রবিবার, ২৮ জানুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

আগ্রাসি জয়ে ছন্দে রাইডার্স

মেজবাহ্-উল-হক, সিলেট থেকে

আগ্রাসি জয়ে ছন্দে রাইডার্স

সিলেটের সবুজ গালিচায় আগ্রাসী জয় পেল রংপুর রাইডার্স। গতকাল দুর্দান্ত ঢাকাকে উড়িয়ে দিয়ে ছন্দে ফিরল উত্তরাঞ্চলের দলটি। মোসাদ্দেক-তাসকিন-শরিফুলদের দলকে ৭৯ রানের বিশাল ব্যবধানে হারাল সাকিব-সোহান-বাবররা।

এ ম্যাচেই রানখরা কেটে গেল রংপুর রাইডার্সের। ক্যারিশমেটিক ব্যাটিং শৈলী প্রদর্শন করে গতকাল ১৮৩ রানের বড় স্কোর গড়ে রংপুর। ১৮৪ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে ঢাকা ১০৯ রানেই আটকে যায়।

গতকাল রাইডার্সের ব্যাটিংয়ে ছিল দলীয় সমন্বয়ের দারুণ নিদর্শন। ফিফটি মাত্র একটি, তারপরও দলীয় স্কোর ২২-এর কাছাকাছি। সর্বোচ্চ ৬২ রান এসেছে পাকিস্তানি তারকা বাবর আজমের ব্যাট থেকে। এ ছাড়া আজমতুল্লাহ ওমরজাই ৩২, ক্যাপ্টেন নুরুল হাসান সোহান ২৬, ব্রেন্ডন কিং ২০, শামীম পাটওয়ারী ১৭। ছোট ছোট স্কোরগুলোই রংপুরকে এনে দেয় বড় সংগ্রহ।

গতকাল ওপেনিং জুটিতে পরিবর্তন এনেই যেন আমূল বদলে গেল রংপুরের ব্যাটিং। ধারাবাহিকভাবে ব্যর্থ হওয়ায় রনি তালুকদারকে তিনে নামিয়ে আনা হয়। বাবরের সঙ্গে ইনিংস ওপেন করেন কিং। আগের তিন ম্যাচে ০, ০, ১ রান করা ক্যারিবীয় তারকা কিং এ ম্যাচে বাইশগজে গিয়েই ঝড় তোলেন। যদিও তিনি উইকেটে লম্বা সময় থিতু হতে পারেননি। তবে তার ১৩ বলে ২০ রানের ছোট্ট ইনিংসটিই যেন পাওয়ার প্লেতে ভুগতে থাকা রংপুরকে দারুণ একটা মোমেন্টাম এনে দেয়। আর শুরুর এই ছন্দই শেষ পর্যন্ত ধরে রাখে রাইডার্স।

রংপুরের বড় সমস্যা ছিল পাওয়ার প্লেতে সুবিধা করতে না পারা। আগের তিন ম্যাচে প্রথম ছয় ওভারে রংপুরের রান ছিল যথাক্রমে ৩৭/৪ (ফরচুন বরিশালের বিরুদ্ধে), ৩৭/৩ (সিলেট স্ট্রাইকার্সের বিরুদ্ধে) এবং ২১/২ (খুলনা টাইগার্সের বিরুদ্ধে)। তবে গতকাল পাওয়ার প্লেতে আসে ৪৭ রান।

এ ম্যাচেও বাবর ছিলেন নির্ভারতার প্রতীক হয়ে। একপ্রান্তে উইকেট পড়তে থাকলেও আরেকপ্রান্ত আগলে রেখে তিনি পরিস্থিতি সামলে নিয়েছেন। পাকিস্তানের সাবেক এই অধিনায়ক বাইশগজে এতটাই সতর্ক ছিলেন যে, তাকে বড় শট খেলতেই দেখা যায়নি। তার ৬২ রানের ইনিংসে ছক্কা মাত্র একটি, চারও মাত্র পাঁচটি। তারপরও নিয়মিত সিঙ্গেল ও ডাবলস নিয়ে রানের গতিকে দারুণভাবে সচল রেখেছিলেন। ব্যাটিং করেছেন ১৩৫ স্ট্রাইকরেটে। ম্যাচে সেরা হন তিনি। যদিও সিঙ্গেলসের এই মাস্টার ব্যাটসম্যান ৩১ রানে একবার নতুন জীবন পেয়েছেন। ঢাকার পেসার শরিফুলের বলে ডিপ স্কোয়ার লেগের ফিল্ডার ক্যাচ ফেলে দিয়েছেন। তবে সুযোগটা দারুণ কাজে লাগিয়েছেন। তিন ম্যাচে দ্বিতীয় হাফ সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন।

আফগান অলরাউন্ডার আজমতুল্লাহ ওমরজাই এ ম্যাচেও তার ক্লাস দেখিয়ে দিয়েছেন। ব্যাট হাতে মাত্র ১৫ বলে ৩২ রান করার পর বল হাতে ছিলেন দুর্দান্ত। শুরুতেই উইকেট নিয়ে ঢাকাকে কাল বড় ধাক্কা দিয়েছেন তো তিনিই। পাওয়ার প্লেতে তিন ওভারের অসাধারণ এক স্পেল করেন। টানা ১৮টি ডেলিভারির মধ্যে ১২টি-ই দিয়েছেন ডট। তিন ওভারে মাত্র ১৪ রান দিয়ে দুই উইকেট। ঢাকার দুই বিদেশি টপ অর্ডার লঙ্কান দানুশ গুনাথিলাকা ও পাকিস্তানি সাইম আইয়ুবকে দ্রুতই ফিরিয়ে দিয়েছেন। এরপর আর ম্যাচে ফিরতে পারেনি ঢাকা।

অসাধারণ বোলিং করেছেন শেখ মেহেদী হাসান। মাত্র ১১ রান দিয়ে নিয়েছেন ৩ উইকেট। আফগান তারকা মোহাম্মদ নবী কাল ব্যাট হাতে সুবিধা করতে না পারলেও বল হাতে তা পুষিয়ে দিয়েছেন। 

এ ম্যাচে একাদশে থাকলেও ব্যাট হাতে নামতে দেখা যায়নি বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানকে। তবে বল হাতে ২৩ রানে ১ উইকেট নিয়েছেন। বল হাতে দুই উইকেট নিয়েছেন হাসান মাহমুদ।

তবে এমন ম্যাচেও ছন্দে ফিরতে পারেননি টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান রনি তালুকদার। আগের তিন ম্যাচের মতো (৫, ৬, ১৫)  এ ম্যাচেও তার ব্যাট হাসেনি। মাত্র ১২ রানেই ফিরে যান ড্রেসিংরুমে। তবে ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সে অম্লমধুর চিত্র দেখা গেলেও দল হিসেবে সিলেটে কাল রংপুর রাইডার্স ছিল ১০০তে ১০০- এমন আগ্রাসী জয়ই তার প্রমাণ।

সর্বশেষ খবর