বৃহস্পতিবার, ১৬ নভেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

অস্ট্রেলিয়া-আফ্রিকার ফাইনালে ওঠার লড়াই

লখক্ষণতে প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়েছিল ১৩৪ রানে। মানসিকভাবে কিছুটা হলেও আজ এগিয়ে থাকবে প্রোটিয়ারা। অস্ট্রেলিয়া প্রথম দুই ম্যাচ হারের পরের সাত ম্যাচ টানা জিতেছে

বড় আসর, উড়ন্ত সূচনা। এরপর হঠাৎ পতন। দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেট দলের নিয়তি। দলটির আরেক নাম ‘চোকার্স’। চোকার্স শব্দটি মুছে ফেলতে মরিয়া টেম্বা ভাবুমা, কুইন্টন ডি কক, ফন ডার ডুসেন, মার্কো জেনসেন, কেশব মহারাজরা। পারবে কি দক্ষিণ আফ্রিকা? অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেটের জার্মানি! শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত লড়াইয়ের অদম্য মানসিকতা। ছোটবড় যে কোনো টুর্নামেন্টেই টপ ফেবারিট। এবারের বিশ্বকাপেও। ‘নন্দনকানন’ ইডেনে আজ পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা ষষ্ঠ শিরোপা জয়ের মিশনে নামছে। প্রতিপক্ষ চোকার্স শব্দটি চিরতরে মুছে ফেলতে মরিয়া দক্ষিণ আফ্রিকা। এবার নিয়ে তৃতীয়বার বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে মুখোমুখি হচ্ছে দল দুটি। আগের দুই লড়াইয়ে জিতেছিল ট্রান্স তাসমান সাগরপাড়ের দেশ অস্ট্রেলিয়া। আজ কে জিতবে?

‘সিটি অব জয়’ কলকাতা এখন আলোকনগরী। ‘মহারাজ’ সৌরভ গাঙ্গুলির শহর এখন উৎসবের নগরী। ইতিহাসের নগরী এখন উৎসবমুখর দীপাবলি আর ভাইফোঁটা নিয়ে। অন্ধকারের ওউপর আলোর বিজয়- দীপাবলির মূলমন্ত্রে ৩০০ বছরের পুরনো কলকাতা সেজেছে রঙের ছটায়। নেতাজি সুভাষ বোস বিমানবন্দর থেকে শুরু করে নগরের সব রাস্তায় শুধু লাল, নীল বাতি। এমন উৎসবমুখর নগরে প্রিয় ভারতের খেলা নেই, প্রিয় ক্রিকেটাররা নেই। তার পরও নগরীতে আছে বিশ্বকাপ ক্রিকেট। তবে সেই আবেদন, জলুস, উচ্ছ্বাস নেই। টিকিটের জন্য হাহাকার নেই। ক্রিকেট জ্বরটাও হঠাৎ উধাও। আসলে ক্রিকেট থেকেও নগরীতে ঠিক ক্রিকেটটা নেই। যদিও বিশ্বকাপের দ্বিতীয় সেমিফাইনাল। ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে অস্ট্রেলিয়ার প্রতিপক্ষ দক্ষিণ আফ্রিকা। অস্ট্রেলিয়া ফাইনাল খেলেছে ছয়বার। হেরেছে সাকল্যে একবার। প্রতিপক্ষ দক্ষিণ আফ্রিকা চারবার সেমিফাইনাল খেলেও টপকাতে পারেনি ব্যারিয়ার। ২১ বছরের নিষেধাজ্ঞা শেষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরা দক্ষিণ আফ্রিকার সেরা সাফল্য ১৯৯৮ সালের নকআউট বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন। ১৯৯১ সালে দেশটি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরেছিল ইডেনে। ১৯৯২ সালে প্রথম বিশ্বকাপ খেলে। অভিষেক ম্যাচের প্রতিপক্ষ ছিল আবার অস্ট্রেলিয়া।

