চার দশক আগের কথা। ১৯৮৩ সালের বিশ্বকাপ; লর্ডসে মুখোমুখি দুইবারের চ্যাম্পিয়ন ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও প্রথমবার ফাইনাল খেলতে আসা ভারত। ওই ফাইনালে অবিশ্বাস্য এক ক্যাচ ধরেছিলেন ভারতীয় অধিনায়ক কপিল দেব। ওই ক্যাচেই বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ভারত। গতকাল আহমেদাবাদে কপিলের অবিশ্বাস্য ক্যাচকে স্মরণ করিয়ে দেন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়ার ট্রেভিস হেড। ৪০ বছর আগের ফাইনালে মদনলালের বল সপাটে চালিয়েছিলেন ভিভ রিচার্ডস। ব্যাটের কানায় লেগে বলটি কাভার পয়েন্টের দিকে ভেসে যাচ্ছিল। শর্ট কাভার থেকে উল্টো দিকে প্রায় ১৫ গজ দৌড়ে ক্যাচটি নিয়েছিলেন কপিল। কপিলের ওই ক্যাচে সেবারই প্রথম চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ভারত। আহমেদাবাদের মোদি স্টেডিয়ামে গতকাল ফাইনালে দারুণ ব্যাটিং করছিলেন ভারতীয় অধিনায়ক রোহিত শর্মা। পাওয়ার প্লের শেষ ওভার চলছে। ইনিংসের ১০তম ওভারের দ্বিতীয় বলে ছক্কা ও তৃতীয় বলে চার মারেন রোহিত। ওভারের বাকি দুই বল। ১০ রান নেওয়ার পর বিরাট কোহলি সাধুবাদ জানিয়ে কিছু একটা বলেন রুদ্রমূর্তি ধারণকারী অধিনায়ককে। পঞ্চম বলটি একটু টেনে দুসরা করেন ম্যাক্সওয়েল। বলের লাইন বুঝতে ব্যর্থ রোহিত হাওয়ায় ভাসিয়ে দেন। কাভার থেকে প্রায় ১০-১২ গজ উল্টো দৌড়ে দুর্দান্ত এক ক্যাচ নেন। তার ওই দুর্দান্ত ক্যাচেই রানের গতি আটকে যায় ভারতের। ছিটকে পরে ম্যাচ থেকে। তিনশ রানের স্বপ্ন দেখা স্বাগতিকদের ইনিংস শেষ হয় ২৪০ রানে।
বিশ্বের সবচেয়ে বড় স্টেডিয়ামের চিফ কিউরেটর জানিয়েছিলেন, ৩১৫ রানই যথেষ্ট জিততে। এবারের বিশ্বকাপে হরহামেশা ৩০০-৪০০ রান হয়েছে। বিশ্বকাপের ১৩ আসরের ফাইনালে এখন পর্যন্ত একটাই তিনশোর্ধ- স্কোর রয়েছে। ২০০৩ সালে অস্ট্রেলিয়া রিকি পন্টিংয়ের সেঞ্চুরিতে অস্ট্রেলিয়া ২ উইকেটে ৩৫৯ রান করেছিল ভারতের বিরুদ্ধে। ফাইনালে ভারতের সর্বোচ্চ স্কোর, ২০১১ সালে ওয়াংখেড়ে ৪ উইকেটে ২৭৭ রান। ১৯৮৩ সালে ১৮৩ রান করেও জিতেছিল কপিল বাহিনী। এবার করল ২৪০ রান।
টার্গেট ২৪১ রান। ওভারপ্রতি ৪.৮২৫। মামুলি টার্গেট। বিশ্বকাপ ইতিহাসে এর চেয়ে কম রানের টার্গেটে জয়ের রেকর্ড শুধু ভারতের। ১৯৮৩ সালে ১৮৩ রান করেও জিতেছিল ৪৩ রানে। গতকাল সেই স্বপ্ন দেখছিলেন মোদি স্টেডিয়ামসহ ভারতের ১৪০ কোটি জনগণ। ৭ ওভারে ৪৭ রানে ৩ উইকেট তুলে সেই স্বপ্নকে ত্বরান্বিত করে স্বাগতিকরা। এরপর ইতিহাস। হেড ও মারনাস লাবুশেন চতুর্থ উইকেট জুটিতে ৩৫.৫ ওভারে ১৯২ রান যোগ করে অস্ট্রেলিয়াকে ষষ্ঠবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন করেন। ম্যাচসেরা হেড জয়ের থেকে মাত্র ২ রান দূরে থাকতে সিরাজের বলে সাজঘরে ফেরেন। হেড ১৩৭ রানের স্বপ্নের ইনিংসটি খেলেন ১২০ বলে ১৫ চার ও ৪ ছক্কায়। ম্যাচ জেতানো ইনিংস খেলা হেড বলেন, ‘অবিশ্বাস্য একটি দিন! খুব ভালো লাগছে এমন একটি মুহূর্তের অংশীদার হয়ে। শুরুতে আমি একটু নার্ভাস ছিলাম। লাবুশেন দারুণ খেলেছেন। আমি খুশি টস জিতে এমন উইকেটে বোলিং নেওয়ায়।’
বিশ্বকাপের ফাইনালের ইতিহাসে ষষ্ঠ ক্রিকেটার হিসেবে সেঞ্চুরি করেন হেড। ১৯৭৫ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্লাইভ লয়েড ৮৫ বলে ১০২, ১৯৯৬ সালে শ্রীলঙ্কার অরবিন্দ ডি সিলভা ১০৭, রিকি পন্টিং ২০০৩ সালে ১২১ বলে ১৪০, অ্যাডাম গিলক্রিস্ট ১০৪ বলে অপরাজিত ১৪৯ ও মাহেলা জয়াবর্ধনা ২০১১ সালে ৮৮ বলে ১০৩ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেছিলেন।