রবিবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

আগ্রাসি জয়ে আত্মবিশ্বাসে ফেরা

আগের ম্যাচে ব্যাট হাতে ইতিহাস গড়া সৌম্য এ ম্যাচে বল হাতে মাত্র ১৮ রানে নিলেন ৩ উইকেট। অনেক দিন পর যেন ‘পারফেক্ট’ এক পেস অলরাউন্ডারকে পেল বাংলাদেশ। তবে এ ম্যাচে ১৪ রানে ৩ উইকেট নিয়ে সেরা হয়েছেন তানজিম সাকিব

মেজবাহ্-উল-হক

আগ্রাসি জয়ে আত্মবিশ্বাসে ফেরা

♦ নিউজিল্যান্ডের মাটিতে প্রথম ওয়ানডে জয়

♦ পেসাররাই নিলেন ১০ উইকেট

♦ ৯৮ রানে গুঁড়িয়ে দিলেন টাইগাররা

♦ ২০৯ বল হাতে রেখেই জয়

যেখানে শেষ সেখান থেকেই যেন শুরু নতুন সম্ভাবনার। বিশ্বকাপে সেমিফাইনালের আশা নিয়ে খেলতে গিয়ে মাত্র দুটি জয়! ওয়ানডে ক্রিকেটে ‘শক্তিশালী’ দলের তকমা গায়ে মাখা বাংলাদেশের জন্য এর চেয়ে বড় বিপর্যয় আর কী হতে পারে! ওয়ানডে ক্রিকেটে এর চেয়ে খারাপ আর কী হতে পারে!

তার ওপর নিয়মিত একাদশের সেরা তারকারা নেই। সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, তাসকিন আহমেদ নেই। নিউজিল্যান্ড সফরে যাওয়ার আগে জাতীয় দলের অবস্থা এতটাই শোচনীয় মনে হচ্ছিল, যেন একাদশ গড়াই কঠিন হয়ে যাবে!

আহামরি কোনো পারফর্ম না করার পরও কোচ চন্ডিকা হাথুরাসিংহে সৌম্য সরকারকে দলে নিলেন সাকিবের ব্যাকআপের কথা চিন্তা করে। তাকে দলে নেওয়া হয়েছে কেবল অতীতের ভালো অভিজ্ঞতার কথা চিন্তা করে (টেস্ট খেলুড়ে কোনো দলের ইতিহাসে এমন ঘটনা আর ঘটেছে কি না)!

অবশ্য দ্বিতীয় দফায় বাংলাদেশের কোচ হয়ে আসার পর সৌম্যকে নিয়ে বারবার ট্রাই করছিলেন হাথুরা। বিশ্বকাপেও তাকে নেওয়ার জন্য অনেক চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু সৌম্য বারবারই ব্যর্থ। পারফরম্যান্স এতটাই বাজে ছিল যেন কোচের ‘গেরেজ’ দেওয়া নম্বরেও পাস করতে পারছিলেন না।

তার পরও নিউজিল্যান্ড সফরে আরেকবার সুযোগ দিলেন সৌম্যকে। কোচের এই একগুঁয়েমি আচরণে ভক্তরা যেন খেপে আগুন। নিউজিল্যান্ডে গিয়ে প্রথম ম্যাচেই সৌম্য কোনো রান করে আউট হওয়ায় সমালোচনার ঝড়টা যেন টর্নেডোয় পরিণত হয়।

মনে হচ্ছিল, একাদশে রাখা দূরের কথা, হয়তো দ্বিতীয় ম্যাচের আগে নিউজিল্যান্ড থেকেই দেশে পাঠিয়ে দেওয়া হতে পারে সৌম্যকে! কিন্তু হাথুরাসিংহে ছিলেন নিজের সিদ্ধান্তে অবিচল। ঠিকই পরের ম্যাচে সবাইকে অবাক করে দিয়ে সৌম্যকে একাদশে রাখলেন। আর ওই ম্যাচেই ১৬৯ রানের মহাকাব্যিক সেই ইনিংস খেললেন ‘আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলা’ সৌম্য! যা দেশের বাইরে বাংলাদেশের কোনো ব্যাটসম্যানের সর্বোচ্চ রানের ইনিংস। শুধু তাই নয়, নিউজিল্যান্ডের মাটিতে উপমহাদেশের কোনো ব্যাটসম্যানের সেরা ইনিংস। হাথুরা যেন প্রমাণ করে দিলেন, রত্ন চিনতে তিনি ভুল করেননি!

