রবিবার, ২৯ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা

‘বাংলাদেশের এটাই সবচেয়ে বাজে বিশ্বকাপ’

‘বাংলাদেশের এটাই সবচেয়ে বাজে বিশ্বকাপ’

মাঠের পারফরম্যান্স যেমন তেমন। কিন্তু মাঠের বাইরের পারফরম্যান্সে অতুলনীয় সাকিব আল হাসান। মিডিয়ার মুখোমুখিতে প্রশ্নগুলোর দুর্দান্ত উত্তর দিয়ে চমকে দিয়েছেন টাইগার অধিনায়ক। এর আগে সাকিবকে এতটা খোলামেলা উত্তর দিতে দেখা যায়নি। গতকাল নেদারল্যান্ডসের কাছে ৮৭ রানের হারের পর নিজেই পোস্ট ম্যাচে আসেন। এসেই বোমা ফাটানোর মতো উত্তর দেন। টাইগার অধিনায়ক স্পষ্ট করে বলেন, ‘দলের অনেক ক্রিকেটার হয়তো তাদের শতভাগ উজার করে খেলেননি।’ টাইগার অধিনায়কের এ কথাতেই স্পষ্ট, দলে কোন্দল রয়েছে। কেন তিনি এই ধারণা করলেন? দলে শুধু কোন্দলের কথা অস্বীকার করেননি সাকিব। স্বীকার করেছেন, বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে এটাই সবচেয়ে বাজে বিশ্বকাপ, ‘অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই, এটাই বাংলাদেশের সবচেয়ে বাজে বিশ্বকাপ।’ এতদিন ধরা হতো ২০০৩ সালের দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপ সবচেয়ে বাজে বিশ্বকাপ। ২০ বছর আগের বিশ্বকাপে বাংলাদেশ একটি ম্যাচও জেতেনি। শুধু তাই নয়, সেবার ডারবানের কিংসমিডে হেরেছিল আইসিসি সহযোগী দেশ কানাডার কাছে।    

সাকিবের নেতৃত্বে বাংলাদেশ এবার বিশ্বকাপ খেলতে আসে তামিম ইকবাল বিতর্ককে সঙ্গী করে। ফিটনেসের অজুহাতে তামিমকে বাদ দিয়ে খেলতে আসে বাংলাদেশ। নানামুখী চাপে দলের নেতৃত্ব ছেড়ে দেন তামিম। নেতৃত্ব ছাড়ার পর দল থেকে বাদ পড়েন। বিস্মিত দেশসেরা ওপেনার ফেসবুকের অফিশিয়াল পেজে বাদ পড়ার কারণগুলো জানালে রোষানলে পড়ে টিম ম্যানেজমেন্ট। এরপর সাকিবও প্রতিত্তোর দেন। দুই সিনিয়র ক্রিকেটারের মুখোমুখি অবস্থানে বাংলাদেশের ক্রিকেটের অবস্থা টালমাটাল হয়ে পড়ে। যার প্রভাব পড়েছে এবারের বিশ্বকাপে। যদিও আফগানিস্তানকে হারিয়ে বিশ্বকাপে দারুণ সূচনা করে টাইগাররা। কিন্তু পরের ৫ ম্যাচে শুধু হারেনি, বিধ্বস্ত হয়েছে প্রতিটি ম্যাচে। বিশ্বকাপের আগে তামিম বিতর্ক কি দলের ওপর প্রভাব ফেলেছে, কিংবা দলে তামিমের অনুসারীরা ইচ্ছাকৃতভাবে শতভাগ উজার করে দেননি, এমন প্রশ্নের উত্তরে টাইগার অধিনায়ক বলেন, ‘হতে পারে। থাকতে পারে অনুসারী। হতে পারে তারা শতভাগ উজার করে দেয়নি। বিষয়টি আমি অস্বীকার করছি না।’

