শিরোনাম
বুধবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

কলিঙ্গ স্টেডিয়ামে ফুটবলের কলঙ্ক

ক্রীড়া প্রতিবেদক

কলিঙ্গ স্টেডিয়ামে ফুটবলের কলঙ্ক

পেশাদার ফুটবলে অভিষেকের পর বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন হিসেবে টানা চারবার এএফসি কাপে খেলেছে বসুন্ধরা কিংস। নতুন দল হিসেবে এ রেকর্ড বাংলাদেশের কোনো ক্লাবের নেই। বসুন্ধরা কিংস টানা চারবার লিগ, ফেডারেশন ও স্বাধীনতা কাপ দুবার করে জিতে অল্প সময়ের মধ্যে দেশের সবচেয়ে সফল দল হিসেবে নাম লিখিয়েছে। তবে আন্তর্জাতিক আসরে এখনো সফল নয়। এএফসি কাপ অভিষেকে কিংস শুরুটা দারুণভাবে করলেও করোনার কারণে সেই আসর বাতিল হয়ে যায়। পরের তিন আসরে গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায়।

প্রশ্ন উঠেছে, খেলার মাধ্যমে বিদায় নাকি পরিকল্পিতভাবে কিংসকে দ্বিতীয় রাউন্ডে যেতে দেওয়া হচ্ছে না? তিন আসরের মধ্যে দুটিতেই বিতর্কিত রেফারিংয়ে তীরে এসে তরী ডুবিয়েছে কিংস। খেলায় হারজিত আছেই। যদি পরিকল্পনা করে একটি দলের সর্বনাশ করা হয়, তাহলে ফুটবল আর মাঠে নামানোর দরকার কী? আগেই ঘোষণা হোক কোন দল গ্রুপসেরা হবে।

এবার বসুন্ধরা কিংসের সুবর্ণ সুযোগ ছিল এএফসি কাপে প্রথমবারের মতো গ্রুপসেরা হয়ে দ্বিতীয় রাউন্ডে যাওয়ার। ‘ডি’ গ্রুপে কিংস পাঁচ ম্যাচে ১০ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে আর সমান ম্যাচে ভারতের ওড়িশা এফসির ৯ পয়েন্ট। অর্থাৎ ড্র করলেই কিংস চ্যাম্পিয়ন হয়ে ইন্টারজোন সেমিফাইনালে চলে যাবে। আবার ওড়িশা জিতলে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন। দেশবাসী আশায় ছিল এবার ঘর ছাড়িয়ে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়নরা আন্তর্জাতিক ফুটবলেও বিজয় পতাকা ওড়াবে। কিন্তু সে আশার গুড়ে বালি। এবারও হলো না, দ্বিতীয়ার্ধে গোল করে ওড়িশা চলে গেল ইন্টারজোন সেমিফাইনালে। এটা ওড়িশার জয় না রেফারির উপহার?

আগের ম্যাচে সল্টলেক স্টেডিয়ামে মোহনবাগান সুপার জায়ান্টকে ৫-২ গোলে উড়িয়ে দিয়েছিল ওড়িশা। সে ক্ষেত্রে ঘরের মাঠে তারা কিংসকে হারাতেই পারে। কিন্তু গোল দেওয়ার আগে ভুবনেশ্বর কলিঙ্গ স্টেডিয়ামে কলঙ্ক রচিত হয়ে যায়। ভিয়েতনামের রেফারি এনগো ডুই লান প্রথমার্ধের অতিরিক্ত সময়ে কিংসের উজবেক ফুটবলার আসরর গফুরভকে লাল কার্ড দেখান। ম্যাচ জিততেই হবে তাই শুরু থেকে ওড়িশা আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলতে থাকে। এ সময় কিংসের রক্ষণভাগও কিছুটা এলোমেলো হয়ে পড়ে। যাক, সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে মাঠে কিংস তাদের চেনা রূপে ফিরে আসে। সবকিছু গুছিয়ে ম্যাচ যখন রবসনদের নিয়ন্ত্রণে, তখনই ভিয়েতনামি রেফারি কলঙ্ক রচনা করেন। এটা ঠিক, ওই সময় গফুরভ প্রতিপক্ষের আহমেদকে ফাউল করেন। এতে বড়জোর হলুদ কার্ড দেখানো যেত। রেফারি তার পকেট থেকে হলুদ কার্ড বেরও করেন। এরপর কী চিন্তা করে লাল কার্ড দেখালেন এটাই রহস্য। তাহলে কি রেফারি আগেই সিদ্ধান্ত নিয়ে এসেছিলেন কিংসকে দুর্বল করতে এমন বিতর্কিত কাজ করবেন? সমমানের দুই দল তার ওপর আবার ফাইনালের মতো ম্যাচে একজন যদি কমে যায় তার প্রভাব তো পড়বেই। তাই বলতে হয়, ওড়িশা নয়, জিতেছেন রেফারি। তার পরিকল্পনা সফল হয়েছে। এতে তিনি কী পুরস্কার পেয়েছেন বা পাবেন তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

