শনিবার, ৪ নভেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা
৭ ম্যাচে ৪ জয়

এক ফাইটার জাতির ক্রিকেট রূপকথা

♦ নেদারল্যান্ডস ১৭৯, আফগানিস্তান ১৮১/৩ ♦ আফগানরা ৭ উইকেটে জয়ী

মেজবাহ্-উল-হক

এক ফাইটার জাতির ক্রিকেট রূপকথা

ক্রিকেটে বহুলপ্রচলিত একটা শব্দ আছে, মোমেন্টাম! কোনো টুর্নামেন্ট জয় দিয়ে শুরু করতে পারলে পুরো আসরের জন্য যেন চাঙা হয়ে যান ক্রিকেটাররা। আত্মবিশ্বাসে বলীয়ান হয়ে পুরো টুর্নামেন্টেই দুর্দান্ত দাপট দেখানোর নজির আছে।

কিন্তু এবার ভারতের মাটিতে এ ‘মোমেন্টাম’ শব্দটাকে যেন রীতিমতো ‘মিথ’-এ পরিণত করে দিল আফগানরা। অথচ প্রথম ম্যাচেই তারা বাংলাদেশের কাছে রীতিমতো বিধ্বস্ত হয়ে হেরে যায়। এরপর ভারতের বিরুদ্ধেও তারা হেরে যায় ৮ উইকেটের বিশাল ব্যবধানে। আর প্রথম দুই ম্যাচে বিধ্বস্ত হওয়ার পরই যেন আফগানরা রূপকথার গল্প লেখা শুরু করে দিল।

একে একে তিন বিশ্ব চ্যাম্পিয়নকে যেভাবে তারা বোকা বানিয়েছে, তা ক্রিকেটের ইতিহাসে সত্যিই বিস্ময়কর! সবশেষ গতকাল নেদারল্যান্ডসকে উড়িয়ে দিয়ে তারা সেমিফাইনালে খেলার দাবি জানিয়ে রাখল।

এদিকে আফগানদের বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচে জয় পাওয়া বাংলাদেশও যেন পরের ছয় ম্যাচে টানা হেরে গিয়ে ‘মোমেন্টাম’ শব্দটিকে রীতিমতো কবর দিয়ে ফেলেছে। পরিস্থিতি এমন অবস্থায় পৌঁছে গেছে যে, সমর্থকরা এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় লেখালেখি শুরু করে দিয়েছেন- ‘বাংলাদেশের বিরুদ্ধে আফগানদের হারটা কি অঘটন ছিল?’

বর্তমান বিশ্ব চ্যাম্পিয়নকে এবারও চ্যাম্পিয়নের অন্যতম দাবিদার ভাবা হচ্ছিল! ‘সুপারম্যান’ বেন স্টোকসকে ফেরানো হয়েছিল শিরোপা ধরে রাখার চিন্তা করেই। ইংলিশরা প্রথম ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে হারলেও দ্বিতীয় ম্যাচে ১৩৭ রানের ব্যবধানে বাংলাদেশকে হারিয়ে ছন্দে ফিরেছিল। সেই ইংল্যান্ডকে পরের ম্যাচেই আফগানরা এক ধাক্কায় যেন লাইনচ্যুত করে দিল।

এরপর ১৯৯২-এর চ্যাম্পিয়ন পাকিস্তান এবং ১৯৯৬-এর চ্যাম্পিয়ন শ্রীলঙ্কাকে যেভাবে ঠান্ডা মাথায় উড়িয়ে দেয়, তা সত্যিই আফগান ক্রিকেট ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ দুটি অধ্যায় হয়ে থাকবে। বেঙ্গালুরুর চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে তারা পাকিস্তানের দেওয়া ২৮৩ রানের টার্গেটে পৌঁছে যায় ৮ উইকেট হাতে রেখে। ম্যাচে মুহূর্তের জন্যও মনে হয়নি পাকিস্তান জিততে পারে!

পরের ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধেও ৭ উইকেটে জয়। পুণেতে লঙ্কানদের রীতিমতো ‘আউটপ্লেড’ করে দেয়। শ্রীলঙ্কাকে মাত্র ২৪১ রানে অলআউট করে দেওয়ার পর ব্যাট করতে নেমে আফগানরা ২৮ বল বাকি থাকলেই খেলা শেষ করে দেয়। কী দারুণ আগ্রাসি জয়!

আফগানরা এতটাই চমৎকারভাবে মাঠে তাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেছে যে, খেলা দেখে মনে হয়েছে টুর্নামেন্টে তারা চ্যাম্পিয়ন হওয়ার টার্গেটে ভারতে খেলতে নেমেছে। রশিদ খান, মুজিব উর রহমান ও মোহাম্মদ নবীর মতো বিশ্বমানের তারকা স্পিনার থাকলেও দল হিসেবে আফগানিস্তান ততটা আলোচনায় ছিল না বিশ্বকাপের আগেও। কিন্তু ইংলিশ কোচ জোনাথন ট্রট তার ক্যারিশমাটিক কৌশলে সবকিছু বদলে দিয়েছেন।

প্রথম দুই ম্যাচের পর আফগানরা যেন রাতারাতি বদলে যায়। প্রতিটি ম্যাচেই তাদের উন্নতির ছাপ ছিল চোখে পড়ার মতো।

গতকাল লক্ষেèৗতে নেদারল্যান্ডসকে পাত্তাই দেয়নি হাশমতুল্লাহ শহিদির দল। প্রথমে ব্যাট করে ডাচ্দের আটকে দেয় মাত্র ১৭৯ রানে। ১৮০ রানের সহজ টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে ৩১.৩ ওভারে ৭ উইকেটে জিতে পাকিস্তানকে টপকে পয়েন্ট তালিকার ৫-এ উঠে যায় আফগানিস্তান। তবে ৩ ও ৪ নম্বরে থাকা অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের সমান ৮ পয়েন্ট তাদের।

বিশ্বকাপে আফগানদের এমন উত্থান সত্যিই বিস্ময়কর! কেননা এখন পর্যন্ত তারা দেশের মাটিতে কোনো আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার সুযোগ পায়নি। এমনকি আফগানরা বছরের প্রায় পুরো সময় কাটিয়ে দেয় সংযুক্ত আরব আমিরাত কিংবা ভারতে! দেশের বাইরে খেলেই যেন নিজেদের প্রস্তুত করে। বিদেশের মাটিতে সুযোগসুবিধা কতটুকুই বা আর পাওয়া যায়! অথচ সেই দলটাই কি না এবারের বিশ্বকাপে সেমিফাইনালের অন্যতম দাবিদার!

প্রথম দুই ম্যাচে বিধ্বস্ত হওয়ার পরও পারফরম্যান্সের চাকা ৩৬০ ডিগ্রি কোণে ঘুরিয়ে আফগানরা যেন ক্রিকেটেও প্রমাণ করেছে তারা সত্যিই ‘ফাইটার’ এক জাতি।

সর্বশেষ খবর