শনিবার, ১৪ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা

জুটির অভাবে বড় স্কোর হলো না টাইগারদের

জুটির অভাবে বড় স্কোর হলো না টাইগারদের

টিভি স্পেশালিস্ট হিসেবে বিশ্বকাপ কাভার করতে এসেছেন মোহাম্মদ আশরাফুল। ধর্মশালায় খুব কাছে থেকে দেখেছেন বাংলাদেশের দুটি ম্যাচ। চেন্নাইয়ের চিদাম্বরম স্টেডিয়ামের মিডিয়া বক্সে বসে সাবেক অধিনায়ক মনোযোগ-সহকারে একসময়কার সতীর্থদের ব্যাটিং দেখছিলেন। ইনিংস শেষে চুলচেরা বিশ্লেষণ করে আফসোস করেছেন, সাকিব, মুশফিক, লিটন, তানজিদ, মেহেদী মিরাজ, তৌহিদদের উইকেট বিলিয়ে দেওয়া দেখে। অথচ চিদাম্বরমের উইকেটকে তার মনে হয়েছে ব্যাটিং সহায়ক। একটু বুঝে-শুনে ব্যাটিং করলে, অথবা এক-দুটি বড় জুটি কিংবা দু-তিনজন বড় স্কোর করলে তিন শতধিক রান খুব কঠিন কিছু ছিল না। অথচ ব্যাটাররা দায়িত্ব নিতে ব্যর্থ হয়েছেন। এ ব্যর্থতার জন্য ব্যাটিং অর্ডারে বারবার পরিবর্তনও প্রভাব ফেলেছে ম্যাচগুলোয়। আফগানিস্তান, ইংল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ড- তিন ম্যাচেই পরিবর্তিত ব্যাটিং অর্ডার ব্যাট করেছে। আফগানিস্তান ম্যাচে মেহেদী হাসান মিরাজ ওয়ানডাউনে, ইংল্যান্ড ম্যাচে পাঁচ নম্বরে এবং গতকাল ফের ওয়ানডাউনে ব্যাট করেন। নাজমুল হোসেন শান্ত ব্যাট করেন প্রথম ম্যাচে ৪ নম্বরে, বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের বিরুদ্ধে ওয়ানডাউনে এবং গতকাল পুনরায় ওয়ানডাউনে ব্যাটিং করেন। বিশ্বকাপের মতো বড় আসরের প্রতি ম্যাচেই ব্যাটিং অর্ডারের পরিবর্তনের যৌক্তিকতা নিয়ে টাইগার সহঅধিনায়ক নাজমুল শান্ত বলেন, ‘দলের ব্যাটিং অর্ডার নির্ধারণ করেন অধিনায়ক ও কোচ।’ তিন ম্যাচে এক জয়, দুই হার। সেমিফাইনাল ফিকে হয়ে যাচ্ছে কি না? নাজমুল বলেন, ‘একটি জয় পাল্টে দেবে সবকিছু।’ বাংলাদেশের পরের ম্যাচ ১৯ অক্টোবর, পুনেতে ভারতের বিরুদ্ধে।

বারবার ব্যাটিং অর্ডার পরিবর্তনের ফলে দলের পারফরম্যান্সে প্রভাব ফেলে কি না? এ নিয়ে ক্রিকেটারদের কোনো কমপ্লেইন নেই বলেন টাইগার সহঅধিনায়ক, ‘ব্যাটিং অর্ডার নিয়ে আমাদের ক্রিকেটারদের কোনো কমপ্লেইন নেই। অবশ্য টিম মিটিংয়ে আমাদের সবার সঙ্গে ব্যাটিং অর্ডার নিয়ে আলোচনা করা হয়।’ টেকনিক্যালি কথা বলে নাজমুল শান্ত বিষয়টি এড়িয়ে যেতে চেষ্টা করেন। নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ব্যাটিং অর্ডার পরিবর্তনের ম্যাচে ৫০ ওভারে ৯ উইকেটে ২৪৫ রানের বেশি স্কোর করতে পারেনি বাংলাদেশ। ব্যাটারদের দায়িত্বহীন ব্যাটিংয়ের মাঝে উজ্জ্বল ছিলেন তিন সিনিয়র মুশফিক, মাহমুদুল্লাহ ও সাকিব। ছন্দে থাকা মুশফিক ইংল্যান্ড ম্যাচে ৫১ রানের পর গতকাল খেলেন ৬৬ রানের ইনিংস। দারুণ আশা জাগিয়েও সাকিব ৪০ রানের বেশি করতে পারেননি। অবশ্য মাসলে টান পড়েছিল টাইগার অধিনায়কের। ম্যাচ শেষে স্ক্যান করতে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। ৩৮ বছর বয়সী মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ খেলেছেন দায়িত্বশীল ইনিংস। ৮ নম্বর পজিশনে ব্যাট করে ৪৯ বলে ৪১ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে জবাবটা ভালোভাবেই দিয়েছেন টিম ম্যানেজমেন্টকে।