এক ফাউলে গফুরভকে লাল কার্ড দেখানো হলো। অথচ শুরু থেকে ওড়িশা যে মিগেল ফিগেরাকে বারবার মাটিতে ফেলে দিচ্ছিল সেদিকে নজরই যায়নি রেফারির। গফুরভ যদি লাল কার্ড পান তাহলে ওড়িশা এত ফাউল করার পরও নিরাপদে পার হলো কীভাবে? জাতীয় দলের সাবেক ফুটবলার ও কোচ শফিকুল ইসলাম মানিক বলেন, ‘টিভিতে আমি ম্যাচ দেখেছি। গফুরভকে যে লাল কার্ড দেখানো হয়েছে তা মানা যায় না। ফাউলের কারণে হলুদ কার্ড শো করা যেত। জানি না রেফারি ভুল করেছেন না হোম দলকে সুবিধা দিতে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ওড়িশাও তো বারবার মিগেলকে ফাউল করছিল। তা কেন এড়িয়ে গেলেন? আসলে ভুল বা ইচ্ছা যেটাই বলি না কেন, ক্ষতিটা হয়ে গেল বসুন্ধরা কিংসের। এবারও তারা দ্বিতীয় রাউন্ডে গেল না। এখন তো সিদ্ধান্ত বদল করা যাবে না। তবে ভিয়েতনামের রেফারি কাকে খুশি করতে বাঁশি বাজিয়েছেন তা এএফসি তদন্ত করলেই বেরিয়ে আসবে।’

কলকাতা থেকে প্রকাশিত শীর্ষস্থানীয় একটি দৈনিক তাদের অনলাইন সংস্করণে উল্লেখ করেছে, ‘নিজেদের বাজে মাঠে তিন জয় পেয়েও বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়নদের লাভ হলো না। ওড়িশা তাদের থামিয়ে দিল।’ শুধু তাই নয়, প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘বসুন্ধরা কিংস যদি ইন্টারজোন সেমিতে যেত তাহলে ফুটবলে কলঙ্ক যুক্ত হতো। কারণ ইন্টারজোন সেমিফাইনালে প্রতিপক্ষ দলকে বসুন্ধরার অনুপযোগী মাঠে খেলতে হতো।’ কলঙ্ক যারা তৈরি করেছে তাদের আবার বড় কথা! ২০২১ সালেও মোহনবাগানের এমন ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছে কিংস। বারবার এমন কেলেঙ্কারি হওয়ার পরও এএফসি নীরব কেন? এমন চলতে থাকলে টুর্নামেন্টের গুরুত্ব বা সৌন্দর্য থাকবে কীভাবে?

 

 ‘টিভিতে আমি ম্যাচ দেখেছি। গফুরভকে যে লাল কার্ড দেখানো হয়েছে তা মানা যায় না। ফাউলের কারণে হলুদ কার্ড শো করা যেত। জানি না রেফারি ভুল করেছেন না হোম দলকে সুবিধা দিতে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এখন তো সিদ্ধান্ত বদল করা যাবে না। তবে ভিয়েতনামের রেফারি কাকে খুশি করতে বাঁশি বাজিয়েছেন তা এএফসি তদন্ত করলেই বেরিয়ে আসবে।’

শফিকুল ইসলাম মানিক

কোচ ও সাবেক ফুটবলার

সর্বশেষ খবর