বৃহস্পতিবার, ৯ নভেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

বসুন্ধরার জয়ে ফুটবলে ‘নতুন বার্তা’

বসুন্ধরার জয়ে ফুটবলে ‘নতুন বার্তা’

ফুটবলে শক্তিশালী দল গড়লেই চ্যাম্পিয়ন হওয়া যায় না। লাগে সাধনা, পরিশ্রম, সমন্বয়, কমিটমেন্ট ও ডিসিপ্লিন। আমি অনেক দলে খেলেছি এবং কোচেরও দায়িত্ব পালন করেছি। অস্বীকার করব না, ফুটবলে যা বাধ্যতামূলক তা কোনো দলে সেভাবে পাইনি। তাই বলে এই নয় যে, কোনো দলকে চ্যাম্পিয়ন করাতে পারিনি। বাংলাদেশের পেশাদার লিগ তো অনেকদিন ধরেই চলছে। জানি না আমার বলা ঠিক হবে কি না, তার পরও বলছি, পেশাদারি অনেক ক্লাবই মানে না। এ ক্ষেত্রে বসুন্ধরা কিংসকেই ব্যতিক্রম মনে হচ্ছে। প্রকৃত পেশাদারি বলতে যা বোঝায় তা অনেকটাই পূরণ করেছে কিংস। তা না হলে বারবার সাফল্য আসছে কেন? একটা বিষয় না বললেই নয়, যত বড় তারকা হোক না কেন, তাকে ডিসিপ্লিন মানতেই হবে। শৃঙ্খলা ভাঙার মতো বড় অপরাধ করেছে বলেই টিম বসুন্ধরা পাঁচ ফুটবলারকে সাময়িক সাসপেন্ড করে; যা অতীতে কোনো ক্লাব দূরের কথা, ফুটবল ফেডারেশনও এমন সাহসী পদক্ষেপ নেয়নি।

একে তো ভালো মানের দল, তার ওপর আবার ডিসিপ্লিনকে গুরুত্ব দেয়। এসব কারণে তারা বারবার বিজয়ের নিশানা ওড়াচ্ছে। ভারতের জাতীয় দল বা ক্লাবের সঙ্গে খেললেও ম্যাচের আগেই যেন নার্ভাস হয়ে হেরে যেত। কিংসই দেখাল ভালো খেললে অসম্ভব সম্ভব করা যায়। কথাটা আমি একটু বাড়িয়ে বলে ফেললাম। আসলে মোহনবাগান বা ইস্টবেঙ্গল এতটা ধরাছোঁয়ার বাইরে নয় যে, তাদের হারানোটাই মানে অসম্ভব সম্ভব করা। উল্টো বলব, কিংস অ্যারিনায় মোহনবাগান যে গোলের বন্যায় ভাসেনি তা তাদের ভাগ্য। ঘরের মাঠে কিংস সুযোগগুলো কাজে লাগাতে পারলে ২-১ নয়, ব্যবধান ৪-১ গোল হলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকত না। যোগ্য দল হিসেবেই কিংস জয় পেয়েছে। হয়তো প্রসঙ্গক্রমে বিষয়টি উঠতে পারে, বসুন্ধরা কিংসকে তো জিতিয়েছেন দলের বিদেশি ফুটবলাররা। মোহনবাগান কি লোকাল খেলোয়াড় নিয়েই লড়েছে? বরং তাদের বিদেশিরা ছিল আরও উঁচুমানের। কাতার বিশ্বকাপে যে অস্ট্রেলিয়া নকআউট পর্ব খেলেছে, সেই দলেরই খেলোয়াড় জেসন কামিন্স মোহনবাগানে ছিলেন। আরেকজন আবার রাশিয়া বিশ্বকাপ দলে ছিলেন। ঘরের মাঠ হোক, ফুটবলের এই দুর্দিনে ভারতীয় টপ টিম মোহনবাগানকে হারানোটা অবশ্যই গৌরবের। এমন ঐতিহাসিক জয়ে টিম বসুন্ধরা কিংসকে অভিনন্দন জানাই।

মোহনবাগানের বিপক্ষে বসুন্ধরার ঐতিহাসিক জয়টা দেশের ফুটবলে নতুন বার্তা বলা যায়। বার্তা বলতে আমি কী বোঝাতে চাচ্ছি, তা নিশ্চয় বাফুফেকে ভেঙে বলতে হবে না। ফুটবল জাগিয়ে তোলার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বসুন্ধরা। আমরা কথায় কথায় বলি, এ জয় জাতীয় দলকে অনুপ্রেরণা জোগাবে। আরে, অনুপ্রেরণা তো বললে হবে না, খেলার মতো খেলাটা খেলতে হবে। আফগানিস্তানের সঙ্গে দুই প্রীতি ম্যাচ ড্র ও মালদ্বীপকে বিশ্বকাপ বাছাই পর্বের প্লে-অফ ম্যাচে হারানোর পর কেউ কেউ বলতে শুরু করেছেন বাংলাদেশের ফুটবলে মানের উন্নয়ন ঘটেছে। যারা এ কথা বলছেন তারা কি ফুটবল বোঝেন?

আর কদিন পরই তো বাছাই পর্বে দ্বিতীয় রাউন্ডে অস্ট্রেলিয়া, ফিলিস্তিন ও লেবাননের বিপক্ষে খেলবে বাংলাদেশ। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে জেতা সম্ভবই নয় আমি ধরে নিচ্ছি। অস্ট্রেলিয়া যাওয়া নিয়ে মিডিয়া থেকেই জেনেছি এ কি ম্যাচ না আনন্দ ভ্রমণ। তাহলে কী অবস্থা হবে? তার পরও ফিলিস্তিন বা লেবাননকে একটা ম্যাচ হারাক, তখন স্বীকার করতে বাধ্য হব মানের উন্নয়ন ঘটেছে। জাতীয় দলে তো কিংসের অধিকাংশ খেলোয়াড়ই থাকবে। তখন দেখব দলে এরা ভালো খেলার পরও জাতীয় দলে পারে না কেন? এখানেই তো বসুন্ধরার সঙ্গে বাফুফের পার্থক্য খুঁজে পাওয়া যায়।

টানা চারবার লিগ জয় ও এএফসি কাপে মোহনবাগানকে হারিয়েছে বলেই বলছি না। বসুন্ধরা চেষ্টা করছে দেশের ফুটবলের ভাগ্যবদলের। তারা আধুনিক ফুটবল ভেন্যু তৈরি করেছে; যা এখন দেশ ও আন্তর্জাতিক ফুটবলে ১ নম্বর ভেন্যুতে পরিণত হয়েছে। বসুন্ধরা গ্রুপ তো বাঙালির প্রাণের খেলা ফুটবল উন্নয়নে এত টাকা ব্যয় করছে। আমি বলব যা বাফুফে পারেনি তা করে দেখাচ্ছে বসুন্ধরা গ্রুপের বসুন্ধরা কিংসই। মাঠ দিচ্ছে, অধিকাংশ লিগই স্পন্সর করছে বসুন্ধরা গ্রুপ। ফুটবলে যা দরকার তা একমাত্র করে দেখাচ্ছে এই গ্রুপই। বাফুফের বড় কাজের অনেকটাই তো বসুন্ধরা গ্রুপ করছে। তাদের দেখাদেখি অন্যদেরও এগিয়ে আসা উচিত।

সর্বশেষ খবর