অস্ট্রেলিয়া-দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচ মানেই ঘটনাবহুল ইতিহাস। ১৯৯৯ সালে হেডিংলিতে বিশ্বকাপের সুপার সিক্সের শেষ ম্যাচটি ছিল বিশ্বকাপ ক্রিকেটের অন্যতম আলোচিত। আফ্রিকার বিরুদ্ধে সেঞ্চুরি করে অস্ট্রেলিয়াকে একাই জিতিয়েছিলেন স্টিভ ওয়াহ। ৩১তম ওভারের শেষ বলে ল্যান্স ক্লুজনারের বলে ওয়াহর ক্যাচ ছেড়েছিলেন হার্শেল গিবস। নতুন জীবন পেয়ে গিবসকে অসি অধিনায়ক বলেছিলেন, ‘ম্যাচটাই বোধহয় হাতছাড়া হয়ে গেল।’ ঠিক চার দিন পর দ্বিতীয় সেমিফাইনালে ‘টাই’ করেও কম বল হারানোয় জিতেছিল অস্ট্রেলিয়া। এরপর ইতিহাস। ১৯৯৯, ২০০৩ ও ২০০৭ টানা তিনবার চ্যাম্পিয়ন। অস্ট্রেলিয়া-দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচ মানেই রেকর্ডের ছড়াছড়ি। ২০০৬ সালে জোহানেসবার্গে অস্ট্রেলিয়ার ৪৩৪ রান টপকে ম্যাচ জিতেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। ওয়ানডে ক্রিকেট ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি রান তাড়া করে ম্যাচ জয়ের রেকর্ড। দুই দল পরস্পরের বিরুদ্ধে খেলেছে ১০৯ বার। দক্ষিণ আফ্রিকার ৫৫ জয়ের বিপরীতে পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা জিতেছে ৫০ বার। বাকি তিনবার টাই, একটি আবার ১৯৯৯ সালের সেমিফাইনালে। একটিতে কোনো ফল হয়নি। দুই দল বিশ্বকাপে পরস্পরের প্রতিপক্ষ হয়েছে সাতবার। জয় তিনটি করে এবং ড্র হয়েছিল একটি। ১৯৯৯ সালের পর ২০০৭ সালে দুই দল আরও একবার সেমিতে মুখোমুখি হয়েছিল। সেবারও জিতেছিল অসিরা। এবারও কি সেই ধারাবাহিকতা ধরে রাখবে প্যাট কামিন্সের অস্ট্রেলিয়া? না প্রথমবারের মতো ফাইনাল খেলবে দারুণ খেলতে থাকা দক্ষিণ আফ্রিকা?

ডি কক, জেনসেন, ভ্যান ডার ডুসেনরা দারুণ খেলছেন। নয় ম্যাচের পাঁচটিতেই তিন-শ-ঊর্ধ্ব স্কোর করেছে দলটি। বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ ৫ উইকেটে ৪২৮ রানও বাভুমার দলের। লক্ষেœৗতে প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়েছিল ১৩৪ রানে। মানসিকভাবে কিছুটা হলেও আজ এগিয়ে থাকবে প্রোটিয়ারা। অস্ট্রেলিয়া প্রথম দুই ম্যাচ হারের পরের সাত ম্যাচ টানা জিতেছে। আফগানিস্তান ম্যাচে গ্লেন ম্যাক্সওয়েল ‘মাসল পুল’ নিয়ে যেভাবে ২০১ রানের ইনিংস খেলে ম্যাচ জিতিয়েছেন, ম্যাক্সওয়েল (৩৯৭ রান) ছাড়াও দারুণ ছন্দে রয়েছেন ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নার (৪৯৯ রান)। এদের জবাব দিতে প্রস্তুত প্রোটিয়া বাঁ হাতি ওপেনার ডি কক (৫৯১ রান), ভ্যান ডার ডুসেন (৪৪২ রান)। ব্যাটিংয়ের মতো বোলিংয়েও দুই দল সমানে সমান। অসি লেগ স্পিনার অ্যাডাম জাম্পা ২২ উইকেট, মিচেল স্টার্ক ও কামিন্স নিয়েছেন ১০টি করে উইকেট। প্রোটিয়াদের পক্ষে কোয়েটজে ১৮, জেনসেন ১৭ ও কেশব মহারাজ ১৪ উইকেট নিয়েছেন।

 

 

সর্বশেষ খবর