বৃহস্পতিবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

শচীনকে ছাড়িয়ে সৌম্য

আসিফ ইকবাল

শচীনকে ছাড়িয়ে সৌম্য

মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ কি দেখেছেন সৌম্য সরকারের ইনিংস? বাংলাদেশের অন্যতম সৃষ্টিশীল ব্যাটার মাহমুদুল্লাহই বলতে পারবেন। বিশ্বকাপে মুম্বাইয়ে বাংলাদেশের ওয়ানডে ক্রিকেট ইতিহাসে অন্যতম সেরা কামব্যাকের গল্প লিখেছেন মাহমুদুল্লাহ। গতকাল নেলসনের স্যাক্সটন পার্কে আরও একটি কামব্যাকের গল্প লিখেছেন সৌম্য সরকার। আকাশসম চাপের মুখে ১৬৯ রানের যে ইনিংসটি খেলেছেন সৌম্য, তাকে নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের ক্রিকেটের ওয়ানডে ইনিংসগুলোর অন্যতম সেরা বলাই যায়! টানা দুই ম্যাচে শূন্য রানের ধাক্কা সামলে যেভাবে নিউজিল্যান্ড বোলারদের দাবড়ে ১৫১ বলে ২২ চার ও ২ ছক্কায় ১৬৯ রানের ইনিংস খেলেন, তাকে সমালোচনার জবাবের ইনিংস বলাই যায়। নিউজিল্যান্ড সফরে সৌম্যর দলভুক্তি বিস্ময়ের জন্ম দিয়েছিল। ছন্দে না থাকার পরও দলভুক্ত হয়ে সমালোচিত হয়েছেন বাঁ-হাতি ড্যাসিং ব্যাটার। চরমভাবে সমালোচিত হয়েছেন টাইগার কোচ চন্ডিকা হাথুরাসিংহে। সমালোচকরা সৌম্যর দলভুক্তির পেছনের নায়ক হাথুরাকে বলছেন। গতকালের ওয়ানডের আগের দিন টাইগার কোচ জানিয়েছেন, সৌম্যর ব্যর্থতার কারণ খুঁজে বেড়াচ্ছেন। গতকাল সমালোচনার জবাব দিয়েছেন। টিম ম্যানেজমেন্ট উত্তর খুঁজে পেয়েছে।

সৌম্য সরকার ৬৫ ওয়ানডে ক্যারিয়ারে তৃতীয় সেঞ্চুরি করেছেন। ৩ অঙ্কের জাদুকরী ইনিংসটি খেলেছেন ২০১৮ সালের ২৬ অক্টোবরের পর। পাঁচ বছর আগে চট্টগ্রামে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৯২ বলে ৯ চার ও ৬ ছক্কায় ১১৭ রানের ইনিংস খেলেছিলেন। পরের ২৮ ওয়ানডে খেলেছেন ৫০ মাসে। কোনো সেঞ্চুরির ইনিংস নেই। মাত্র পাঁচটি হাফসেঞ্চুরির ইনিংস ছিল তাতে। গতকাল সেঞ্চুরি করেছেন আগের দুই ম্যাচে শূন্য করার পর। গতকাল তার খেলার সম্ভাবনা ছিল ফিফটি-ফিফটি। টিম ম্যানেজমেন্ট সাহস করে তাকে একাদশে সুযোগ দেয়। খেলানোর প্রতিদান দেন সৌম্য। যদিও তিনবার জীবন পেয়েছেন বাঁ-হাতি ওপেনার। তিনবার তিনি বেঁচে যান ক্যাচ দিয়ে। একবার টিকে যান সফল রিভিউয়ে। জীবন পেলেও একাই টেনে নিয়ে যান দলকে। ৫০ রান করেন ৫৮ বলে ৯ চারে। ১০০ রান করেন ১১৬ বলে ১৩ চারে। শেষ ৬৯ রান করেন আক্রমণাত্মক মেজাজে ৩৫ বলে ৯ চার ও ২ ছক্কায়। তার সেঞ্চুরিতে নেলসনে বাংলাদেশ সংগ্রহ করে ২৯১ রান। নেলসনে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টাইগারদের সর্বোচ্চ দলগত স্কোর। যদিও এ মাঠে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ৪ উইকেটে ৩২২। সৌম্যর ১৬৯ রানের ইনিংস বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত স্কোর। ২০২০ সালে সিলেটে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ১৭৬ রানের ইনিংস খেলেছিলেন লিটন; যা বাংলাদেশের ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ। নিউজিল্যান্ডের মাটিতে অবশ্য সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত স্কোর সৌম্যর। ২০০৯ সালে শচীন টেন্ডুলকারের অপরাজিত ১৬৩ রান ছিল এতদিন সেরা।

