বুধবার, ৩১ জানুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

আফগান এক্সপ্রেসে ছুটছে রাইডার্স

আফগান এক্সপ্রেসেই যেন ছুটছে রংপুর রাইডার্স। আফগানিস্তানের দুই তারকা অলরাউন্ডারই দারুণ ধারাবাহিক। রংপুরের প্রথম জয়ে ম্যাচসেরা ওমরজাই। দ্বিতীয় জয়েও ছিল তার ক্যারিশমেটিক পারফরম্যান্স

মেজবাহ্-উল-হক, সিলেট থেকে

আফগান এক্সপ্রেসে ছুটছে রাইডার্স

যেমন আজমতুল্লাহ ওমরজাই, তেমন মোহাম্মদ নবী। দুই আফগান অলরাউন্ডারের দাপুটে পারফরম্যান্সে চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সকে ৮ রানে হারাল রংপুর রাইডার্স। তিন জয়ে পয়েন্ট তালিকার তিনে উঠে গেল উত্তরাঞ্চলের দলটি।

প্রথমে ব্যাট করে রাইডার্স করেছিল ৫ উইকেটে ১৬৫ রান। জয়ের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ১৫৭ রানে আটকে যায় ভিক্টোরিয়ান্সের ইনিংস। অলরাউন্ড পারফর্ম করেন ম্যাচসেরা ওমরজাই।

আফগান এক্সপ্রেসেই যেন ছুটছে রংপুর রাইডার্স। আফগানিস্তানের দুই তারকা অলরাউন্ডারই দারুণ ধারাবাহিক। রংপুরের প্রথম জয়ে ম্যাচসেরা ওমরজাই। দ্বিতীয় জয়েও ছিল তার ক্যারিশমেটিক পারফরম্যান্স। আর গতকাল তো ব্যাটে-বলে রীতিমতো চমক দেখালেন। প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ১৫ ওভারে ৯৭ রান করার পরও শেষ পর্যন্ত রাইডার্স যে ১৬৫ রানের স্কোর করেছিল তা সম্ভব হয়েছিল স্লগ ওভারে ওমরজাইয়ের ২০ বলে ৩৬ রানের হার-না মানা তান্ডবে ইনিংসে। আর বল হাতে ৩১ রানে তুলে নেন প্রতিপক্ষের ভয়ংকর দুই উইকেট।

আরেক আফগান তারকা মোহাম্মদ নবীও অসামান্য অবদান রেখেছেন। শেষ দিকে ব্যাট হাতে নেমে ৭ বলে করেন ১৩ রান, আর বল হাতে ৪ ওভারে মাত্র ১৯ রান দিয়ে নেন কুমিল্লার সবচেয়ে মূল্যবান উইকেটটি।

গতকাল সিলেটের স্পোর্টিং উইকেটে চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের সামনে ১৬৬ রানের টার্গেট দিয়ে খুব একটা স্বস্তিতে ছিল না রাইডার্স। কারণ, মোহাম্মদ রিজওয়ান, খুশদিল, লিটন দাস, তৌহিদ হৃদয়ের মতো বড় তারকা ছিলেন কুমিল্লার স্কোয়াডে।

যদিও ভিক্টোরিয়ান্স ক্যাপ্টেন লিটন বিপিএলে এখনো দাপট দেখাতে পারেননি। কিন্তু সিলেট হচ্ছে তার জন্য বড় পয়মন্ত ভেন্যু। এই মাঠেই চলতি বছরে বাংলাদেশের হয়ে আয়ারল্যান্ডের বিরুদ্ধে দ্রুততম হাফ সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়েছেন (১৮ বলে হাফ সেঞ্চুরি)। ওয়ানডেতে ১৭৬ রানের রেকর্ড ইনিংসটিও এই সিলেটেই খেলেছেন। কিন্তু সেই লিটনকে গতকাল রানের খাতাই খুলতে দিলেন না আফগান পেসার ওমরজাই। ক্যারিশমেটিক এক ডেলিভারিতে ইনিংসের প্রথম ওভারেই ভিক্টোরিয়ান্স ক্যাপ্টেনকে ড্রেসিংরুমে পাঠিয়ে দেন। শুরুতেই কুমিল্লাকে বড় ধাক্কা দিয়ে ম্যাচে আধিপত্য বিস্তার করেন।

যদিও মোহাম্মদ রিজওয়ান ও মাহিদুল অঙ্কনের ‘সেনসিবল’ ব্যাটিংয়ে ম্যাচে দারুণভাবে ফেরে ভিক্টোরিয়ান্স। এই জুটিতে আসে ৫৯ রান। একসময় মনে হচ্ছিল ম্যাচের লাগামটা যেন ধরেই ফেলেছে কুমিল্লা। রিজওয়ান এমন এক ব্যাটসম্যান যে কোনো পরিস্থিতি পাল্টে দেওয়ার আশ্চর্য ক্ষমতা আছে তার। ক্রমশ ভয়ংকর হয়ে উঠছিলেন পাকিস্তানের ওপেনার। ঠিক এমন সময় ত্রাতা হয়ে আসেন আফগান স্পিনার নবী। তার দারুণ এক ডেলিভারিতে বোকা বনে যান রিজওয়ান।

এরপরও অঙ্কন ও হৃদয় মিলে কুমিল্লাকে আরও একবার জয়ের স্বপ্ন দেখান। তাদের জুটিতে আসে ৫৩ রান। অঙ্কনকে ৬৩ রানে বিদায় করে দেন রাইডার্স পেসার হাসান মাহমুদ। এরপর খুশদিল শাহ বাইশগজে এসেই যেভাবে ঝড় তোলেন, মনে হচ্ছিল যেন অঙ্কনের আউট হওয়াটা ভিক্টোরিয়ান্সের জন্য শাপেবর হয়েছে। সেই ঝড়ও থামিয়ে দেন আফগান পেসার ওমরজাই। তার দারুণ এক ডেলিভারিতে আউট হয়ে যান খুশদিল।

কালকের ম্যাচে পরতে পরতে ছিল রোমান্স। শেষ ওভারেও ড্রামা জমে উঠেছিল। জয়ের জন্য তখন কুমিল্লার দরকার ছিল ২৯ রান। যদিও আপাতদৃষ্টিতে তা ছিল অসম্ভব। কিন্তু শেষ ওভার করার জন্য রাইডার্সের হাতে কোনো পেসার ছিল না। অন্যদিকে হৃদয় ছিলেন স্ট্রাইকিংয়ে। তাই দারুণ একটা সুযোগ ছিল কুমিল্লারও। কিন্তু এবার ত্রাতা হয়ে এলেন নবী। স্কয়ার লেগ থেকে দুর্দান্ত এক থ্রোতে হৃদয়কে রানআউটের ফাঁদে ফেলেন। এরপর জয় নিশ্চিত হয়ে যায় রংপুরের। এ ম্যাচে দাপট ছিল বাবর আজমেরও। তিনি ব্যাট হাতে ৩৭ রান করার পাশাপাশি ফিল্ডিংয়ে নেমে দারুণ তিনটি ক্যাচ লুফে নিয়েছেন। এ ছাড়া ছোট ছোট অবদান ছিল অন্যদেরও। রাব্বির ২১ বলে ৩০, সোহান ৬ বলে ১৫ করেন! তবে এমন চমৎকার টিম পারফরম্যান্সের দিনেও আলাদা করেই নজর কেড়েছেন দুই আফগান সেনাপতি ওমরজাই ও নবী।

সর্বশেষ খবর