বুধবার, ৩ জানুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

পেশাদার যুগে অপেশাদার আচরণ ফুটবলে

ক্রীড়া প্রতিবেদক

পেশাদার যুগে অপেশাদার আচরণ ফুটবলে

১৯৪৮ সাল থেকে ঘরোয়া ফুটবল শুরু হওয়া লিগে সর্বোচ্চ ১৯ বার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ঢাকা মোহামেডান। ঢাকা আবাহনী ১৭, ওয়ান্ডারার্স ৬ ও বিজেএমসি ৫ বার। পূর্ব পাকিস্তান আমলে এই অফিস দল ইপিআইডিসি নামে পরিচিত ছিল। স্বাধীনতার পর প্রথমে বিজেআইসি পরে বিজেএমসি নামকরণ করা হয়। লিগ জয়ের দিক দিয়ে বিজেএমসির অবস্থান এখনো চতুর্থ স্থানে। অথচ বছর তিনেক আগে শুধু ফুটবল নয়, ক্রীড়াঙ্গন থেকে নিজেদের পুরোপুরি গুটিয়ে নিয়েছে। ফুটবলে সাইফ স্পোর্টিংয়ের আগমন বেশি দিনের নয়। ট্রফি জেতা সম্ভব না হলেও শক্তিশালী দল গড়ে আলোড়ন তুলেছিল। হাতেগোনা যে ৪/৫ টি ক্লাব পেশাদার লিগে বিগ বাজেটে দল গড়ত তাদের মধ্যে সাইফ ছিল অন্যতম। রেলিগেটেড হয়নি, হঠাৎ করে ক্লাব কর্তৃপক্ষ ঘোষণা দেয় তারা আর প্রফেশনাল লিগে খেলবে না।

কী কারণে সাইফ লিগ থেকে নাম প্রত্যাহার করে নিল তা এখনো রহস্যময়।

আসা যাক মুক্তিযোদ্ধা ক্রীড়া সংসদ প্রসঙ্গে। ১৯৮৪ সালে দ্বিতীয় বিভাগে চ্যাম্পিয়ন হয়ে তারা প্রথম বিভাগ লিগ খেলার যোগ্যতা অর্জন করে। মুক্তিযোদ্ধা গড়ার পেছনে বড় ভূমিকা রাখেন স্বাধীন বাংলা দলের অধিনায়ক জাকারিয়া পিন্টু ও প্রয়াত সংগঠক আরশাদ আলী মঙ্গল। প্রথম ১০ বছর মাঝারি মানের দল গড়লেও ১৯৯৪ সাল থেকে শক্তিশালী রূপ ধারণ করে তারা। সেবার দেশের অধিকাংশ তারকা ফুটবলার মুক্তিযোদ্ধায় যোগ দেন। ম্যানেজার ছিলেন অভিজ্ঞ সংগঠক মনজুর কাদের ও কোচ ছিলেন কাজী সালাউদ্দিন। এরপর থেকে বিগ বাজেটের দলে পরিণত হয়। মোহামেডান-আবাহনীর দাপট ভেঙে ১৯৯৭-৯৮ মৌসুমে প্রথম লিগ চ্যাম্পিয়ন হয় মুক্তিযোদ্ধা। শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে মোহামেডানকে ২-০ গোলে পরাজিত করেছিল। এরপর আরও একবার চ্যাম্পিয়ন হয় তারা। ফেডারেশন কাপ, স্বাধীনতা কাপ ও জাতীয় লিগেও চ্যাম্পিয়ন হওয়ার কৃতিত্ব রয়েছে। এ দলে খেলে অনেকেই তারকার খ্যাতি পেয়েছেন। শিরোপা জয়ের পেছনে কোচ শফিকুল ইসলাম মানিকের যেমন অবদান রয়েছে। তেমনি প্রয়াত কোচ ওয়াজেদ গাজীর নাম স্মরণীয় হয়ে থাকবে। গেলবার পেশাদার লিগ থেকে নেমে যায় মুক্তিযোদ্ধা। এ নিয়ে ফুটবলপ্রেমীদের আফসোস ছিল চোখে পড়ার মতো। রেলিগেটেড হওয়াটা লিগের অংশ। ঢাকা মোহামেডানের মতো দলও একবার দ্বিতীয় বিভাগে নেমে গিয়েছিল। কিন্তু কেন জানি রেলিগেশন নিশ্চিত হওয়ার পর দলীয় ম্যানেজার বলেছিলেন, ‘আমরা (মুক্তিযোদ্ধা) সামনে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ নাও খেলতে পারি।’ শেষ পর্যন্ত তাই সত্যি হয়েছে। আসছে পেশাদার লিগের দ্বিতীয় স্তরের আসর চ্যাম্পিয়ন্স লিগ খেলতে নাম নিবন্ধন করেনি তারা। কারণ হিসেবে মূলত অর্থ সংকটের বিষয়টি তুলে ধরেছে। প্রশ্ন হচ্ছে যিনি মুখপাত্র হিসেবে কারণ ব্যাখ্যা দিয়েছেন তিনি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি নিয়ে কথা বলার মতো যোগ্যতা রাখেন কি না। যেহেতু মুক্তিযুদ্ধের আবেগকে গুরুত্ব দিয়ে মুক্তিযোদ্ধা দল গড়া হয়েছিল। সেখানে গ্রহণযোগ্য এমন কেউ বিষয়টি নিয়ে কথা বলা উচিত ছিল। সত্যি কি এমন সময় তারা না খেলার ঘোষণা দিয়েছে সেখানে দল বাড়াবে লিগ কমিটির উপায়ও নেয়। বাংলাদেশে ফুটবলে পেশাদারিত্ব চলছে। অথচ ক্লাবগুলোর অপেশাদার আচরণ। হঠাৎ ঘোষণা দেবে খেলবে না এই যদি হয় মানসিকতা, তাহলে পেশাদার ফুটবলে তারা নাম লিখিয়েছিল কেন?

সর্বশেষ খবর