এক ইনিংসেই যেন আত্মবিশ্বাসের ট্রেনে উঠে গেলেন সৌম্য। তবে শুধু একা নন, হতাশায় থাকা পুরো দলকেই টেনে তুললেন। ঠিক পরের ম্যাচেই ফলটাও এলো। নিউজিল্যান্ডের মাটিতে প্রথম ওয়ানডে জয় বাংলাদেশের।

সে জয়টিও কি না এল ৯ উইকেটের বিশাল ব্যবধানে। তা আবার ২০৯ বল হাতে রেখেই। কী দুর্দান্ত! কী অসাধারণ এক জয়। এই নিউজিল্যান্ডকে টাইগাররা ঘরের মাঠে একাধিকবার হোয়াইটওয়াশ করলেও এ জয় বাংলাদেশের জন্য ঐতিহাসিক!

৯৮ রানেই কিউইদের গুঁড়িয়ে দিল বাংলাদেশ। নিউজিল্যান্ড তাদের ওয়ানডে ক্রিকেটের ইতিহাসে এর আগে ঘরের মাঠে মাত্র দুবার ১০০ রানের নিচে অলআউট হয়েছে। সেটাও ৩৩ বছর আগের ঘটনা। ১৯৯০ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ৯৮ এবং ১৯৮২ সালে ৮২।

শুধু কি তাই, শেষ ১৭ ম্যাচে ঘরের মাঠে নিউজিল্যান্ডকে হারাতে পারেনি কোনো দল। সেই ব্ল্যাক ক্যাপসদের রীতিমতো উড়িয়ে দিল বাংলাদেশ। এ ম্যাচের কান্ডারি নিঃসন্দেহে পেসাররা। স্পিননির্ভর বাংলাদেশ দলে কি না পেসাররাই রাখলেন মূল ভূমিকা। প্রতিপক্ষের ১০ উইকেটের সব কটি শিকার করেছেন পেসাররা। ওয়ানডেতে বাংলাদেশের ৪৩৫ ম্যাচের ইতিহাসে দ্বিতীয়বারের মতো এমন ঘটনা ঘটল।

আগের ম্যাচে ব্যাট হাতে ইতিহাস গড়া সৌম্য এ ম্যাচে বল হাতে মাত্র ১৮ রানে নিলেন ৩ উইকেট। অনেক দিন পর যেন ‘পারফেক্ট’ এক পেস অলরাউন্ডারকে পেল বাংলাদেশ। তবে এ ম্যাচে ১৪ রানে ৩ উইকেট নিয়ে সেরা হয়েছেন তানজিম সাকিব। আগের ম্যাচে লাইনলেন্থ খুঁজে না পেলেও এ ম্যাচে এই তরুণ পেসার ছিলেন দুর্দান্ত। আরেক পেসার শরিফুল ২২ রানে নিয়ে নিয়েছেন ৩ উইকেট। তিন ম্যাচের এ সিরিজে ধারাবাহিকভাবে দাপুটে বোলিং করেছেন তিনি। আরেক পেসার মুস্তাফিজুর রহমানও ১ উইকেট পেয়েছেন।

ব্যাট হাতে ক্যাপ্টেন নাজমুল হোসেন শান্তর ৪২ বলে খেলা অপরাজিত ৫১ রানের ইনিংসটাও ছিল দুর্দান্ত। এনামুল হক বিজয়ের ৩৩ বলে খেলা ৩৭ রানের ইনিংসেও আত্মবিশ্বাসের ছাপ। শেষ ম্যাচে ব্যাটিং, বোলিং কিংবা ফিল্ডিং- তিন বিভাগেই টাইগারদের এমন আগ্রাসি মনোভাব নিঃসন্দেহে টি-২০ সিরিজে বাড়তি সাহস হিসেবে কাজ করবে!

সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি, বিশ্বকাপে হতাশার তলানিতে পৌঁছে যাওয়া দলটি ঐতিহাসিক এক জয়েই আত্মবিশ্বাসের তুঙ্গে পৌঁছে গেল।

 

সর্বশেষ খবর