মঙ্গলবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

স্বাধীনতা কাপে কিংসই কিং

গতকাল ফাইনালে মোহামেডানকে ২-১ গোলে হারিয়ে রেকর্ডের ভাগীদার হলো কিংস। মোহামেডানের সমান তারাও এখন স্বাধীনতা কাপে তিনবার চ্যাম্পিয়ন।

মনোয়ার হক

স্বাধীনতা কাপে কিংসই কিং

ইতিহাস লেখা হয়ে গেল গোপালগঞ্জবাসীর। রেকর্ড গড়ল বসুন্ধরা কিংস। এই প্রথম এ জেলায় বাংলাদেশের ঘরোয়া ফুটবলে বড় ফাইনাল হলো। অন্যদিকে বিজয়ের মাসে স্বাধীনতা কাপ ফুটবলে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়ে রেকর্ডও স্পর্শ করেছে বসুন্ধরা কিংস। দেশ স্বাধীনের পর ঘরোয়া আসরে স্বাধীনতা কাপই ছিল ফুটবলে প্রথম টুর্নামেন্ট। আসরে সর্বোচ্চ তিনবার শিরোপা জয়ের রেকর্ড ছিল মোহামেডানের। গতকাল ফাইনালে মোহামেডানকে ২-১ গোলে হারিয়ে রেকর্ডের ভাগীদার হলো কিংস। মোহামেডানের সমান তারাও এখন স্বাধীনতা কাপে তিনবার চ্যাম্পিয়ন। মাত্র পাঁচ বছরে পেশাদার ফুটবলে অভিষেক ঘটিয়ে বসুন্ধরা গ্রুপের বসুন্ধরা কিংসের এ রেকর্ড গৌরবের। আরেক বড় দল ঢাকা আবাহনী স্বাধীনতা কাপে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে দুবার। তাদের পেছনে ফেলে দিল দেশের ফুটবল কিং বসুন্ধরা কিংস।

এএফসি কাপে বিতর্কিত রেফারিংয়ে ওড়িশার কাছে হেরে কিংস ইন্টারজোন প্লে-অফ সেমিফাইনালে যেতে পারেনি। এ নিয়ে স্বাভাবিকভাবেই বসুন্ধরা কিংস শিবিরে হতাশা বিরাজ করছিল। দেশের ক্রীড়ামোদীরাও এ নিয়ে ছিলেন ক্ষুব্ধ। এ কষ্ট এত দ্রুত কাটবার নয়। তার পরও মৌসুমের প্রথম ট্রফি স্বাধীনতা কাপে চ্যাম্পিয়ন হয়ে স্বস্তি নেমে এসেছে বসুন্ধরা শিবিরে। অভিষেকের পর শিরোপা জয় ও রেকর্ড গড়াটা বসুন্ধরা কিংসের যেন অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। শুরু থেকেই শোকেসে একের পর ট্রফি আসছেই। বাংলাদেশ তো বটেই, তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান আমলে ফুটবলে যা ঘটেনি বসুন্ধরা কিংস সেই অসম্ভব সম্ভবে পরিণত করেই চলেছে। পাঁচ মৌসুমে টানা চার পেশাদার লিগ ছাড়াও তিনবার স্বাধীনতা কাপ ও ফেডারেশন কাপে দুবার চ্যাম্পিয়ন। অর্থাৎ অভিষেকের পাঁচ বছরেই নয়টি শিরোপা। একি বিশ্বাস করার মতো! বসুন্ধরা বলেই সম্ভব হয়েছে।

গত বছর গোপালগঞ্জ ফজলুল হক মণি স্টেডিয়ামে ফেডারেশন কাপের সেমিফাইনালে ঢাকা মোহামেডানের কাছে হেরে যায় কিংস। একই ভেন্যুতে প্রতিশোধ নিল স্বাধীনতা কাপের ফাইনালে। সবচেয়ে মজার ব্যাপার, এটিই ছিল ফুটবলে ঢাকা মোহামেডান ও বসুন্ধরা কিংসের প্রথম ফাইনাল। কিংসের কাছে সেমিফাইনালে আবাহনী ০-৪ গোলে বিধ্বস্ত হয়ে বিদায় নিয়েছিল। একই দিনে রহমতগঞ্জকে ১-০ গোলে হারিয়ে নয় বছর পর আসরে ফাইনালে ওঠে সাদা-কালোরা।

আবাহনীকে ৪-০ গোলে উড়িয়ে দেওয়ার পরই মনে হচ্ছিল মৌসুমে প্রথম ট্রফিটা কিংসেরই ঘরে যাচ্ছে। না, ফাইনালে মোহামেডান দমে ছিল তা-ও বলা যাবে না। রবসনদের সঙ্গে সমান পাল্লা দিয়েছেন দিয়াবাতেরা। ফাইনালের আগে মোহামেডান তিনটি ম্যাচ খেলেছে। গতকাল ফাইনালেই তারা নজরকাড়া পারফরম্যান্স প্রদর্শন করেছে। অধিনায়ক সুলেমান দিয়াবাতে নিষ্ক্রিয় থাকলেও কাল ছিলেন সক্রিয়। তারাও যে শিরোপা জিততে চান তাদের পারফরম্যান্সই বলে দিচ্ছিল।

আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণে খেলা হলেও প্রথমার্ধে কোনো গোল হয়নি। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই মাঠ ও গ্যালারিতে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। মোহামেডানের ওমর বাবুকে ফাউল করলে লাল কার্ড দেখেন কিংসের রফিকুল ইসলাম। এএফসি কাপে ওড়িশার বিপক্ষে গফুরভের ফাউল করাটা যেমন অপ্রয়োজনীয় মনে হয়েছে, গতকাল রফিকুলের ফাউলও অবাক করেছে। পেশাদারি ফুটবলে ফুটবলারদের দায়িত্ব যে আছে তা অনেকে মাঠে ভুলে যান। না হলে এমন গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে ফাউল কেন?

১০ জনের কিংসের বিপক্ষে ৫০ মিনিটে গোল করে এগিয়ে যায় মোহামেডান। মোজাফফরভের কর্নারে নাইজেরিয়ান মিডফিল্ডার এমানুয়েল সানডের দারুণ হেডে কিংসের জালে বল জড়ায়। দুই মিনিট পর ম্যাচে সমতা ফেরায় কিংস। রাকিব হোসেন নিখুঁত শটে বল জালে পাঠিয়ে কিংস শিবিরে স্বস্তি ফেরান। ৮৬ মিনিটে ডরিয়েলটনের গোলে শিরোপা উৎসবে মেতে ওঠে কিংস। কিংসের উৎসব হয়েছে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে, নীলফামারী, কিংস অ্যারিনায় কুমিল্লায় এবং এবার গোপালগঞ্জে।

 

সর্বশেষ খবর