শুক্রবার, ১৭ নভেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

বিপর্যয়েও বর্ণিল সেঞ্চুরি মিলারের

বিপর্যয়েও বর্ণিল সেঞ্চুরি মিলারের

সকাল থেকেই কলকাতার আকাশে রোদের দেখা ছিল না। ভেসে বেড়ানো টুকরো টুকরো মেঘে ঢাকা ছিল পুরো আকাশ। মনে হচ্ছিল যখন তখন ভাসিয়ে দেবে ইতিহাসের নগরীর রাস্তাঘাট, ময়দান। আবহাওয়া অফিস অবশ্য বেশ কদিন ধরেই আভাস দিচ্ছিল বৃষ্টির। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের এই বৃষ্টিতে বাধাগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা ছিল অস্ট্রেলিয়া-দক্ষিণ আফ্রিকা দ্বিতীয় সেমিফাইনাল। অবশ্য ভোরে এক পশলা বৃষ্টি হয়েছে। তাতে ঠান্ডা হয়ে যায় নগরীর বাতাস। দুপুরে খেলা গড়ানোর পর একবার বৃষ্টিতে খেলা বন্ধ ছিল আধা ঘণ্টার ওপর। বৃষ্টিতে ‘নন্দনকান’ ইডেনের সেমিফাইনাল বন্ধ থাকা পর্যন্ত চালকের আসনে বসে ছিলেন পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়ার বোলাররা। বৃষ্টির পর খেলা শুরু হলে ঘুরে যায় মোমেন্টাম। ম্যাচটি নিজের করে নেন ‘কিলার’ মিলার। দক্ষিণ আফ্রিকার বাঁ হাতি ব্যাটার সাবেক বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের বোলিংয়ের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন একা। খেলেছেন ৩ অঙ্কের নান্দনিক ইনিংস। তার প্রত্যয়ী সেঞ্চুরিতে দক্ষিণ আফ্রিকার সংগ্রহ ছিল ২১২ রান। ডেভিড মিলারের ১৭০ ম্যাচ ক্যারিয়ারের ৬ নম্বর সেঞ্চুরির ইনিংসটি ছিল ১০১ রানে। ১১৬ বলের ইনিংসটি সাজানো ছিল ৮ চার ও ৫ ছক্কায়। বিশ্বকাপের নকআউট পর্বের ম্যাচে প্রোটিয়াস ব্যাটারদের পক্ষে এটাই ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ইনিংস।

মেঘাচ্ছন্ন আকাশ। প্রবলভাবে না হলেও বাতাস ছিল দিনভর। এমন আবহাওয়ায় টস জিতে দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক টেম্বা বাভুমার ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্তে অবাক হন ম্যাচ আম্পায়ার। আড়ালে হেসেছিলেন অসি অধিনায়ক। কারণ, আবহাওয়া ছিল পুরোপুরি বোলিংসহায়ক। বাঁ হাতি ফাস্ট বোলার মিচেল স্টার্ক ইনিংসের প্রথম ওভারের শেষ বলে আঘাত হানেন প্রোটিয়াস শিবিরে। ছন্দহীন অধিনায়ক বাভুমাকে উইকেটের পেছনে উইকেটরক্ষক ইংলিশের গ্লাভসবন্দি করেন। দলের স্কোর তখন ১/১। এরপর দলের দুই সেরা ব্যাটার কুইন্টন ডি কক ও ভ্যান ডার ডুসেন চেষ্টা করেন জুটি গড়তে। কিন্তু কন্ডিশনকে পুরোপুরি কাজে লাগিয়ে ষষ্ঠ ওভারে ফের আঘাত হানেন জশ হ্যাজলউড। তার টেনে দেওয়া বলকে ‘ওভার দ্য টপ’ খেলতে চেয়েছিলেন ডি কক। কিন্তু বল আকাশে উঠে গেলে অসি অধিনায়ক কামিন্স দৌড়ে দারুণ এক ক্যাচ নেন। প্রোটিয়াসদের স্কোর তখন ২/৮। অসি বোলাররা এতটাই চেপে ধরেন প্রোটিয়াস ব্যাটারদের, ১০ ওভারের পাওয়ার প্লেতে দুই ওপেনারকে হারিয়ে সংগ্রহ করে মাত্র ১৮ রান। পাওয়ার প্লেতেই ম্যাচ থেকে ছিটকে পড়ে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের ফাইনালের স্বপ্ন দেখা দক্ষিণ আফ্রিকা! অথচ দলটি বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বে প্রতিটি দলের নাভিশ্বাস তুলেছে বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ে। লিগপর্বে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৪২৮, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৩৯৯, বাংলাদেশের বিপক্ষে ৩৮২, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৩৫৭, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৩১১ রান করে।

এটা মিলারের ক্যারিয়ারের ষষ্ঠ ও অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে তৃতীয় সেঞ্চুরি। বিশ্বকাপে এই প্রথম সেঞ্চুরি করেন ডেভিড মিলার।
দুই ওপেনারের বিদায়ের পর দলকে ভিত দিতে চেষ্টা করেন ভ্যান ডার ডুসেন ও এইডেন মারক্রাম। কিন্তু ১১.৫ ওভারের মধ্যে ফিরে যান দুজনে। দলের স্কোর ৪ উইকেটে ২৪। ক্রিজে আসেন মিলার। হেনরিক ক্লাসেনকে নিয়ে জুটি বাঁধেন। ১৪ ওভারে স্কোর ৪ উইকেটে ৪৪, বৃষ্টিতে বন্ধ হয়ে যায় খেলা। ৪০ মিনিট পর খেলা শুরু হলে ক্লাসেন-মিলার পঞ্চম উইকেট জুটিতে যোগ করেন ১৮.৫ ওভারে ৯৫ রান। দলীয় ১১৯ রানে অকেশনাল স্পিনার ট্রাভিস হেডের অফ স্পিন বুঝতে না পেরে ব্যক্তিগত ৪৭ রানে বোল্ড হন ক্লাসেন। হেডের পরের বলেই লেগ বিফোর হন জেনসেন। হ্যাটট্রিকের আশা জাগালেও কোয়েটজে সেটা সামলে নেন। সপ্তম উইকেট জুটিতে মিলার-কোয়েটজে যোগ করেন ৫৩ রান। কোয়েটজের বিদায়ের পর দলকে একাই টানেন মিলার। ১৭০ ম্যাচ ক্যারিয়ারের ষষ্ঠ সেঞ্চুরিটি করেন কামিন্সকে মিড উইকেটে ছক্কা মেরে। পরের বলে হুক খেলে আউট হন মিলার। তার আগে ইডেনে যে আলোকিত ইনিংসটি খেলেন, সেটা ছিল একেবারে নি-িদ্র। এটা ক্যারিয়ারের ষষ্ঠ ও অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে তৃতীয় সেঞ্চুরি। বিশ্বকাপে এই প্রথম সেঞ্চুরি করেন ডেভিড মিলার। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে তার সেঞ্চুরিগুলো : হোবার্টে ১৩৯, ডারবানে অপরাজিত ১১৮* ও ইডেনে ১০১। বাকি তিনটি সেঞ্চুরি যথাক্রমে ১৩৮* জিম্বাবুয়ে, ১৩০* ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও ১১৭* শ্রীলঙ্কা।

সর্বশেষ খবর