শিরোনাম
মঙ্গলবার, ৩০ জানুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

অনুশীলনে অন্য সাকিব

মেজবাহ্-উল-হক, সিলেট থেকে

অনুশীলনে অন্য সাকিব

কোচ সোহেল ইসলাম ও মোহাম্মদ সালাউদ্দীনের সঙ্গে খোশমেজাজে সাকিব

ঘড়ির কাঁটায় তখন ৩টা বেজে ৩০ মিনিট। ঘণ্টা দেড়েক আগেই শেষ হয়ে গেছে রংপুর রাইডার্সের ক্রিকেটারদের আনুষ্ঠানিক অনুশীলন। গতকাল দুপুর ১২টায় প্র্যাকটিস শুরু করে ২টার সময় টিমবাসে উঠে চলে যান রাইডার্সের ক্রিকেটাররা। কিন্তু সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামের ২ নম্বর মাঠের নেটে ব্যাটিং একাগ্র চিত্তে অনুশীলন করেই যাচ্ছিলেন সাকিব আল হাসান।

শিডিউল অনুযায়ী বেলা ২টায় শুরু করা কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের অনুশীলনও তখন প্রায় শেষ দিকে। এমন সময় সাকিব তার অনুশীলন শেষ করলেন। নেট থেকে ফেরার পথেই কয়েক মুহূর্ত কথোপকথন হলো ভিক্টোরিয়ান্স পেসার মুস্তাফিজুর রহমানের সঙ্গে। ব্যাট দেখিয়ে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার কিছু একটা বললেন, তা শুনে হাসিতে ফেটে পড়লেন কাটার মাস্টার। হয়তো হাসতে হাসতে আজকের ম্যাচের চ্যালেঞ্জটা জানিয়ে দিয়েছিলেন। রানে ফিরতে হলে যে আজ কাটার মাস্টারের বিরুদ্ধেই বাইশগজে লড়াই করতে হবে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারকে। লম্বা সময় অনুশীলন করার পর মাঠের এক কোণে এসে বসে পড়লেন সাকিব, যেখানে আগে থেকে বসে অপেক্ষা করছিলেন রাইডার্স কোচ সোহেল ইসলাম। কয়েক মিনিট পরেই সাকিব ও কোচ সোহেলের আলোচনার মাঝে যোগ দিলেন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দীন।

আজ বিপিএলের হাইভোল্টেজ ম্যাচে রংপুর রাইডার্স ও কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স মুখোমুখি। আগুনে লড়াই। কিন্তু গতকাল প্রতিপক্ষ দুই দলের কোচ যেন লড়াইয়ের বিষয়টি ক্ষণিকের জন্য দূরে সরিয়ে দিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন সাকিবকে নিয়ে। সালাউদ্দীন হাত নাড়িয়ে মিনিট দশেক সাকিবকে টিপস দিলেন।

আজকের ম্যাচে সালাউদ্দীন প্রতিপক্ষ দলের কোচ হলেও ঠিক কাল বিকালের ওই মুহূর্তে তিনি যেন কেবলই সাকিবের গুরু। প্রিয় শিষ্য চোখের সমস্যায় ভুগছেন। শেষ ম্যাচে রাইডার্সের ব্যাটিংয়েও দেখা যায়নি বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারকে। তারও আগের ম্যাচে যদিও ব্যাট হাতে নেমে ছিলেন, সেটাও আট নম্বরে। ব্যাটিং অর্ডারের অচেনা পজিশনে নেমে সুবিধা করতে পারেননি। মাত্র দুই রান করেছিলেন। রান খরায় ভুগতে থাকা শিষ্য সাকিবকে নিয়ে গভীর আলোচনায় মগ্ন হয়ে পড়েন গুরু সালাউদ্দীন! প্রায় মিনিট দশেক চলে তাদের কথোপকথন।

কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দীন ও সাকিব আল হাসানের ‘গুরু-শিষ্য’ যে রসায়ন তা তো আর বাংলার ক্রিকেটপ্রেমীদের অজানা নয়। ২০১৯ সালে আইপিএলে সানরাইজার্স হায়দরাবাদে খেলার সময় সাকিবের ব্যাট যখন হাসছিল না তখন ফ্র্যাঞ্চাইজির বাঘা বাঘা কোচ থাকা সত্ত্বেও বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার এই সালাউদ্দীনের টিপস নিতে বাংলাদেশে এসেছিলেন। তারপর ভারতে ফিরে গিয়ে পারফরম্যান্স খরাও কাটিয়েছিলেন দারুণভাবে। যখনই খারাপ সময় এসে হাজির হয় তখনই গুরুর শরণাপন্ন হন সাকিব। কোচ সালাউদ্দীনের টিপস যে সাকিবের জন্য বিশেষ কিছু তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

একটা কথা চালু আছে সাকিব অনুশীলন করেন কম, কিন্তু পারফর্ম করেন দুর্দান্ত। কিন্তু সিলেটে এসে দেখা যাচ্ছে অন্য এক সাকিবকে। দলের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক অনুশীলনের বাইরেও ব্যাট হাতে ঘণ্টার পর পর ঘণ্টা নেটে কাটিয়ে দিচ্ছেন। বিপিএলের সবচেয়ে সফল ক্রিকেটার, অথচ এবার অনেকটাই ম্লান। চেনা রূপে এখনো দেখা যাচ্ছে না। এই বিষয়টা হয়তো সাকিব নিজেও মেনে নিতে পারছেন না!

মাঠের বাইরে যে ঘটনাই ঘটুক না কেন বাইশগজে সাকিব সবসময়ই সেরা! তার মাঠের পারফরম্যান্স নিয়ে কখনোই প্রশ্ন করার সুযোগ নেই। সাকিব মাঠে নামবেন কিন্তু ম্যাচে তার বড় ভূমিকা থাকবে না- তা হতেই পারে! কিন্তু শেষ দুই ম্যাচে যে সাকিবকে দেখা গেছে এই সাকিবকে হয়তো বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার নিজেই চিনতে পারছেন না! সে কারণেই হয়তো এমন বাড়তি তাড়না!

সাকিব বিশ্রাম চাইলে নিতেই পারেন! কিন্তু তিনি যে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার! মোটেও হার মানার পাত্র নন! একাদশে থাকলে হয়তো আজ কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের বিরুদ্ধে দেখা যেতে পারে সাকিবকে তার সেরা ফর্মে!

সর্বশেষ খবর