বৃহস্পতিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

কাবরেরায় বদলে যাচ্ছে ফুটবল

ক্রীড়া প্রতিবেদক

মারদেকা কাপের মাধ্যমে ১৯৭৩ সাল থেকে আন্তর্জাতিক ফুটবলে অংশ নিচ্ছে বাংলাদেশ। ৫০ বছরে দেশি-বিদেশি মিলিয়ে অনেক কোচের বদল হয়েছে। এ ক্ষেত্রে বিদেশির সংখ্যাই বেশি। তবে বর্তমান জাতীয় দলের কোচ হাভিয়ের কাবরেরাকে ব্যতিক্রম বললে ভুল হবে না। তিনিই একমাত্র কোচ বাংলাদেশের দায়িত্ব নেওয়ার আগে কোনো জাতীয় দল বা ক্লাব পর্যায়ে প্রশিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেননি। তাই স্প্যানিশ এই কোচকে নিয়োগ দেওয়ার পরপরই ক্রীড়াঙ্গনে সমালোচনার ঝড় বইতে থাকে। এর পেছনে যুক্তিও ছিল। যার কোচিংয়ের কোনো অভিজ্ঞতা নেই, সেখানে সরাসরি একটি দেশের জাতীয় দলের কোচ হন কীভাবে? ফুটবলপ্রেমীরা তো বটেই, একসময় মাঠ কাঁপানো জাতীয় দলের ফুটবলাররা বলেছিলেন, দেশের ফুটবল এমনিতেই লাইফ সাপোর্টে। এখন আনাড়ি কাবরেরাকে জাতীয় দলের দায়িত্ব দিয়ে ফুটবলের মৃত্যু ঘটাল বাফুফে। না, আগের কোনো অভিজ্ঞতা না থাকলেও হাভিয়ের কাবরেরা দায়িত্ব নেওয়ার পরই ফুটবল ধীরে ধীরে জেগে উঠছে। এ কথা ঠিক, কাবরেরা এখন পর্যন্ত কোনো শিরোপা উপহার দিতে পারেননি। তবে ফুটবলারদের মধ্যে নতুন প্রাণের সঞ্চার হয়েছে। মান নামতে নামতে ফুটবলে এমন দুর্দশা নেমে এসেছিল যে, জাতীয় দল না গঠনের দাবিও তুলেছিলেন কেউ কেউ। তাদের কথা, অযথা দেশের সুনাম নষ্ট করে লাভ কী? ফুটবল ঘরোয়া আসরের মধ্যে ব্যস্ত থাকুক। সেই ধারণা পাল্টে দিতে শুরু করেছেন স্প্যানিশ হাভিয়ের কাবরেরা।

কাবরেরা দায়িত্ব নেওয়ার পর জাতীয় দল জয়ের উৎসবে ভাসছে না ঠিকই, তবে মাঠের লড়াইয়ে পরিবর্তন এসেছে। ফুটবলারদের ৯০ মিনিট খেলার দমও ছিল না। সেখানে টেকনিক বা কৌশলের প্রশ্নই ওঠে না। প্রশ্ন উঠতে পারে, এই তো সেদিন মেলবোর্নের মাঠে অস্ট্রেলিয়ার কাছে ০-৭ গোলে বিধ্বস্ত হয়েছে বাংলাদেশ। তাহলে কাবরেরা নতুনত্ব আনলেন কী? কাবরেরা দায়িত্ব নেওয়ার পর বাংলাদেশের বড় চ্যালেঞ্জ ছিল সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ।

যে আসরে শিরোপা নয়, ২০০৯ সালের পর থেকে বাংলাদেশ সেমিফাইনালই খেলতে পারেনি। জেমি ডেসহ কত বিদেশি কোচই না এসেছিলেন। সবাই যেখানে ব্যর্থ সেখানে কাবরেরার প্রশিক্ষণে ১৪ বছর পর সেমিতে খেলে বাংলাদেশ। গ্রুপ ম্যাচে তিনটির মধ্যে দুটিতে জয়। মালদ্বীপ হেরেছে ২০ বছর পর, ভুটানকেও উড়িয়ে দিয়েছেন রাকিব-মোরসালিনরা। লেবাননের কাছে হারলেও বাংলাদেশের পারফরম্যান্স প্রশংসিত হয়। ফাইনাল না খেলাটাও ছিল দুর্ভাগ্য। ম্যাচ নিয়ন্ত্রণে রেখেও সেমিতে কুয়েতের কাছে হেরে যায়। কাবরেরা কোচের দায়িত্ব নেওয়ার পর বাংলাদেশ ২১টি ম্যাচ খেলেছে। তার মধ্যে ৬ জয়, ৬ ড্র ও ৯ হার। গত পাঁচ বছরে এমন পরিসংখ্যান কোনো কোচের ক্ষেত্রে দেখা যায়নি। অস্ট্রেলিয়ার কাছে বড় ব্যবধানে হারলেও এটা মনে রাখতে হবে, কাতার বিশ্বকাপে প্রি-কোয়ার্টার ফাইনালে অস্ট্রেলিয়াকে হারাতেই মেসিরা ঘাম ঝরিয়েছিলেন। বসুন্ধরা কিংস অ্যারিনায় লেবাননের বিপক্ষে বাংলাদেশ যে গতিময় খেলা খেলেছে তা গত ১০ বছরে চোখে পড়েনি। কাবরেরাকে এখনই অনেকে সফল কোচ বলছেন। কিন্তু তিনি তা মানতে নারাজ। তার কথা, ‘ফুটবলপাগল দেশ বাংলাদেশ কেন পিছিয়ে, আমিও অবাক হয়েছিলাম। আসলে খেলোয়াড়দের শুধু সমালোচনা করা হয়েছে। ভালো খেলার পরিবেশ বা সাহস পাচ্ছিল না। সবচেয়ে বড় কথা, নতুন নতুন ফুটবলারের সন্ধান মিলছে এখন। হুট করে উন্নয়ন সম্ভব নয়। ছেলেদের সময় দিতে হবে। তাহলে পাঁচ বছরের মধ্যে বাংলাদেশ সম্মানজনক স্থানে থাকতে পারবে।’

 

 

সর্বশেষ খবর