মঙ্গলবার, ১৪ নভেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

সেমিফাইনাল এখন প্রতিশোধের মঞ্চ

এবারের বিশ্বকাপে দুই ত্রাস! ব্যাটিংয়ে কোহলি বোলিংয়ে বুমরাহ।

মেজবাহ-উল-হক

সেমিফাইনাল এখন প্রতিশোধের মঞ্চ

এবার প্রতিশোধের আগুনে উত্তপ্ত বিশ্বকাপের দুই সেমিফাইনাল। আরব সাগর পারে মুম্বাইয়ে ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে প্রথম সেমিফাইনালে ভারতের মুখোমুখি হবে নিউজিল্যান্ড। দ্বিতীয় সেমিফাইনালে কলকাতার ইডেন গার্ডেনে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে খেলবে অস্ট্রেলিয়া।

গ্রুপ পর্বে সুপার পারফর্ম করা দুই দল ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকা পয়েন্ট তালিকার ১ ও ২ নম্বরে থেকে শেষ চার নিশ্চিত করেছে। দুই দলের সামনেই প্রতিশোধ নেওয়ার দারুণ সুযোগ এসেছে।

২০১৯ বিশ্বকাপে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে হেরেই বিরাট কোহলির ভারতের বিশ্বকাপ যাত্রা সাঙ্গ হয়েছিল। দুর্দান্ত এক দল নিয়েও শেষ চারের গন্ডি পার হতে পারেনি। ইংল্যান্ডের ম্যানচেস্টারের ওল্ড ট্রাফোর্ডে অনুষ্ঠিত সেমিফাইনালটি বৃষ্টির কারণে দুই দিনে শেষ হয়েছে। প্রথমে ব্যাট করে নিউজিল্যান্ড ২৩৯ রানের বেশি করতে পারেনি। ২৪০ রানের সহজ টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে ২২১ রানেই গুটিয়ে যায় ভারতের ইনিংস। বিদায়ঘণ্টা বেজে যায় কোহলির। ম্যানচেস্টারের সেই কষ্ট ভুলতে পারেনি ভারত।

১৯৯৯ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বার্মিংহামের এজবাস্টনে অনুষ্ঠিত দক্ষিণ আফ্রিকা ও অস্ট্রেলিয়ার সেমিফাইনালটি যেন ঠাঁই করে নিয়েছে ইতিহাসের পাতায়! না জিতেও আগের পর্বের নেট রানরেটের হিসাবে ফাইনালে যায় অস্ট্রেলিয়া, আর না হেরেও দুর্ভাগ্য সঙ্গী করে বিদায় নেয় দক্ষিণ আফ্রিকা। ম্যাচে প্রথমে ব্যাট করে মাইকেল বেভানের ৬৫ রানে ২১৩ রান করে অসিরা। জয়ের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে ২১৩ রানেই অলআউট হয়ে যায় প্রোটিয়ারা। বার্মিংহামের সেই বেদনা এখনো কাঁদায় প্রোটিয়াদের।

তবে চার বছর আগে ম্যানচেস্টারের সেই হারের প্রতিশোধ কি এবার ঘরের মাঠে নিতে পারবে ভারত? অবশ্য গ্রুপ পর্বে স্বাগতিকরা যেভাবে প্রতিটি ম্যাচে জয় পেয়েছে, সেই পারফরম্যান্সের ধারাবাহিকতা থাকলে ফাইনালের ওঠা মোটেও কঠিন কিছু নয় ভারতের জন্য। এবারের বিশ্বকাপে ভারত এমনই ভয়ংকর এক দল যাকে নয় ম্যাচে কোনো প্রতিপক্ষই চ্যালেঞ্জ জানাতে পারেনি। প্রতিটি ম্যাচেই তারা পেয়েছে হেসেখেলে জয়। তবে ম্যাচটি ‘সেমিফাইনাল’ বলেই চিন্তা ভারতীয়দের জন্য। কেননা, কেবল ২০১৯ বিশ্বকাপ তো নয়, এর আগে আরও তিন বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে বিদায়ঘণ্টা বেজেছিল ভারতের। ১৯৮৭ সালে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে হেরে যায়, ১৯৯৬ সালে লঙ্কানদের কাছে ধরাশায়ী এবং ২০১৫ সালে অস্ট্রেলিয়া তাদের যাত্রা ভঙ্গ করে দেয়। কিন্তু ভারতের এ আসরের দলটিকে বলা হচ্ছে ইতিহাসের সেরা দল। ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিং- তিন বিভাগেই দুর্দান্ত।

