শিরোনাম
রবিবার, ১৫ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা

বারবার ব্যাটিং অর্ডার পরিবর্তনের দায় কার?

বারবার ব্যাটিং অর্ডার পরিবর্তনের দায় কার?

২০১১ সালের বিশ্বকাপে সতীর্থদের ওপর কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করেছিলেন ভারতের অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনি। সতীর্থদের বাবার মতো আগলে রাখতেই ভারতীয় অধিনায়ক কাউকে মিডিয়ার মুখোমুখি হতে দেননি। সব ম্যাচের প্রি ও পোস্ট ম্যাচে উপস্থিত থেকে মিডিয়ার প্রশ্নের উত্তর দিতেন। সাহসিকতার সঙ্গে সামলে সতীর্থদের চাঙা রাখতেন। ফলও পেয়েছিলেন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়ে। ২০২৩ সালে ভারতে চলছে বিশ্বকাপের ১৩তম আসর। বাংলাদেশ খেলছে সেমিফাইনালের স্বপ্ন নিয়ে। এর মধ্যে ৩টি ম্যাচ খেলে একটিতে জিতেছে। টানা দুটি হেরেছে। অথচ টাইগার অধিনায়ক সাকিব আল হাসান মিডিয়ার মুখোমুখি হননি। বারবার ব্যাটিং অর্ডার পরিবর্তনে দলের জয়ের উচ্ছ্বাস কিংবা হারের বেদনার উত্তরগুলো কে দেবেন? কখনো কোচ হাতুরাসিংহে, কখনো সহঅধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত, কখনো আবার মেহেদী হাসান মিরাজ উত্তর দিয়েছেন।

নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ৮ উইকেটের পাহাড়সম ব্যবধানে হারের পর মিডিয়ার মুখোমুখিতে ঘাম ছুটে গেছে নাজমুল শান্তের। বিশ্বকাপের মতো বড় আসরে টানা তিন ম্যাচে তিন রকম ব্যাটিং অর্ডার নিয়ে খেলেছে টাইগাররা। এতে দলের আত্মবিশ্বাসে চিড় ধরেছে। পারফরম্যান্সের গ্রাফ তলানিতে এসে ঠেকেছে। আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে স্মরণীয় জয়ের পর ২০১৯ সালের দুই ফাইনালিস্ট ইংল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে টানা হারের ব্যর্থতার দায়ভার কে নেবেন? ব্যাটিং অর্ডার পরিবর্তনের ব্যাখ্যায় টাইগার সহঅধিনায়ক বলেছেন, ‘ব্যাটিং অর্ডার নির্ধারণ করেন কোচ এবং অধিনায়ক। প্রতি ম্যাচের আগে টিম মিটিংয়ে সবাইকে জানিয়ে দেওয়া হয়, কে কোন অর্ডারে কেন ব্যাট করবেন।’ সহঅধিনায়কের এমন মন্তব্যের সরাসরি দ্বিমত পোষণ করেননি ব্যাটিং কোচ নিক পোথাস। তবে দলের ব্যর্থতার কারণ খুঁজে বেড়ানোর কথা বলেছেন, ‘সাদা-কালোর মতো পরিষ্কার, আমরা পারছি না। কেন পারছি না, এর কারণ আমরা খুঁজে বেড়াচ্ছি।’

বিশ্বকাপের মতো বড় আসরে টানা তিন ম্যাচে তিন রকম ব্যাটিং অর্ডার নিয়ে খেলেছে টাইগাররা। এতে দলের আত্মবিশ্বাসে চিড় ধরেছে। পারফরম্যান্সের গ্রাফ তলানিতে এসে ঠেকেছে।
বিশ্বকাপকে টার্গেট করে নাজমুল শান্তকে ওয়ান ডাউনে খেলাচ্ছিল টিম ম্যানেজমেন্ট। বাঁ হাতি ব্যাটার নাজমুল সাফল্যও পাচ্ছিলেন। সেঞ্চুরি করেছেন। হাফসেঞ্চুরি করেছেন। অথচ বিশ্বকাপের তিন ম্যাচের দুটিতে ব্যাট করেছেন ‘টু ডাউন’ বা ৪ নম্বরে। বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ব্যাটিং করেছেন আবার প্রিয় জায়গা ওয়ান ডাউনে। এই পরিবর্তনে পারফরম্যান্সের ওপর প্রভাব ফেলেছে।

মেহেদী হাসান মিরাজ মেকশিফট ওপেনার হিসেবে খেলেছেন এশিয়া কাপে। সেঞ্চুরি করেছেন স্পিন এ অলরাউন্ডার। বিশ্বকাপে আফগানিস্তান ম্যাচে ওয়ান ডাউনে খেলেন। ৫৬ রানের ইনিংস খেলে ম্যাচ সেরাও হন। দ্বিতীয় ম্যাচে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ব্যাটিং অর্ডার নিচে নামিয়ে তাকে ৫ নম্বরে খেলায় টিম ম্যানেজমেন্ট। নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে পুনরায় ওয়ান ডাউনে ব্যাটিং করে রান করেন ৩০। ছন্দে থাকা তরুণ তৌহিদ হৃদয়কে বিশ্বকাপের তিন ম্যাচেই খেলানো হয়েছে ৭ নম্বর পজিশনে। কিন্তু ক্যারিয়ারের শুরু থেকে তিনি খেলেছেন ‘থ্রি ডাউন’ বা ৫ নম্বর পজিশনে। একাদশের ক্রিকেটাররা নিজ নিজ পছন্দের পজিশনে খেলতে পারছেন না। এতে আনন্দচিত্তে ব্যাটিংয়ের ধারাবাহিকতাও খুঁজে পাচ্ছেন না। এমনটা হচ্ছে কেন? পাড়ামহল্লার ক্রিকেটের মতো এত ঘন ঘন পরিবর্তনই বা কেন? টাইগার সহঅধিনায়ক বলেন, ‘সত্যি বলতে, সবার সব পজিশনে ব্যাট করার মানসিকতা থাকতে হবে। আমার মনে হয় স্কোয়াডের সবাই যে কোনো পজিশনে ব্যাট করার জন্য প্রস্তুত। আসলে ব্যাটিং অর্ডার পজিশন নিয়ে আমাদের কোনো অভিযোগ নেই।’

এখনো ৬ ম্যাচ বাকি সাকিব বাহিনীর। ১৯ অক্টোবর পুনেতে বিশ্বকাপে নিজেদের চার নম্বর ম্যাচ খেলবে ভারতের বিরুদ্ধে। এরপর দক্ষিণ আফ্রিকা, নেদারল্যান্ডস, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে। সেমিফাইনালে খেলতে আরও চারটি ম্যাচ জিততে হবে টাইগারদের। বাঁ হাতি ‘কাটার মাস্টার’ মুস্তাফিজুর রহমান অবশ্য টানা ৬টি ম্যাচে জয়ের সম্ভাবনা রয়েছে বলেন, ‘আমরা ৬টি ম্যাচও জিততে পারি। সেমিফাইনাল খেলার স্বপ্ন এখনো টিকে আছে।’ এমন ব্যর্থতা থেকে বেরুনোর তরিকাও অবশ্য জানিয়েছেন টাইগার সহঅধিনায়ক, ‘একটি জয় সবকিছু বদলে দেবে। একটি জয় পেলেই সব ঠিক হয়ে যাবে।’ কবে আসবে সেই জয়। কবে বন্ধ হবে প্রতি ম্যাচে ব্যাটিং অর্ডারের পরিবর্তন।

সর্বশেষ খবর