বৃহস্পতিবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

অদ্ভুত আউটে মুশফিকের বিদায়

‘আউট’ অবস্ট্রাকটিং দ্য ফিল্ড

ক্রীড়া প্রতিবেদক

অদ্ভুত আউটে মুশফিকের বিদায়

ইতিহাস গড়ার হাতছানি ছিল মুশফিকুর রহিমের। প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে এক ভেন্যুতে ৫ হাজার রান করার মাইলফলক গড়তে পারতেন। এজন্য ৮৮ রানের একটি ঝকঝকে ইনিংস খেলতে হতো বাংলাদেশ জাতীয় দলের সবচেয়ে অভিজ্ঞ ক্রিকেটারকে। মিরপুরের স্পিনবান্ধব উইকেটে যেভাবে ব্যাটিং করছিলেন, তাতে ইতিহাসটা লিখেই ফেলতে পারতেন টাইগার সাবেক অধিনায়ক। যদি না অবিবেচকের মতো আউট হতেন। যদিও এক ভেন্যুতে সর্বোচ্চ ৪৯৪৭ রানের মালিক মুশফিক সবার ওপরে। সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড না লিখলেও লিখেছেন আরেক গল্প, আরেক ইতিহাস। ১৪৬ বছরের টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসে বাংলাদেশের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে ‘হ্যান্ডলড দ্য বল’ বা ‘অবস্ট্রাকটিং দ্য ফিল্ড’ হয়েছেন। অবশ্য মুশফিকের আগে টেস্টে আরও সাত ব্যাটার এমন অবিশ্বাস্য আউট হয়েছেন। মুশফিকের আউটের আবার ব্যাখ্যাও দিয়েছে ক্রিকেটের শাসক সংস্থা আইসিসি। মুশফিকের অবিশ্বাস্য আউটের মিরপুর টেস্টের প্রথমদিন সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। স্পিনবান্ধব উইকেটে নাজমুল হোসেন শান্তের বাংলাদেশ এগিয়ে আছে ১১৭ রানে। প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের ১৭২ রানের জবাবে সফরকারী নিউজিল্যান্ডের সংগ্রহ ৫ উইকেটে ৫৫ রান। দুই টেস্ট ম্যাচ সিরিজের প্রথমটি সিলেটে টাইগাররা জিতেছিল ১৫০ রানে।

সবচেয়ে সিনিয়র টাইগার ক্রিকেটার মুশফিক। দেড় যুগের ক্যারিয়ারে টেস্ট খেলেছেন ৮৮টি। রান করেছেন ৫৬৬৭। ১০টি সেঞ্চুরি ও ২৭টি হাফসেঞ্চুরি করেছেন। এমন একজন অভিজ্ঞ ক্রিকেটার, এমন অবিবেচকের মতো আউট হবেন, ভাবাই যায়নি। বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক তামিম ইকবাল বিস্ময় প্রকাশ করেছেন মুশফিকের আউট নিয়ে, ‘বলটা উইকেটে যাচ্ছে না। এটা হাত দিয়ে করার কোনো প্রয়োজন ছিল না। সে দীর্ঘদিন ধরে খেলছে। তার আইন জানা উচিত ছিল।’

মুশফিকের আউটের ঘটনা ৪১ নম্বর ওভারের চতুর্থ বলে। দলের স্কোর তখন ৪ উইকেটে ১০৪। মুশফিক খেলছেন ৩৫ রানে। কাইলি জেমিসনের শর্ট অব লেন্থ বলকে রক্ষণাত্মক ভঙ্গিতে খেলেন। বল ব্যাটে লেগে ক্রিজে ড্রপ খেয়ে বাইরে চলে যাচ্ছিল। তখনই মুশফিক বলটিকে হাত দিয়ে ঠেলে দেন। কিউই ক্রিকেটাররা আউটের আবেদন করেন। তৃতীয় আম্পায়ারের শরণাপন্ন হন আম্পায়ার। তৃতীয় আম্পায়ার আইন ঘেঁটে আউট দেন মুশফিককে। মুশফিকের নামের পাশে লেখা ‘অবস্ট্রাকটিং দ্য ফিল্ডার’। ক্রিকেট আইনে এই আউটকে ‘অবস্ট্রাকটিং দ্য ফিল্ড’ বলা হয়। অথচ এক সময় আউটটিকে বলা হতো ‘হ্যান্ডলড দ্য বল।’

 

২০১৭ সাল থেকে ‘হ্যান্ডলড দ্য বল’ অবস্ট্রাকটিং দ্য ফিল্ড আউটের ধারায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। হালনাগাদ করা ক্রিকেট আইনে অবস্ট্রাকটিং দ্য ফিল্ডের ধারায় কী লেখা, সেটি এখানে দেওয়া হলো।

ধারা- ৩৭.১১

ব্যাটসম্যান যদি বল খেলার মধ্যে থাকাকালে ইচ্ছাকৃতভাবে কথা বা কাজের মাধ্যমে ফিল্ডিং দলকে বাধা দেন কিংবা মনোযোগ নষ্ট করেন, তবে আউট হবেন। তবে ৩৭.২ ধারা মতে, চোট থেকে বাঁচতে এমন কিছু করলে ব্যাটসম্যান আউট হবেন না।

ধারা- ৩৭.১২

বোলার বল করার পর ব্যাটসম্যান যদি যে হাতে ব্যাট ধরা নেই সেই হাত দিয়ে বলে আঘাত করেন বা ছুঁয়ে সরিয়ে দেন তবে আউট ঘোষিত হবেন (ব্যতিক্রম ৩৭.২ ধারা)। সেটি প্রথম, দ্বিতীয় কিংবা আরও পরে ছোঁয়ার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। বল খেলার সময় যেমন তেমনি এরপর ব্যাটসম্যান কিংবা নন স্ট্রাইবার ব্যাটসম্যান উইকেট বাঁচানোর চেষ্টা করার সময়েও এই আইন প্রযোজ্য।

 

তিনি (মুশফিক) তো ইচ্ছাকৃতভাবে এটা করেননি। কিন্তু জেনেশুনে কেউ কখনো আউট হতে চান না। ফ্লোতে খেলতে গিয়ে হয়ে গেছে এরকম।

মেহেদি হাসান মিরাজ

এটা হয়তো খুব ভালো অপশন ছিল না। তবে ওই অবস্থায় আমাদের জন্য মুশফিকের অমন আউটটা মনে হয় বেশ দরকার ছিল।

মিচেল স্যান্টনার

সর্বশেষ খবর