অন্যদিকে নিউজিল্যান্ডও পরীক্ষিত এক দল। আগের দুই বিশ্বকাপে টানা ফাইনাল খেলেছে। এবার উপমহাদেশে শিরোপার জন্যই এসেছে ব্ল্যাক ক্যাপসরা। তাদের লড়াকু মনোভাবই ভারতের জন্য ভয়ের কারণ!

চলতি বিশ্বকাপে রানের জলোচ্ছ্বাস বইয়ে দিচ্ছে দক্ষিণ আফ্রিকা। তারা প্রথম ম্যাচেই শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ৪২৮ রান করে, যা বিশ্বকাপের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রানের নতুন রেকর্ড। যদিও ভারতের বিরুদ্ধে হেরে যায় প্রোটিয়ারা, আর নেদারল্যান্ডসের বিরুদ্ধে অঘটনের শিকার হয়। এ ছাড়া প্রতিটি ম্যাচেই বাইশগজে পরাক্রম দেখিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। এমনকি সেমিফাইনালের প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধেও তার গ্রুপ পর্বে জিতেছিল ১৩৪ রানের বিশাল ব্যবধানে। সেই অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে আরও একবার দেখা হচ্ছে প্রোটিয়াদের। জিতলে প্রথমবারের মতো প্রোটিয়াদের ফাইনাল তো নিশ্চিত হবেই, সেই সঙ্গে ’৯৯-এর হারের প্রতিশোধও নেওয়া হয়ে যাবে!

অন্যদিকে এ আসরে অস্ট্রেলিয়ার শুরুটাই ছিল চরম হতাশার। টানা দুই ম্যাচে ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে হারার পর যেন চেতনা ফেরে বিশ্বকাপ ইতিহাসের সবচেয়ে সফল দলটির। টানা সাত ম্যাচ জিতে নিশ্চিত করে সেমিফাইনাল। আসরে যতই সময় গড়িয়েছে অস্ট্রেলিয়ার পারফরম্যান্সের উজ্জ্বলতাও বেড়েছে। তবে আফগানদের বিরুদ্ধে ৯১ রানে ৭ উইকেট পতনের পরও গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের অপরাজিত ২০১ রানের মহাকাব্যিক ইনিংসে ২৯২ রানের টার্গেটে পৌঁছে অসিদের আত্মবিশ্বাসের মাত্রা যেন বেড়ে গেছে। শেষ ম্যাচে তারা বাংলাদেশের বিরুদ্ধেও ৩৪৭ রানের টার্গেটে জিতে যায় ৮ উইকেট হাতে রেখে। দুর্দান্ত ফর্মে অসি ক্রিকেটাররা। তবে সেমিতে ইডেন গার্ডেনে তাদের সামনে অপেক্ষা করছে ‘প্রোটিয়া-পরীক্ষা’! অষ্টমবারের মতো ফাইনাল খেলার হাতছানি অস্ট্রেলিয়ার সামনে।

এবারের দুই সেমিফাইনাল এক দিকে যেমন ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার পুরনো হিসাব মিটিয়ে দেওয়ার সুযোগ, তেমন গ্রুপ পর্বে বিধ্বস্ত হওয়ার কষ্ট লাঘব করতে মরিয়া অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড। তাই এবারের সেমি চার দলের জন্য যেন প্রতিশোধের মঞ্চ।

 

সর্বশেষ খবর