সৌম্যর ক্যারিয়ার-সেরা সেঞ্চুরিতে ২৯২ রানের টার্গেট দেয় টাইগাররা। সেই টার্গেট অনায়াসে টপকে যায় নিউজিল্যান্ড। ব্ল্যাক ক্যাপসদের ৭ উইকেটের সহজ জয় পেতে উইল ইয়াং ও হেনরি নিকোলস সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন। দুজনে দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে যোগ করেন ২১.৫ ওভারে ১২৮ রান। ডানেডিন ম্যাচের জয়ের নায়ক উইল ইয়াং ৮৯ রান করেন ৯৪ বলে ৮ চার ও ২ ছক্কায়। নিকোলস নার্ভাস নাইনটিজের শিকার হয়ে সাজঘরে ফেরেন ব্যক্তিগত ৯৫ রানে। ৯৯ বলে ইনিংসটিতে ছিল ৮ চার ও ১ ছক্কা। শেষ দিকে অধিনায়ক টম ল্যাথাম ও টম ব্লান্ডেল ৩৬ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি বেঁধে ২২ বল হাতে রেখেই দলকে জয়ী করেন। ম্যাচে অভিষেক বাংলাদেশের লেগ স্পিনার রিশাদ হোসেন ও নিউজিল্যান্ডের আদিত্য অশোকের। রিশাদ ৬ রান করেন ৪ বলে ১ ছক্কায়। ৯.২ ওভারের স্পেলে উইকেটশূন্য ছিলেন ৬২ রানের খরচে।

সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডে ২৩ ডিসেম্বর, নেপিয়ারে। ম্যাচটি আবার হোয়াইটওয়াশ এড়ানোর। নেলসনে স্বাগতিকদের কাছে তিন ম্যাচেই হেরেছে টাইগাররা। সব মিলিয়ে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টানা ১৮ ওয়ানডে হার।

সংক্ষিপ্ত স্কোর

বাংলাদেশ : ২৯১/১০, ৪৯.৫ ওভার (সৌম?্য সরকার ১৬৯, এনামুল বিজয় ২, নাজমুল শান্ত ৬, লিটন দাস ৬, তৌহিদ হৃদয় ১২, মুশফিকুর রহিম ৪৫, মেহেদি মিরাজ ১৯, তানজিম সাকিব ১৩, রিশাদ হোসেন ৬, শরিফুল ইসলাম ১*, হাসান মাহমুদ ০। মিলনে ১০-০-৭৪-১, ডাফি ১০-০-৫১-৩, ও’রোক ৯.৫-০-৪৭-৩, ক্লার্কসন ৬-০-৩০-১, অশোক ১০-১-৬৩-১, রাচিন ৪-০-১৯-০)।

নিউজিল?্যান্ড : ২৯৬/৩, ৪৬.২ ওভার (উইল ইয়াং ৮৯, রাচিন রবীন্দ্র ৪৫, হেনরি নিকোলস ৯৫, টম ল?্যাথাম ৩৪*, টম ব্লান্ডেল ২৪*। শরিফুল ইসলাম ৯-১-৪৯-১, হাসান মাহমুদ ৭-০-৫৭-২, তানজিম সাকিব ৬-০-৫১-০, মেহেদি মিরাজ ১০-১-৪৫-০, রিশাদ হোসেন ৯.২-০-৬২-০, নাজমুল শান্ত ৫-০-৩০-০)।

ফল : নিউজিল্যান্ড ৭ উইকেটে জয়ী।

ম্যাচ-সেরা : সৌম্য সরকার।

 

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর