শনিবার, ৪ নভেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

পেসারদের নখদন্তহীন বোলিং

রাজধানী দিল্লি ভারতের দূষণ নগরীগুলোর অন্যতম। সবার ওপরে উত্তর প্রদেশের ফরিদাবাদ। শহরটির বাতাসে দূষিত কণিকার পরিমাণ ৩২২। দুইয়ে দিল্লি। রাজধানীর বাতাসে সূচকের মাত্রা ৩১৩। দিল্লিতে বিশ্বকাপে নিজেদের অষ্টম ম্যাচ খেলবেন সাকিব আল হাসানরা। ৬ নভেম্বর অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামে টাইগারদের প্রতিপক্ষ ৭ ম্যাচে ২ জয় পাওয়া ‘দ্বীপরাষ্ট্র’ শ্রীলঙ্কা। ‘নন্দনকানন’ ইডেনের পর ভারতের দ্বিতীয় পুরনো স্টেডিয়ামে টেস্ট কিংবা ওয়ানডে খেলেনি বাংলাদেশ। একটি মাত্র টি-২০ ম্যাচ খেলে হারিয়েছে ভারতকে। বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ৪ ম্যাচ খেললেও জয়ের মুখ দেখেনি এখনো। ২০১৯ সালে ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়েছিল। ২০০৩ সালে ১০ উইকেটে, ২০০৭ সালে ১৯৮ রানে এবং ২০১৫ সালে ৯২ রানে হেরেছে টাইগাররা। ২০০৩ সালে প্রথম ওভারে হ্যাটট্রিকসহ ৪ উইকেট নিয়েছিলেন ফাস্ট বোলার চামিন্দা ভাস। চলতি বিশ্বকাপে দুই দলের অবস্থান তলানিতে। দিল্লির রান উৎসবের উইকেটে তাসকিন আহমেদ, শরিফুল ইসলাম, মুস্তাফিজুর রহমান, হাসান মাহমুদদের কঠিন পরীক্ষা নেবেন লঙ্কান ব্যাটাররা। বিশ্বকাপে ছন্দ হারানো পাঁচ টাইগার পেসারের চারজন ৭ ম্যাচে ১৬০.১ ওভার বল করে রান দিয়েছেন ১০১৭। উইকেট নিয়েছেন ১৯টি। ওভারপ্রতি স্ট্রাইক রেট ৬.৩৫ রান। উইকেট শিকারের গড় ৫৩.৫২৬। শরিফুলের উইকেট ৮, তাসকিন ও মুস্তাফিজ ৪টি করে এবং ৩ উইকেট নেন হাসান। ছক্কা খেয়েছেন ২৯টি।

পেসারদের ছন্দহীন বোলিংয়ের কারণ ব্যাখ্যায় বাংলাদেশের অন্যতম সেরা ক্রিকেট বিশেষজ্ঞ নাজমুল আবেদীন ফাহিম বলেছেন, ‘নতুন বলে লাইন লেন্থ বজায় রেখে পেসারদের বল করাটা জরুরি। কিন্তু বাংলাদেশের পেসাররা পারেননি।’

