শনিবার, ৩০ ডিসেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

বিদেশিমুক্ত ঘরোয়া ফুটবল

পেশাদার লিগ, ফেডারেশন ও স্বাধীনতা কাপ মূলত তিন আসরই হচ্ছে। আরেকটি নতুন টুর্নামেন্ট করার চিন্তাভাবনা রয়েছে। আর তা হবে শুধু স্থানীয় বা লোকালদের নিয়ে। যাকে বলা হবে বিদেশিমুক্ত ফুটবল।

ক্রীড়া প্রতিবেদক

বিদেশিমুক্ত ঘরোয়া ফুটবল

অভিযোগ বা আক্ষেপটা নতুন নয়। বিদেশি ফুটবলারদের ঘিরেই মূলত এ আক্ষেপ। ১৯৭৪ সালে ঘরোয়া ফুটবলে প্রথম বিদেশি খেলোয়াড় অংশগ্রহণ করেন ঐতিহ্যবাহী ঢাকা মোহামেডানে। ভারতের প্রসাদ ও মিশ্র নামে দুজন ঢাকা প্রথম বিভাগ লিগে কয়েকটি ম্যাচ খেলেন। এরপর আবাহনী উড়িয়ে আনে শ্রীলঙ্কার দুই ফুটবলার মাহিন্দ পালা ও পাকির আলিকে। এর পর থেকে সব ক্লাবে কমবেশি বিদেশি খেলছেন। ২০০৭ সালে পেশাদার লিগ মাঠে গড়ানোর পর তো বিদেশি ফুটবলারের ছড়াছড়ি। প্রথম দিকে তিনজন করে খেললেও গত কয়েক বছর চারজন করে বিদেশি খেলছেন প্রতিটি ক্লাবে। ১০ দল হলে ৪০ জন বিদেশিকে মাঠে দেখা যায়। ফুটবলপ্রেমীদের আক্ষেপটা এখানেই। এতজন বিদেশির ভিড়ে স্থানীয়রা তো হারিয়ে যাচ্ছেন। অতিরিক্ত বিদেশিনির্ভরে বঞ্চিত হচ্ছেন লোকাল ফুটবলাররা। যোগ্যতা থাকার পরও রিজার্ভ বেঞ্চে বসে থাকতে হচ্ছে তাদের।

এ ব্যাপারে অবশ্য ভিন্নমতও আছে। দেশের দুই সাবেক তারকা ফুটবলার শেখ মো. আসলাম ও কায়সার হামিদ বলেন, ‘সারা বিশ্বেই লিগে বিদেশি ফুটবলাররা অংশ নেন। মেসি ও রোনালদোদের মতো বিখ্যাত ফুটবলার নিজের দেশ ছেড়ে অন্য লিগে খেলছেন। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে মানসম্পন্ন বিদেশিরা খেললে ক্ষতির চেয়ে লাভই বেশি দেখছি। বিদেশিদের কৌশল দেখে স্থানীয়দের শেখার অনেক কিছু আছে।’ কায়সার হামিদ বলেন, ‘মোহামেডানে নানজেগার, বিজন তাহেরি ও এমেকার মতো ভালো মানের বিদেশি খেলার পরও স্থানীয়রাও সুযোগ পেয়েছেন। এখানে ভালো করতেই হবে এ জেদটা বেড়ে যায়। সমস্যাটা হচ্ছে পেশাদার লিগে চার-পাঁচটি ক্লাব ছাড়া বিদেশিদের মান খুবই নিচু। এখানে স্থানীয়দের বসিয়ে রাখাটা দুঃখজনক।’ পেশাদার লিগে অতিরিক্ত বিদেশি খেলায় এর প্রভাব নাকি জাতীয় দলে পড়ছে। লিগে নিয়মিত সুযোগ না পাওয়ায় আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ভালো করতে পারেন না খেলোয়াড়রা। নিজেদের মধ্যে সমন্বয়ও থাকে না। সৌন্দর্য ও গুরুত্বের কারণে লিগে তো আর বিদেশি ফুটবলার বন্ধ করা যাবে না। তাই বাফুফে সহসভাপতি ও লিগ কমিটির চেয়ারম্যান দেশবরেণ্য সংগঠক ইমরুল হাসান বিকল্প চিন্তা করছেন। তিনি বলেন, ‘পেশাদার লিগ, ফেডারেশন ও স্বাধীনতা কাপ মূলত তিন আসরই হচ্ছে। আরেকটি নতুন টুর্নামেন্ট করার চিন্তাভাবনা রয়েছে। আর তা হবে শুধু স্থানীয় বা লোকালদের নিয়ে। যাকে বলা হবে বিদেশিমুক্ত ফুটবল। অনেকেই আমাকে এমন পরামর্শ দিয়েছেন। পরিকল্পনা আছে, তবে এর বাস্তবায়ন করতে বাফুফের নির্বাহী কমিটির অনুমতি লাগবে। যদি অনুমতি মেলে আশা করি আগামী মৌসুমেই তা করব। আমার বিশ্বাস এ টুর্নামেন্ট শুরু করা গেলে ফুটবলে নতুনত্ব আসবে। পেশাদার লিগের দল ছাড়াও ঢাকার বাইরের ক্লাবগুলোর জন্য দরজা উন্মুক্ত থাকবে। স্থানীয়দের প্রকৃত মান এখানে ধরা পড়বে।’ ভারতে ডুরান্ড কাপে একবার বিদেশি নিষিদ্ধ করা হলে মোহনবাগান ও ইস্টবেঙ্গলের আপত্তির কারণে তা পরে বাতিল হয়ে যায়। সাবেক ফুটবলার জাহিদ হোসেন এমিলি বলেন, ‘আমি চাই ইমরুল ভাইয়ের এ উদ্যোগ বস্তবায়ন হোক। এতে ফুটবলে একঘেয়েমি দূর হবে। তৈরি হবে প্রতিভাবান খেলোয়াড়। স্থানীয়দের মান যাচাইয়ের জন্য এ উদ্যোগ সময়োপযোগী।’

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর