শনিবার, ২ ডিসেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

তাইজুলের ঘূর্ণিতে দিশাহারা নিউজিল্যান্ড

জয় থেকে ৩ উইকেট দূরে টাইগাররা

ক্রীড়া প্রতিবেদক

তাইজুলের ঘূর্ণিতে দিশাহারা নিউজিল্যান্ড

ইতিহাস গড়ার চেয়ে মাত্র তিন কদম দূরে দাঁড়িয়ে নাজমুল হোসেন শান্ত। জয়ের আনন্দে মেতে উঠতে দরকার মাত্র ৩টি উইকেট। এরপরই বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস। আনন্দের বানে ভেসে যাওয়া। অবশ্য এই আনন্দ ও উচ্ছ্বাসে মেতে উঠতে একটু অপেক্ষায় থাকতেই হচ্ছে বাংলাদেশকে। সেই সোনালি মুহূর্তটা হয়তো হেমন্তের আজকের সকালেই হতে পারে! নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ঘরের মাটিতে ঐতিহাসিক জয় পেতে টাইগারদের দরকার ৩ উইকেট। সেটা পেলেই ২০১৬ সালে ইংল্যান্ড এবং ২০১৭ সালে অস্ট্রেলিয়াকে হারানোর পর বড় কোনো দলের বিরুদ্ধে ঘরের মাটিতে জিতবে বাংলাদেশ। যদিও ২০২২ সালের জানুয়ারিতে মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে জয়ের স্বাদ রয়েছে টাইগারদের। তারপরও ঘরের মাটিতে জয়! একেবারেই ভিন্ন স্বাদ, ভিন্ন আবেদন। এ মুহূর্তটির অপেক্ষায় দল, ক্রিকেটপ্রেমীরা। নাজমুল শান্ত বাংলাদেশের ১৩তম টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে নিউজিল্যান্ড ম্যাচে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। অধিনায়কত্বের অভিষেক টেস্টেই জয় পাবেন। অবশ্য মাশরাফি বিন মর্তুজা ও সাকিব আল হাসান জয় পেয়েছেন নেতৃত্বের অভিষেক টেস্টে। দুজনেই জিতেছেন ২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে।

টার্গেট ৩৩২ রান। নিউজিল্যান্ডের ক্রিকেট ইতিহাসে এত বেশি রান তাড়া করে জয়ের ইতিহাস নেই। তিনশ রানের ওপর টার্গেট তাড়া করে নিউজিল্যান্ডের জয় সাকুল্যে ২টি। সর্বোচ্চ ৩২৪ রান তাড়া করে জিতেছে নিউজিল্যান্ড। ১৯৯৪ সালে ল্যাঙ্কাস্টার পার্কে পাকিস্তানের ৩২৪ রান তাড়া করে জিতেছিল ৫ উইকেটে। ২০০৮ সালে চট্টগ্রাম জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে বাংলাদেশের ছুড়ে দেওয়া ৩১৭ রান টপকে ব্ল্যাক ক্যাপসরা জিতেছিল ৩ উইকেটে। কিউইদের জয় উপহার দিয়েছিলেন ড্যানিয়েল ভেট্টরির অলরাউন্ডিং পারফরম্যান্সে। এবার টার্গেট ৩৩২ রান। সেই টার্গেটে খেলতে নেমে সফরকারী নিউজিল্যান্ড চতুর্থ দিন শেষ করেছে ৭ উইকেটে ১১৩ রান তুলে। আজ ২১৯ রানের টার্গেটে খেলবে সাউদি বাহিনী।

বাংলাদেশের মাটিতে এবং দেশের বিরুদ্ধে ৩০০ রানের ওপর রান তাড়া করে প্রতিপক্ষের জয়ের রেকর্ড মাত্র ৩টি। করোনার পর ২০২১ সালে চট্টগ্রাম জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে ৩৯৫ রান তাড়া করে জিতেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ড এটি। নিউজিল্যান্ড জিতেছে ২০০৮ সালে। জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে জিতেছিল ৩১৭ রান তাড়া করে। ২০০৬ সালে নারায়ণগঞ্জ ফতুল্লা স্টেডিয়ামে অস্ট্রেলিয়া জিতেছিল ৩০৭ রান তাড়া করে। সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ৩৩২ রানের টার্গেট দিয়ে জয়ের উৎসবে মেতে উঠার আগাম মঞ্চ তৈরি করেই নেয় বাংলাদেশ।

দুই দল টেস্টের প্রথম তিন দিন সমানে সমানে লড়াই করেছে। গতকাল চতুর্থ দিন সকাল থেকে চালকের আসনে বসতে থাকে। বিশেষ করে লাঞ্চ বিরতির পর টেস্টের রশি নিজেদের করে নেয় নাজমুল বাহিনী। আগের দিনের ৩ উইকেটে ২১২ রান নিয়ে খেলতে নামে টাইগাররা। ১০৪ রানে অপরাজিত নাজমুল সাজঘরে ফেরেন আর কোনো রান যোগ না করে। সেঞ্চুরির ইনিংসটি খেলে তৃতীয় দিনই ইতিহাসের পাতায় চিরস্থায়ী হন নাজমুল। ১৪৬ বছরের টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসে ৩২ নম্বর অধিনায়ক হিসেবে অধিনায়কত্বের অভিষেকে সেঞ্চুরি করেন। তিনিই প্রথম বাংলাদেশের টেস্ট অধিনায়ক সেঞ্চুরি করেন। ৫ সেশনে ৩৩২ রান, আকাশ ছোঁয়া টার্গেট নয়। কিন্তু এত রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ড নেই যে দলের, সেখানে জয়ের জন্য খেলা কঠিনই। সেটা হয়েছেও। প্রথম ওভারেই সাজঘরে ফেরেন টম ল্যাথাম। সেই শুরু। এরপর আর থেমে থাকেনি। তাইজুলের বিধ্বংসী বোলিংয়ে একের পর এক উইকেট হারিয়ে ১০২ রান তুলতেই ৭ উইকেট খুইয়ে কোণঠাসা হয়ে পড়ে সফরকারীরা। শেষ দিকে মিচেল ও সোধি দৃঢ়তার সঙ্গে ব্যাট করে টেস্টকে পঞ্চম ও শেষ দিনে নিয়ে যান।

সর্বশেষ খবর