শনিবার, ১৮ নভেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

ভারতের দুর্বলতা বনাম অস্ট্রেলিয়ার চ্যালেঞ্জ!

মেজবাহ্-উল-হক

ভারতের দুর্বলতা বনাম অস্ট্রেলিয়ার চ্যালেঞ্জ!

ভারতের দুর্বলতা কোথায়?

অস্ট্রেলিয়া চ্যালেঞ্জ নিতে কি সক্ষম?

বিশ্বকাপের দুই ফাইনালিস্টকে নিয়ে এই দুই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাওয়া কঠিন। গ্রুপপর্ব এবং সেমিফাইনালে দুই দল ক্যারিশমেটিক খেলা উপহার দিয়ে নিজেদের প্রমাণ করেই ফাইনালের টিকিট নিশ্চিত করেছে।

আহমেদাবাদের ফাইনাল পর্যন্ত পৌঁছাতে যে ১০টি ম্যাচ খেলতে হয়েছে, কোনো ম্যাচেই ভারতকে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে ফেলতে পারেনি কোনো প্রতিপক্ষ। যাকে যখন সামনে পেয়েছে রোহিত-কোহলি-সামিরা রীতিমতো উড়িয়ে দিয়েছেন।

বোলিং, ব্যাটিং কিংবা ফিল্ডিং -তিন বিভাগেই ক্যারিশমেটিক এক দল এই ভারত। দলে দুর্দান্ত তিন পেসার -জসপ্রিত বুমরাহ, মোহাম্মদ সামি ও মোহাম্মদ সিরাজ। স্পিনে কুলদীপ যাদব ও রবীন্দ্র জাদেজা। ‘পারফেক্ট’ পাঁচ বোলার। এ ছাড়াও পারটাইমারের অভাব নেই। মোহাম্মদ সামি তো প্রথম তিন ম্যাচ না খেলেও ২৩ উইকেট নিয়ে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি আর ব্যাটিংয়ে যেমন টপ অর্ডার তেমন মিডল অর্ডার। ক্যাপ্টেন রোহিত শর্মা ও শুভমন গিল পাওয়ার প্লেতে বাইশগজে গিয়ে ঝড় তোলেন, তারপর তিনে থাকা কোহলি ইনিংসকে ক্যারি করে নিয়ে যান, মিডল অর্ডারে শ্রেয়াস আইয়ার ও লোকেশ রাহুল ঝোড়ো ব্যাটিং করে ইনিংসকে প্রতিপক্ষের ধরাছোঁয়ার বাইরে নিয়ে যান।

তবে কি ফাইনালেও একইভাবে জিতে বিশ্বকাপের তৃতীয় শিরোপা ঘরে তুলবে ভারত! বিষয়টা এতই সহজ? গ্রুপপর্বের ম্যাচ যেমনই হোক না কেন ফাইনালটা আলাদা। ফাইনালের মেজাজই অন্যরকম। তা ছাড়া প্রথম ম্যাচের প্রতিপক্ষ ‘১৯৯ রানে অলআউট হওয়া অস্ট্রেলিয়া’ আর ফাইনালের অস্ট্রেলিয়া এক নয়!

অসিদের বিশ্বকাপ যাত্রাটা ছিল খুবই বাজে। প্রথম দুই ম্যাচেই ভরাডুবি। তারপর যেন অসিদের চেতনা ফেরে। একের পর এক জিততে থাকে। টানা ৮ ম্যাচ জিতে পৌঁছে গেছে ফাইনালে। এই পর্যন্ত পৌঁছাতে অনেক পরীক্ষা দিতে হয়েছে। বিশেষ করে আফগানদের বিরুদ্ধে ম্যাচটি স্মরণীয় হয়ে থাকবে। আফগানদের দেওয়া ২৯২ রানের টার্গেট টপকাতে নেমে ৯১ রানেই ৭ উইকেটের পতন। এরপর গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের মহাকাব্যিক সেই অপরাজিত ২০১ রানের ইনিংস। ইনজুরিতে পড়েও কী ইনিংসটাই খেলেছেন। একটা সময় ম্যাক্সওয়েলের পা আর কাজ করছিল না, কিন্তু তারপরও বিশাল বিশাল ছক্কা হাঁকিয়ে অস্ট্রেলিয়াকে নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছে দিয়েছেন। ম্যাক্সওয়েলের অতিমানবীয় ইনিংসটা যেন অস্ট্রেলিয়াকে দারুণভাবে অনুপ্রাণিত করেছে। দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে লো-স্কোরিং ম্যাচে ৭ উইকেট পতনের পর জয় নিশ্চিত করে অসিরা যেন বুঝিয়ে দিয়েছে তারা চ্যালেঞ্জ নিতে কতটা সক্ষম!

তবে বাইশগজের চ্যালেঞ্জের বাইরে আরেকটি চ্যালেঞ্জ অস্ট্রেলিয়াকে নাকাল করতে পারে, তা হচ্ছে- ভারতের আবহাওয়া! একেক রাজ্যে একেক রকম। কোথাও প্রচণ্ড শীত, আবার কোথাও ঠান্ডা। পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়াই বড় চ্যালেঞ্জ। অসি পেসার জস হ্যাজলউড আইসিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘উত্তর থেকে দক্ষিণ, পূর্ব থেকে পশ্চিম -উইকেট, আবহাওয়ার পার্থক্য থাকে। সব পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে হয়। বোলারদের মানিয়ে নিতে হয়। ব্যাটারদের মানিয়ে নিতে হয়। তবে আহমেদাবাদের উইকেট বেশ ভালো। রানে ভরা।’

অসি এই পেসার ভারতের দুর্বলতাও খুঁজে পেয়েছেন! পরপর দুই উইকেট পড়লে ভারত বিভ্রান্ত হয়ে যায়। হ্যাজলউড বলেন, ‘চেন্নাইয়ে প্রথম ম্যাচে ওদের (ভারতের) কয়েকটা ছোটখাটো দুর্বলতা আমাদের চোখে পড়েছে। কম রান তাড়া করতেও একটু সমস্যা হয়েছিল। কারণ আমরা দ্রুত ওদের দুই উইকেট তুলে নিয়েছিলাম। এ ছাড়া ভারতের কোনো দুর্বলতা চোখে পড়েনি। দুর্দান্ত এক দল।’

তবে ‘দুর্বলতা’ কিংবা ‘চ্যালেঞ্জ’ থাকুক বা না থাকুক এবারের ফাইনালে এমন দুই দল মুখোমুখি -এক দল এই বিশ্বকাপের সেরা, আরেক দল বিশ্বকাপের ইতিহাসে সেরা। এখন দেখা যাক, ভারত চ্যাম্পিয়ন হয়ে সেরার তকমা অটুট রাখতে পারবে নাকি ইতিহাসকে আরও সমৃদ্ধ করতে অস্ট্রেলিয়াই আরেক শিরোপা জিতে যাবে!

সর্বশেষ খবর