শনিবার, ২৭ জানুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

ব্যাটিং স্বর্গেও হাসেনি রাইডার্সের ব্যাট

সিলেটের উইকেট মিরপুরের উইকেটের মতো ট্রিকি নয়! অনেকটা স্পোর্টিং উইকেট। এখানে পেসার, স্পিনার কিংবা ব্যাটসম্যান- সবার জন্যই সমান সুবিধা। তাই খুলনাকে ১৬০ রানে আটকে দিয়ে রাইডার্স বোলাররা নিজেদের কাজটা ঠিকঠাকই করেছিলেন। কিন্তু পারলেন না ব্যাটসম্যানরা।

মেজবাহ্-উল-হক, সিলেট থেকে

ব্যাটিং স্বর্গেও হাসেনি রাইডার্সের ব্যাট

একে তো একাদশের নয়জনই টি-২০এর ‘পরীক্ষিত’ ব্যাটসম্যান, তার ওপর সিলেটের স্পোর্টিং উইকেট- কিন্তু এমন ব্যাটিং স্বর্গেও হাসল না রংপুর রাইডার্সের ব্যাট! গতকাল খুলনা টাইগার্সের দেওয়া ১৬১ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে ১৩২ রানেই অলআউট উত্তরাঞ্চলের দলটি।

২৮ রানের দারুণ একটি জয় পেল খুলনা। টাইগার্স এখন তিনে তিন। টানা তিন ম্যাচ জিতে পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে নিজেদের অবস্থান শক্ত করছে এনামুল হক বিজয়ের দল। বল হাতে মাত্র ১৬ রানে ৪ উইকেট এবং ব্যাট হাতে ৩৩ বলে ৪০ রানের ইনিংস খেলে ম্যাচসেরা খুলনার লঙ্কান তারকা দানুশ সানাকা। ব্যাটিং সেরা পারফরমার অবশ্যই মোহাম্মদ নেওয়াজ। তার মাত্র ৩৪ বলে খেলা ৫৫ রানের টর্নেডো ইনিংসই তো টাইগার্সকে এনে দেয় ১৬০ রানের চ্যালেঞ্জিং স্কোর।

তিন ম্যাচে রংপুর রাইডার্সের এটি দ্বিতীয় হার। মাঝে এক ম্যাচে বাবর আজমের ক্যারিশমায় জয় পায় ঠিকই, কিন্তু তিন ম্যাচেই রংপুরের ব্যাটিং ছিল নড়বড়ে। অথচ এই আসরে কাগজে-কলমে সবচেয়ে শক্তিশালী ব্যাটিং লাইনআপ রাইডার্সের। তারপরও কেন এমন হচ্ছে, সমস্যাটা পুরোপুরি ধরতে পারছেন না কোচ সোহেল ইসলামও। গতকাল তিনি বললেন, ‘আগের দুই ম্যাচের প্রভাবটা এ ম্যাচেও পড়েছে। তবে এখান থেকে দ্রুত ওভারকাম করতে হবে। কীভাবে ভালো করা যায় তা নিয়ে আমরা আলোচনা করছি।’

সিলেটের উইকেট মিরপুরের উইকেটের মতো ট্রিকি নয়! অনেকটা স্পোর্টিং উইকেট। এখানে পেসার, স্পিনার কিংবা ব্যাটসম্যান- সবার জন্যই সমান সুবিধা। তাই খুলনাকে ১৬০ রানে আটকে দিয়ে রাইডার্স বোলাররা নিজেদের কাজটা ঠিকঠাকই করেছিলেন। কিন্তু পারলেন না ব্যাটসম্যানরা। বড় স্কোর তাড়া করতে যেভাবে শুরু করতে হয়, তা পারেনি রংপুর।

পাওয়ার প্লেতে খুলনা যেখানে ৪১ রান করে সেখানে রংপুরের সংগ্রহ মাত্র ২১! এখানেই দুই দলের ব্যবধান তৈরি হয়ে যায়। উইকেট ধরে রাখতে পারলে তবু একটা সম্ভাবনা তৈরির পথ থাকে, কিন্তু গতকাল সেটিও পারেনি রাইডার্স। নিয়মিত বিরতিতে উইকেট পতন হতে থাকে।

প্রথম দুই ওভারে দুই বিদেশি বাবর আজম ও ব্রেন্ডন কিং আউট হওয়ার পর বড় ধাক্কা খায় উত্তরাঞ্চলের দলটি। এরপর চার নম্বরে ব্যাট হাতে নেমে শামীম পাটোয়ারী এক প্রান্তে ঝড় তুললেও আরেক প্রান্তে ব্যাট করা উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান রনি তালুকদারের ব্যাটিং ছিল খুবই ধীরগতির। জয়ের জন্য দলের রানরেট যখন হু হু করে বাড়ছে তখন রনি যেন আরও খোলসবন্দি হয়ে পড়ছিলেন। শেষ পর্যন্ত শট বলে একটি ‘আনারি’ মার দিয়ে আউট হওয়ার আগে ২৫ বল থেকে করেন মাত্র ১৫ রান। ১৬১ রানের বিশাল টার্গেট তাড়া করা দলের ওপেনার ম্যাচের দশম ওভার পর্যন্ত ব্যাটিং করলেন মাত্র ৬০ স্ট্রাইক রেটে!

রংপুরের ব্যাটিং পাওয়ার প্লের ৩০ বলের মধ্যে রনি তালুকদার একাই মোকাবিলা করেছেন ১৭ বল (রান করেছেন মাত্র ৯)! ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে কোচ সোহেল অকপটে বললেন, ‘আমরা পাওয়ার প্লেতেই ম্যাচে হেরে গেছি।’

টি-২০তে যে কোনো সময় ম্যাচের ভাগ্য বদলে দেওয়া সম্ভব! ধীরগতির শুরুর পর জয়ের জন্য মাঝে ঝড়ো গতির ব্যাটিং প্রয়োজন ছিল! কিন্তু আগের ম্যাচে দারুণ একটি ইনিংস খেলা আজমতুল্লাহ ওমরজাই এ ম্যাচে ব্যর্থ। এমন দিনে রানআউটের ফাঁদে পড়লেন ক্যাপ্টেন নুরুল হাসান সোহান। আগের দিন সন্ধ্যায় দলের সঙ্গে যোগ দেওয়া সাকিব আল হাসান বল হাতে দাপট দেখালেও ব্যাট হাতে পারলেন না। তবে প্রতিপক্ষের ভীত কাঁপিয়ে দিয়েছিলেন মোহাম্মদ নবী। শেষ দিকে রীতিমতো ঝড় তুলেছিলেন। মাত্র ২৮ বলে ফিফটিও ছুঁয়ে ফেললেন। তাকে দারুণ সঙ্গ দিলেন ৯ নম্বরে ব্যাট হাতে নামা শেখ মেহেদী হাসান। কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না। ১২ রান করে মেহেদী আউট, বেশি আক্রমণাত্মক হতে গিয়ে নবীর উইকেট পতন। তবে এই ম্যাচে হারের পর যেন ভুল শোধরানোরও সময় নেই। আজ রংপুরের সামনে আরেকটি বড় ম্যাচ। প্রতিপক্ষ দুর্দান্ত ঢাকা।

কোচের আশা, আগের তিন ম্যাচের কথা ভুলে এখান থেকেই দুর্বার গতিতে শুরু হোক রাইডার্সের যাত্রা!

সর্বশেষ খবর