের। চেন্নাই মাঠে নামার আগে সেই সুখস্মৃতি এখন সাকিবদের অনুপ্রেরণা!

সর্বশেষ খবর