শনিবার, ১৪ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা

আতঙ্কের প্রথম চার উইকেট!

মেজবাহ্-উল-হক

আতঙ্কের প্রথম চার উইকেট!

যে কোনো দলের ব্যাটিং লাইনআপের মেরুদণ্ড হচ্ছে টপঅর্ডার। কিন্তু বিশ্বকাপ শুরুর আগেই আতঙ্কের একটা রিপোর্ট বাংলাদেশ জেনেছিল- টপঅর্ডারের ব্যাটিং পারফরম্যান্সের দিক দিয়ে চলতি আসরে অংশ নেওয়া ১০ দেশের মধ্যে লাল-সবুজরা নবম!

অর্থাৎ কেবলমাত্র নেদারল্যান্ডসের টপঅর্ডারের চেয়ে বাংলাদেশের টপঅর্ডার ভালো। ২০২২ সাল থেকে বিশ্বকাপের আগে পর্যন্ত ১৩২ ম্যাচে বাংলাদেশ দলের ১ থেকে ৪ নম্বর ব্যাটসম্যানের গড় মাত্র ৩২.০৪। আর স্ট্রাইক রেটও স্বস্তিদায়ক নয়। মাত্র ৮১.২২।

সব শেষ ১০ ম্যাচে টপঅর্ডারের অবস্থা তো আরও ভয়াবহ। আট ম্যাচেই দলীয় ১০ রানের আগে চার উইকেট হারিয়েছেন সাকিবরা। আর যে দুই ম্যাচে চার উইকেট হারানোর আগেই বাংলাদেশের দলীয় ১০০ রান পার করেছিল সে দুটি ইনিংসই আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে। একটি এশিয়া কাপে, আরেকটি বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে। আর এ দুই ম্যাচেই বাংলাদেশ জয় পেয়েছে।

বাকি যে আট ম্যাচে বাংলাদেশ দলীয় সেঞ্চুরি হওয়ার আগেই চার উইকেট হারিয়েছে তার মধ্যে সাতটিতেই হেরেছে। কেবলমাত্র এশিয়া কাপে ভারতের বিরুদ্ধে শেষ ম্যাচে ৫৯ রানের চার উইকেট হারানোর পরও লোয়ারঅর্ডারের ক্যারিশমেটিক ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশ শেষ পর্যন্ত ৮ উইকেট হারিয়ে ২৬৫ রান করেছিল। তারপর বোলারদের দাপটে ম্যাচটি জিতে যায় বাংলাদেশ।

ব্যাটিং অর্ডারে দ্রুত প্রথম চার উইকেট পতন যেন রীতিমতো আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভারতের রান বন্যার উইকেটেও এ রোগ থেকে মুক্তি পাচ্ছে না বাংলাদেশ। যেখানে অন্য দলগুলোর প্রথম চার ব্যাটসম্যানই ম্যাচ শেষ করে দিচ্ছে, সেখানে দ্রুত উইকেট হারিয়ে ধুঁকছে টাইগাররা। টপঅর্ডারের ব্যর্থতার কারণে বাংলাদেশের স্কোর কম হচ্ছে, এ জন্যই বারবার হার দেখতে হচ্ছে সমর্থকদের।

ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে আগের ম্যাচে বাংলাদেশ প্রথম চার উইকেট হারায় মাত্র ৪৯ রানে, আর গতকাল নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে আসে মাত্র ৫৬ রান। টপঅর্ডাররাই নিজেদের উইকেট বিলিয়ে দিয়ে ম্যাচকে যেন প্রতিপক্ষকে উপহার দিচ্ছে। প্রতি ম্যাচেই যে লোয়ারঅর্ডার ভালো করবে তা আশা করা যায়! বাংলাদেশ ব্যাটিং করে বোলাররা লড়াই করার পুঁজিই পাচ্ছেন না।

আগের ম্যাচে ৬৬ বলে ৭৬ রান করা লিটন দাস কিউইদের বিরুদ্ধে গতকাল চেন্নাইয়ে প্রথম বলেই আউট হয়ে যান। আগের ওপেনার তানজিদ হাসান তামিমও নিজেকে মেলে ধরতে ব্যর্থ হন। ১৬ রানেই তিনিও ড্রেসিংরুমে ফিরে যান। তবে দলীয় খাতায় রান যোগ হওয়ার আগেই উইকেট পড়লেও দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে তামিম-মিরাজ মিলে ভালোই ব্যাট করছিলেন। কিন্তু হঠাৎই ছন্দপতন হয়ে যায়। ৪০-৫৬ রানের মধ্যে তিন উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়ে যায় লাল-সবুজরা।

এশিয়া কাপ থেকে বিশ্বকাপ পর্যন্ত ১০ ম্যাচে বারবার টপঅর্ডারে পরিবর্তন এনেও কোনো সুফল পাচ্ছে না টিম ম্যানেজমেন্ট। ঘুরেফিরে সেই একই চিত্র। প্রথম চার ব্যাটসম্যানের ব্যর্থতার জন্যই স্বপ্নের বিশ্বকাপে দলীয় সংগ্রহটা বড় হচ্ছে না। আর ভারতের মাটিতে ৩০০ প্লাস রান করতে না পারলে জয়ের চিন্তা করাও কঠিন।

টপঅর্ডারের পতন থামানোর জন্য কোচ চন্ডিকা হাতুরাসিংহে অনেক চেষ্টা করেছেন। কিন্তু কোনো লাভ হচ্ছে না। হাতুরাসিংহের ভান্ডারে যেন আর কোনো দাওয়াই অবশিষ্ট নেই। হাইপাওয়ার অ্যান্টিবায়োটিকেও এ অসুখ সারছে না।

টেস্ট ক্রিকেটে মূল ব্যাটসম্যানদের রক্ষা করলে শেষ বিকালে বাইশগজে ‘নাইটওয়াচম্যান’ হিসেবে বোলারদের পাঠানো হয়! যাতে উইকেট পড়ে গেলেও দলে কোনো সমস্যা না হয়। এখন বিশ্বকাপে কি তবে মূল ব্যাটসম্যানদের রক্ষা করতে শুরুতে বোলারদের নামিয়ে দিতে হবে!

বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের টপঅর্ডার নিয়ে স্যোশাল মিডিয়ায় এমন কৌতুকই করছেন ভক্তরা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর