মঙ্গলবার, ২১ নভেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

এই অস্ট্রেলিয়া সেই অস্ট্রেলিয়া

এই অস্ট্রেলিয়া সেই অস্ট্রেলিয়া

খেলার কথাই ছিল না ট্রেভিস হেডের। বিশ্বকাপ শুরুর আগে হাত ভেঙে ফেলেন। এরপর ভাঙা হাত নিয়ে রিহ্যাব করেছিলেন ঘরের মাটিতে। সুস্থ হয়ে বাঁহাতি ওপেনার ঘরের মাঠে যখন প্রথম ব্যাটিং অনুশীলন করেন, তখন বিশ্বকাপে তিন ম্যাচ খেলে ফেলেছেন প্যাট কামিন্সরা। দুটিতে হেরেওছেন। দলের এমন ক্রান্তিকালে টিম ম্যানেজমেন্ট দেশ থেকে উড়িয়ে আনেন হেডকে। দলের সঙ্গে যোগ দিয়ে আরও দুটি ম্যাচ ঘুরে বেড়ান। বিশ্বকাপে প্রথম খেলতে নামেন চির প্রতিদ্বন্দ্বী নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে এবং সেঞ্চুরি করেন। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাননি। সেমিফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ৬২। আহমেদাবাদে ফাইনালে ভারতকে একাই হারান ১২০ বলে ১৩৭ রানের ইনিংস খেলে। হেডের অবিশ্বাস্য সেঞ্চুরিতে অস্ট্রেলিয়া ষষ্ঠবারের মতো বিশ্বকাপ জয় করে। ১৩ আসরের ছয়টিতেই ট্রফি আকাশপানে উঁচিয়ে ধরেছে তাসমান পাড়ের সবচেয়ে বড় দ্বীপরাষ্ট্রটি। দুরন্ত গতিতে ছুটতে থাকা ভারতকে হারিয়ে ষষ্ঠ শিরোপা জিতে অস্ট্রেলিয়া গোটা ক্রিকেট বিশ্বকে বার্তা দেয়, বিশ্বকাপ ক্রিকেট মানেই অস্ট্রেলিয়া। টুর্নামেন্টে অন্য দলগুলো অংশ নেয় এবং অস্ট্রেলিয়া টুর্নামেন্ট শেষ করে চ্যাম্পিয়ন হয়।

বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের এবারের বিশ্বকাপ শুরু হয়েছিল হারে। টানা দুই ম্যাচে হার। তখন ক্রিকেট বিশ্লেষকদের অনেকেই ভেবেছিলেন সান্ত্বনার বিশ্বকাপ খেলবে অস্ট্রেলিয়া। কিন্তু তৃতীয় ম্যাচ থেকে সেই যে জয়ের রথে চড়েছে, শেষ করেছে সাবরমতীতে রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলিদের কাঁদিয়ে। ১৯৭৫ সালে বিশ্বকাপ শুরু। প্রথম আসরেই ফাইনাল খেলেছিল অস্ট্রেলিয়া। রানার্স আপ হয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে। এরপর প্রথমবার চ্যাম্পিয়ন হয় ১৯৮৭ সালে। কলকাতার ইডেন গার্ডেনের ফাইনালে অ্যালান বোর্ডারের অস্ট্রেলিয়া ৭ রানে হারিয়েছিল ইংল্যান্ডকে। দ্বিতীয়বার চ্যাম্পিয়ন হয় ১৯৯৯ সালে। ওয়াসিম আকরামের পাকিস্তানকে গুঁড়িয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় স্টিভ ওয়াহর অস্ট্রেলিয়া। চার বছর পর ২০০৩ সালেও চ্যাম্পিয়ন হয়। জোহানেসবার্গের ফাইনালে রিকি পন্টিংয়ের সেঞ্চুরিতে হারায় সৌরভ গাঙ্গুলির ভারতকে। ১৯৮৭, ১৯৯৯ ও ২০০৩ সালের পর চতুর্থ শিরোপা জেতে ২০০৭ সালে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বারবাডোজে পন্টিংয়ের নেতৃত্বে অস্ট্রেলিয়া হারায় শ্রীলঙ্কাকে। ২০১১ সালে ফাইনালে উঠতে ব্যর্থ হয় দলটি। চার বছর পর ২০১৫ সালে ঘরের মাটিতে ফের ফাইনালে উঠে অস্ট্রেলিয়া। ট্রান্স তাসমান পাড়ের দেশ নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে মেলবোর্নে পঞ্চমবারের মতো বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয় অস্ট্রেলিয়া। মাইকেল ক্লার্কের নেতৃত্বে পঞ্চমবার বিশ্বসেরা হয়ে অস্ট্রেলিয়া গোটা বিশ্বকাপে স্পষ্ট করে দেয়, বিশ্বকাপ ক্রিকেটে অসিরা অদ্বিতীয় এবং পরাক্রমশালী।

প্যাট কামিন্সের নেতৃত্বে ষষ্ঠবার শিরোপা জিতল। গত জুনে কামিন্সের নেতৃত্বে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জিতেছে অস্ট্রেলিয়া। বাদ দেয়নি টি-২০ বিশ্বকাপের শিরোপাও। ওয়ানডে বিশ্বকাপ জয়ের পর উচ্ছ্বসিত অসি অধিনায়ক কামিন্স এটাকেই সেরা বলেন, ‘আমার মনে হয়, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সর্বোচ্চ চূড়া ওয়ানডে বিশ্বকাপ জয়। আমাদের ক্রিকেট দল ভারতে এসে যা করল... এর আগে অ্যাশেজ, টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ এবং এরপর এই শিরোপা, সব মিলিয়ে এটা অনেক বড় এবং এই মুহূর্তগুলোই সবাই আজীবন লালন করে।’ কামিন্সের কথাতে স্পষ্ট, ওয়ানডে বিশ্বকাপ তার কাছে সবার ওপরে, ‘বিশ্বকাপে প্রতি চার বছর পরপর খেলার সুযোগ মেলে। কারও ক্যারিয়ার ১০ বছরের হলে, সে দুবার খেলার সুযোগ পায়। এই বিশ্বকাপে গোটা ক্রিকেট বিশ্বই থমকে থাকে। এর চেয়ে ভালো কিছু তাই আর হয় না।’

কামিন্সের কাছে বিশ্বকাপ সবার ওপরে। অধিনায়ক হিসেবে ফাস্ট বোলার জিতেছেন ওয়ানডে ও টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা। আসলে অস্ট্রেলিয়া ‘বিগ টুর্নামেন্ট টিম’। বড় কোনো টুর্নামেন্ট মানেই অস্ট্রেলিয়ার শিরোপা উৎসবে মেতে ওঠা। যা দেশে কিংবা বিদেশে।

সর্বশেষ খবর