ম্যাচের আগের দিন টাইগার সহঅধিনায়ক নাজমুল শান্ত বিশেষভাবে অনুরোধ করেছিলেন, ওপেনিং জুটি নিয়ে যেন আর কোনো আলোচনা না হয়। বিনীত অনুরোধের কারণও ছিল। আগের ১২ ওয়ানডেতে টিম ম্যানেজমেন্ট ৬টি জুটি খেলিয়েছেন ওপেনিংয়ে। গতকাল ছিল ১৩ নম্বর ম্যাচ। মাত্র দুটি ম্যাচে পঞ্চাশোর্ধ্ব রানের জুটি গড়েছেন ওপেনাররা। বাকিগুলো ছিল আসা-যাওয়ার ব্যস্ততা। টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে ম্যাচের প্রথম বলেই ফ্লিক খেলেন লিটন। ট্রেন্ট বুল্টের বলটি ডিপ ফাইন লেগে সহজে তালুবন্দি করেন ম্যাট হেনরি। দলের স্কোর তখন শূন্য। ইংল্যান্ড ম্যাচে ৭৬ রান করা লিটনের স্কোরও শূন্য। আরেক ওপেনার তানজিদ চারটি চোখ ধাঁধানো বাউন্ডারি মারেন। কিন্তু আশা জাগিয়েও ১৬ রানের বেশি করতে পারেননি। ১৭ বলের ইনিংসটি শেষ হয় ফার্গুসনকে শর্ট স্কয়ারলেগে ডেভন কনওয়েকে ক্যাচ দিয়ে। বিশ্বকাপে তানজিদের রান ১৬, ১ ও ৫। মেহেদী মিরাজের ব্যাটিং অর্ডার যেন মিউজিক্যাল চেয়ার, নির্দিষ্ট কোনো পজিশন নেই। দলের প্রয়োজনে ব্যাটিং করেন। গতকাল ওয়ানডাউনে ৪৬ বলে ৩০ রানের ইনিংসটিকে আত্মাহুতি বলা যেতে পারে। ফার্গুসনকে অহেতুক পুল খেলে ক্যাচ দেন তিনি। নাজমুল শান্তকে নিজের ওভারের প্রথম বলেই সাজঘরে ফেরান গ্লেন ফিলিপস।

৫৬ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে যখন দল বিপর্যয়ে, তখন জুটি বাঁধেন সাকিব ও মুশফিক। দুজনে বিপর্যয় সামলে ১৭.৪ ওভারে ৯৬ রান যোগ করেন। সাকিবের ৪০ রানের ইনিংস শেষ হয় ৫১ বলে ৩ চার ও ২ ছক্কায়। দলীয় ১৫২ রানে অধিনায়ক সাজঘরে ফিরলে মুশফিক জুটি বাঁধেন তরুণ তৌহিদ হৃদয়ের সঙ্গে। কিন্তু বেশি দূর এগোয়নি জুটি। মুশফিক ৬৬ রানের ইনিংসটি খেলেন ৭৫ বলে ৬ চার ২ ছক্কায়।

সর্বশেষ খবর