এই পেস ব্যাটারি নিয়ে বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল খেলার স্বপ্ন দেখেছিল টিম ম্যানেজমেন্ট। স্বপ্ন দেখার কারণও ছিল। ২০১৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত গত চার বছরে তাসকিন, মুস্তাফিজরা ২৪৪ উইকেট নিয়েছিলেন। ওভারপ্রতি স্ট্রাইক রেট ছিল ৫.৪৭। অথচ এবারের বিশ্বকাপে ওভারপ্রতি স্ট্রাইক রেট ৬.৩৫। গড় ছিল ২৯.৬৩। এখন পর্যন্ত গড় ৫৩.৫২। টাইগার পেসারদের চেয়ে বেশি উইকেট নিয়েছিলেন ভারতের জশপ্রীত বুমরাহরা, ৩৩৭ উইকেট এবং নিউজিল্যান্ডের ট্রেন্ট বোল্টরা ২৬১ উইকেট। বিশ্বকাপে হঠাৎ ছন্দ হারিয়ে ফেলার অন্যতম কারণ এবাদত হোসেনের অনুপস্থিতি। হাঁটুর আঘাতে বিশ্বকাপে আসেননি এবাদত। তার জায়গায় সুযোগ পান তানজিদ সাকিব। অথচ এখন পর্যন্ত খেলতে পারেননি। কাঁধের ইনজুরিতে দুই ম্যাচ খেলেননি তাসকিন। ৫ ম্যাচে ৩৫ ওভার বোলিং করে ২০৫ রানের খরচে উইকেট নিয়েছেন ৪টি। ওভারপ্রতি রান দিয়েছেন ৫.৮৫। গড় ৫১.২৫। দলের সবচেয়ে অভিজ্ঞ পেসার মুস্তাফিজুর রহমান ৭ ম্যাচে ৫৬ ওভার বল করে ৩২২ রান দিয়ে উইকেট নিয়েছেন ৪টি। গড় ৮০.৫০ এবং ওভারপ্রতি রান দিয়েছেন ৫.৭৫। দুই অভিজ্ঞ পেসারের তুলনায় আক্রমণাত্মক মেজাজে বোলিং করেছেন বাঁ হাতি দীর্ঘকায় পেসার শরিফুল। বাঁ হাতি পেসার ৫৫.১ ওভারে রান দিয়েছেন ওভারপ্রতি ৬.৪৮ স্ট্রাইকে ৩৫৮। উইকেট নিয়েছেন ৪৪.৭৫ গড়ে ৮টি। আরেক পেসার হাসান মাহমুদকে মনে হয়েছে পাড়া-মহল্লার বোলার। ২ ম্যাচে বোলিং করেছেন ১৪ ওভার। ওভারপ্রতি ৯.৪২ স্ট্রাইক রেটে ১৩২ রান দিয়ে উইকেট পেয়েছেন ৪টি।

বিশ্বকাপে পেসারদের এমন ছন্দহীন বোলিংয়ের কারণ খুঁজে কি পেয়েছেন পেস বোলিং কোচ অ্যালান ডোনাল্ড? পুরো টুর্নামেন্টেই তাকে ভ্রু কুঞ্চিত করে থাকতে দেখা গেছে। পেসারদের ছন্দহীন বোলিংয়ের কারণ ব্যাখ্যায় বাংলাদেশের অন্যতম সেরা ক্রিকেট বিশেষজ্ঞ নাজমুল আবেদীন ফাহিম বলেছেন, ‘নতুন বলে লাইন লেন্থ বজায় রেখে পেসারদের বল করাটা জরুরি। কিন্তু বাংলাদেশের পেসাররা পারেননি।’ কেন পারেননি? ফাহিম বলেন, সাফল্য পেতে পেসারদের একটি নির্দিষ্ট চ্যানেলে বোলিং করতে হয়। কিন্তু আমাদের বোলাররা প্রতি ওভারেই ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় বল করেছেন। ফলে প্রতিপক্ষের ব্যাটাররা চাপমুক্ত ব্যাটিং করেছেন। এর কারণ হতে পারে, বাংলাদেশের পেসাররা এমন স্পোর্টিং উইকেটে খেলেনি।

বাংলাদেশের বোলাররা প্রতিপক্ষের ওপর কোনো রকম প্রভাব ফেলতে পারেনি। সব মিলিয়ে ৭ ম্যাচে ছক্কা খেয়েছেন ৫৪টি। যার ২৯টি ছক্কা খেয়েছেন পেসাররা। তাসকিন ছক্কা খেয়েছেন ৬টি, মুস্তাফিজুর রহমান ৫টি এবং ৯টি করে শরিফুল ও হাসান মাহমুদ।

সর্বশেষ খবর