শুক্রবার, ২৯ ডিসেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

বাংলাদেশের স্বস্তি, কিংসের চারে চার

মনোয়ার হক

বাংলাদেশের স্বস্তি, কিংসের চারে চার

ফুটবলে হারই যেন সঙ্গী হয়ে পড়েছিল। কয়েক বছর ধরে জাতীয় দলের মান এতই নিচে নেমে গিয়েছিল যে, ড্র করাটাও স্বপ্নে পরিণত হয়েছিল। এমন ভরাডুবিতে দর্শকরাও ফুটবল থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন। অনেকে ক্ষুব্ধ হয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জাতীয় দলকে ম্যাচের বাইরে রাখতে অনুরোধ রাখেন। কোচ আসছেন আর যাচ্ছেন। তবু জামাল ভূঁইয়ারা ব্যর্থতার বৃত্তে বন্দি। এতটা খারাপ অবস্থা, ফুটবলে যেন লাথি মারতেই ভুলে গেছেন। সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে ঘুরে ফিরে একই দৃশ্য দেখা যাচ্ছিল। গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায়। সেমিফাইনাল খেলার স্বপ্ন কোনোভাবেই পূরণ হচ্ছিল না।

যাক, হতাশা ও তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যে বন্দি জাতীয় দল অনেক দিন পর স্বস্তি দেওয়ার মতো পারফরম্যান্স প্রদর্শন করেছে। ২০২৩ সালে কোনো ট্রফি জেতা হয়নি। তারপরও ফুটবলারদের নৈপুণ্য চোখে পড়ার মতো ছিল। ফুটবলাররা ভালো খেলেছেন বলেই প্রশংসা পাচ্ছেন। কিন্তু এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ করতে হয় স্প্যানিশ কোচ হাভিয়ের কাবরেরার নাম। জেমি ডে দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়ার পর কাবরেরাকে যখন কোচের দায়িত্ব দেওয়া হলো, ক্রীড়াঙ্গনে সমালোচনার ঝড় বয়ে যায়। অবশ্য তা ছিল যুক্তিসঙ্গত। তিনি কোনো দেশ তো দূরের কথা ক্লাবেরই কোচ ছিলেন না। তাকে বাংলাদেশের কোচ করাটা হাস্যকরই ছিল।

সেই কোচের হাত ধরে বাংলাদেশের ফুটবলের চেহারা বদলাতে শুরু করেছে। যে খেলোয়াড়রা ৬০ মিনিট খেললেই দম ফেল করতেন, তারা এখন গতিময় ফুটবল খেলছেন। টেকনিকেও যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে। জামাল ভূঁইয়াদের রুগ্নরূপ অকেটাই বদলে গেছে তার কোচিংয়ে। কাবরেরা সফল না ব্যর্থ তা ২০২৩ সালে পরিসংখ্যানটাই বলে দিচ্ছে। সব মিলিয়ে ১৫টি ম্যাচ খেলেছে জাতীয় দল। এর মধ্যে ৬ জয়, ৫ ড্র ও ৪টি হার। কত বছর আগে এমন স্মার্ট ফুটবল খেলেছে!

সাফ চ্যাম্পিয়নশিপেও নতুন রূপ। মালদ্বীপকে হারিয়েছে ২০ বছর পর। ভুটানকেও দাঁড়াতে দেয়নি লাল-সবুজরা। গ্রুপে লেবাননের কাছে হারলেও বাংলাদেশের পারফরম্যান্স ছিল প্রশংসনীয়। ২০০৯ সালের পর সেমিফাইনাল খেলেছে। দুর্ভাগ্যক্রমে কুয়েতের কাছে ০-১ গোলে হেরে ফাইনাল খেলতে পারেনি জামালরা। বিশ্বকাপ বাছাই পর্ব প্লে অফ ম্যাচে মালেতে মালদ্বীপের বিপক্ষে ড্র করলেও বসুন্ধরা কিংস অ্যারিনায় জয় পেয়ে পরবর্তী রাউন্ডে জায়গা করে নিয়েছে। মেলবোর্নে অস্ট্রেলিয়ার কাছে শোচনীয় হার মানলেও কিংস অ্যারিনায় দারুণ খেলে লেবাননের বিপক্ষে ড্র করেছে। ঘরের মাঠে শক্তিশালী আফগানিস্তানের বিপক্ষে দুটি প্রীতি ম্যাচে ড্র করেছে। রাকিব, মোরসালিন, হৃদয়, বিশ্বনাথ, ফাহিমরা দুর্দান্ত খেলেছেন। গোলরক্ষক আনিসুর রহমান জিকো তো সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে সেরা গোলরক্ষকের পুরস্কার পেয়েছেন। জাতীয় দল ভালো করায় কাবরেরার সঙ্গে চুক্তির মেয়াদও বাড়িয়েছে বাফুফে। মেয়েরাও কম যাননি, সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে দুটি প্রীতি ম্যাচে জয় পেয়েছে। প্রথমটি ৩-০, পরেরটা ৮-০।

আসা যাক ঘরোয়া ফুটবলে। এখানে ঘুরে ফিরে বসুন্ধরা কিংসের নাম আসবে। অভিষেকের টানা চার লিগে চারবার চ্যাম্পিয়ন হয়ে ৭৫ বছরে ঘরোয়া ফুটবলে নতুন ইতিহাস গড়েছে। স্বাধীনতা কাপেও শিরোপা উঠেছিল তাদের। বছরের শেষ ট্রফিটাও আসে স্বাধীনতা কাপে চ্যাম্পিয়নের মাধ্যমে। ২০২৩ সালে লোকাল ফুটবলে আরেকটি বড় ঘটনা হচ্ছে, আবাহনীকে হারিয়ে ১৪ বছর পর ফেডারেশন কাপে মোহামেডানের শিরোপা জেতা।

বাংলাদেশের প্রথম দল হিসেবে এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ খেলেছে বসুন্ধরা কিংস। আক্ষেপ এএফসি কাপ ঘিরে। ভারত খ্যাত মোহনবাগান ও মালদ্বীপের মার্জিয়াকে হারানোর পর ওড়িশার বিপক্ষে হেরে গেছে রেফারির পক্ষপাতিত্বে।

সর্বশেষ খবর