চারদিকে শুধু সবুজ আর সবুজ। চা বাগান বেষ্টিত নান্দনিক সৌন্দর্যে ভরপুর সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম। সবুজ টিলায় ঘেরা অপরূপ এই ক্রিকেট ভেন্যুর একটি গ্যালারিও সবুজ ঘাসের। ওপর থেকে ড্রোন ক্যামেরায় তোলা ছবিতে সিলেট স্টেডিয়াম দেখে মনে হয় যেন এক ‘সবুজ সিংহাসন’!
আর এ সবুজ সিংহাসনের সম্রাট কি তবে স্পিনার তাইজুল ইসলাম! এই ভেন্যুতে এখন পর্যন্ত মাত্র দুটি টেস্ট ম্যাচ হয়েছে। আর দুই ম্যাচে ২১ উইকেট নিয়ে যেন বিরল রেকর্ড গড়লেন তাইজুল।
![](/assets/archive/images/Print-Edition/2023/12.%20December/03-12-2023/03-12-2023-p10-2.jpg)
সিলেটের টেস্ট অভিষেক হয় ২০১৮ সালে। সেই প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশ ১৫১ রানের ব্যবধানে জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে হারলেও দুই ইনিংস মিলে ১১ উইকেট নিয়েছিলেন তাইজুল। মজার বিষয় হচ্ছে, সেই হারের পাঁচ বছর পর নিউজিল্যান্ডকে ১৫০ রানে হারাল বাংলাদেশ। নায়ক সেই তাইজুল।
সিলেটের মাটিতে ২০১৮ সালে প্রথম ম্যাচে হারলেও এ ম্যাচে গতকাল নিউজিল্যান্ডের মতো ক্রিকেট পরাশক্তিকে বিশাল ব্যবধানে হারাল বাংলাদেশ। টাইগাররা এমন এক ম্যাচে জয় পেল যে ম্যাচে একাদশে ছিলেন না সাকিব আল হাসান, লিটন দাস, তামিম ইকবাল, তাসকিন আহমেদ ও ইবাদত হোসেনের মতো তারকারা। পরিস্থিতি ও শক্তিমত্তার বিচারে দেশের মাটিতে টেস্টে এটিই বাংলাদেশের সেরা জয়। আর সেই ক্যারিশমেটিক জয় এলো তাইজুলের অসাধারণ বোলিংয়ে।
এটি ছিল ক্যাপ্টেন হিসেবে নাজমুল হোসেন শান্তর অভিষেক টেস্ট। ক্রিকেটের অভিজাত এ সংস্ককরণে নেতৃত্বে তার শুরুটা হলো সেরা এক জয় দিয়ে। আর এমন বিজয়ের পেছনের কারিগর তাইজুলকে নিয়ে তাই উচ্ছ্বসিত শান্ত, ‘আমার মনে হয়, টেস্ট সংস্করণে কয়েক বছর ধরে তাইজুল ভাই অন্যতম সেরা বোলার। উনার সবচেয়ে বড় শক্তির জায়গা, লম্বা সময় একই জায়গায় বল করতে পারেন। ওই বিশ্বাসটা আমার ছিল, ওটাই আমি কাজে লাগানোর চেষ্টা করেছি।’
টাইগার ক্যাপ্টেন বলেন, ‘যদি খেয়াল করে দেখেন, অনেক লম্বা সময় ধরে তিনি একপাশ থেকে বল করে গেছেন। তাকে ওরকম আলাদা কোনো প্ল্যান আমি দিইনি, উনিও করেননি। তার একটাই প্ল্যান ছিল, কীভাবে লম্বা সময় এক জায়গায় বল করা যায়।’
তাইজুল ইসলাম ম্যাচসেরার পুরস্কার পেলেন দীর্ঘ ৯ বছর পর। দলেও তিনি খুব যে নিয়মিত, তা নয়। তার মানে এই নয় যে বাজে পারফরম্যান্সের জন্য তিনি বাদ পড়েন। তাকে বাদ পড়তে হয় টিম কম্বিনেশনের কারণে। সাকিব আল হাসান এবং তাইজুল- উভয় বাঁ হাতি বোলার। তাই সাকিব থাকলে নিয়মিত তাইজুলকে খেলানোর সুযোগ খুব একটা থাকে না। তবে যখনই সুযোগ পেয়েছেন নিজেকে উজাড় করে দিয়েছেন তিনি।
ইনজুরির কারণে এ ম্যাচে সাকিব না থাকায় গুরু দায়িত্ব ছিল তার ওপর। বল হাতে সাকিব যে ভূমিকা পালন করেছেন, সেই একই কাজ ছিল তাইজুলের। আর সে দায়িত্ব যে তিনি খুব ভালোভাবেই পালন করেছেন তা তো বলার অপেক্ষা রাখে না।
সিলেটের উইকেটকে স্বর্গ বলেই মানবেন তাইজুল! প্রথম টেস্টে ২১ উইকেট শিকার করা তো আর চাট্টিখানি কথা নয়! তাই টেস্টের ভেন্যু হিসেবে যতদিন সিলেট থাকবে ততদিন তাইজুলের কীর্তিও স্মরণীয় হয়ে থাকবে।