আফগান ম্যাচের যে ছন্দে খেলেছিলেন সাকিবরা। গতকাল ‘নন্দনকানন’ ইডেনে নেদারল্যান্ডসের কাছে অসহায় আত্মসমর্পণ করেছেন টাইগার ব্যাটাররা। কমলা বাহিনীর বিরুদ্ধে হারটিকে হতাশাজনক বলেছেন টাইগার অধিনায়ক, ‘অবশ্যই আমরা বাজে খেলেছি। এটা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। আমরা বাজে ফিল্ডিং করেছি। তবে দুর্দান্ত বোলিং করেছি। আমরা যেভাবে ব্যাটিং করতে পারি, সেভাবে পুরো টুর্নামেন্টে ব্যাটিং করতে পারিনি। আমরা নিজেরাই নেদারল্যান্ডকে ২ পয়েন্ট দিয়েছি।’ ডাচ বাহিনীকে ২২৯ রানে অলআউট করে টাইগাররা। ফিল্ডিংয়ে তিনটি সহজ ক্যাচ মিস করে ফিল্ডাররা। ২৩০ রানের টার্গেটে খেলতে নেমে ১৪২ রানে গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ।

ডাচ বাহিনীর বিরুদ্ধে খেলা দেখতে বাংলাদেশ থেকে প্রায় ২০ হাজার ক্রিকেটপ্রেমী আসেন। যে উৎসাহ, উদ্দীপনা ও উচ্ছ্বাস নিয়ে কলকাতায় এসেছিলেন সমর্থকরা, ম্যাচ শেষে হতাশ হয়ে ফিরে গেছেন তারা। যাওয়ার আগে ক্রিকেটারদের কটূক্তি করেছেন বাজে ভাষায়। দর্শকদের এমন আচরণে হতাশ হননি টাইগার অধিনায়ক, ‘দর্শকদের সমালোচনা-দুয়োধ্বনি হতাশাজনক। তারা আসলে প্রত্যাশাও করে ভালো কিছু। স্বাভাবিকভাবে সেটা না হলে তাদেরও অধিকার আছে তাদের মতো করে বলার। তাদের ক্ষেত্রে আমার কোনো অভিযোগ নেই। আমি মনে করি যেভাবে আমরা খেলেছি এটা আমরা ডিজার্ভ করি।’ দর্শকরা হতাশ। অধিনায়ক হিসেবে দলের পারফরম্যান্সে নিজেও হতাশ। বেশি করে হতাশ হয়েছেন দলের ব্যাটিং নিয়ে, ‘আপনি যদি ছয় ম্যাচের ব্যাটিং পারফরম্যান্সের সারমর্ম টানতে বলেন, বলব মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ও মুশফিকুর রহিম বাদে প্রত্যেকে বাজে পারফর্ম করেছে। বাকিরা কেউ আপ টু মার্ক ছিল না। আমরা যা জানি, সেটা খেলতে পারিনি। আমরা আমাদের সামর্থ্যরে চেয়ে অনেক পিছিয়ে আছি। সত্যি বলতে, এ অবস্থা থেকে ঘুরে দাঁড়ানো খুব কঠিন। এখনো যেহেতু তিন ম্যাচ আছে। সুযোগ এখনো আছে আমাদের কাছে। তবে খুবই কঠিন। কিন্তু চেষ্টা করতে হবে। চেষ্টা ছাড়া আমাদের এখন কিছু করার নেই। যদি আজকের দিনটা ভুলে যেতে পারি এবং সামনের ম্যাচগুলোতে মনোযোগ দিতে পারি। তবে কাজটি ভীষণ কঠিন।’

বিশ্বকাপে বাংলাদেশের এখনো তিন ম্যাচ বাকি। ৩১ অক্টোবর ইডেনে সাবেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন পাকিস্তান, ৬ নভেম্বর দিল্লিতে শ্রীলঙ্কা ও ১১ নভেম্বর পুণেতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচ।

সর্বশেষ খবর