রংপুর রাইডার্সের ম্যাচে একটা দারুণ দৃশ্য দেখা যায়- বিশেষ করে ফিল্ডিংয়ের সময়। ক্যাপ্টেন নুরুল হাসান সোহান কখনো সাকিব আল হাসানের কাছে দৌড়ে যাচ্ছেন, আবার কখনো বাবর আজমের সঙ্গে কথোপকথন করছেন, কখনোবা মোহাম্মদ নবীর কাজ থেকে পরামর্শ নিচ্ছেন।
তিন দেশের সেরা তিন ক্ষুরধার মস্তিষ্কের প্রতিফলনই ঘটছে রাইডার্সের এক একটি সিদ্ধান্তে। সে কারণে মাঠে রংপুর রাইডার্সের সিদ্ধান্তগুলো অনেক বেশি পারফেক্ট হচ্ছে। প্রথম তিন ম্যাচে নড়েবড়ে অবস্থায় থাকার পরও দলটি কী দারুণ আগ্রাসি চেহারায় আবির্ভূত হয়েছে।
![](/assets/archive/images/Print-Edition/2024/02.February%20-2024/01-02-2024/01-02-2024-P10-2.jpg)
রংপুর রাইডার্সের অধিনায়ক নুরুল হাসান সোহান এ কাজটি দারুণভাবেই পালন করে যাচ্ছেন। সোহান সিদ্ধান্ত নিজের মুখে জানিয়ে দিচ্ছেন, নেপথ্য এ সিদ্ধান্তে কাজ করছে তিন দেশের সেরা তিন ক্রিকেট মস্তিষ্ক।
যদিও প্রথমে হালকা ধাক্কাও খেতে হয়েছে। কারণ প্রথম তিন ম্যাচের মধ্যে দুটিতেই হেরেছিল তার দল। আসলে সেটআপ হওয়ার জন্য খানিকটা সময় লেগেছে এ আর কি! কিন্তু এখন দারুণ ছন্দে রাইডার্স। টানা দুই ম্যাচে পেয়েছে আগ্রাসি জয়। দুর্দান্ত ঢাকাকে উড়িয়ে দেওয়ার পর বর্তমান চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লাকে হারিয়েছে রংপুর। রাইডার্সকে নেতৃত্ব দেওয়ার বিষয়টি প্রথম প্রথম মোটেও সহজ ছিল না। তবে সোহানের কাছে খুবই সহজ হয়ে গেছে। দলের পরিস্থিতি অনুযায়ী তিনি তিন অধিনায়কের যে কোনো কারও কাছে পরামর্শ চান। দারুণ সব পরামর্শ পেয়েও যান।
তবে এটা কেবল মাঠেই নয়, মাঠের বাইরেও নানাভাবে তিন অধিনায়কের পরামর্শ নেন সোহান। দুই দিন আগে রংপুর রাইডার্সের অফিসিয়াল সোশ্যাল মিডিয়া পেজে অনুশীলনের একটি ভিডিও আপলোড করা হয়। যেখানে দেখা যাচ্ছে সোহান ব্যাটিং অনুশীলন করছেন। কিন্তু তা দেখে পছন্দ হচ্ছে না মোহাম্মদ নবীর। এরপর তিনি নিজেই এগিয়ে গিয়ে রাইডার্স ক্যাপ্টেনকে পরামর্শ দিচ্ছেন।
সোহান মনে করেন দলে সবার এমন সহযোগিতামূলক আচরণের কারণে রংপুর রাইডার্স একটা ফ্যামিলিতে পরিণত হয়েছে। আর যে দল পরিবারের মতো এক হয়ে মাঠে খেলতে নামে তাদের সফল হওয়ার সম্ভাবনাও অনেক বেশি বেড়ে যায়।
নুরুল হাসান সোহান বলেন, ‘আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে ক্রিকেট একটা টিম গেম। ক্রিকেটাররা কতটুকু সহযোগিতাপরায়ণ হবেন, একজন আরেকজনের পাশে থাকবেন, এক হয়ে খেলবেন। রংপুর রাইডার্সের সব সময় একটাই লক্ষ্য থাকে দল হয়ে খেলা। সাকিব ভাই, মোহাম্মদ নবী, বাবর আজম কিংবা ব্রেন্ডন কিং- সবাই খুবই সহযোগিতাপরায়ণ। তারা দলের সঙ্গে খুবই বেশি ইনভলভ। যে কারণে সবাই আমাকে পরামর্শ দেন। এ বিষয়টাই আমাকে মাঠে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সহযোগিতা করে। আর একটা দল তখনই ভালো করে যখন এমন একটা ফ্যামিলি হয়ে ওঠে।’ কখনো কখনো একেকজনের কাছ থেকে আলাদা আলাদা পরামর্শও আসতে পারে। ওই সময় সেরা দলের পরিস্থিতির কথা চিন্তা করে সিদ্ধান্তটি বেছে নেন রাইডার্স ক্যাপ্টেন। সোহান বলেন, ‘সবার কাছ থেকে পরামর্শ আসে। আমার কাছে মনে হয় যে, অবশ্যই টিমের জন্য সবাই ভালো করতে চায়। আমার মনে হয় যে, টিমের ভালোর জন্য আলোচনা করা হয়, সেখান থেকে যে আউটপুটগুলো আসে, সেগুলো থেকে সেরাটা নেওয়ার চেষ্টা করি।’
রংপুর রাইডার্স খুবই ভারসাম্যপূর্ণ একটি দল। অলরাউন্ডারের সংখ্যা বেশি হওয়ায় ব্যাটসম্যান এবং বোলারের কম্বিনেশনটা অনেক বেড়ে গেছে। একাদশে সব সময় ৮-৯ জন জেনুইন ব্যাটসম্যান থাকে। আবার বোলিং আক্রমণ বিভাগও দুর্দান্ত। অন্তত ৭-৮ জন ফুলটাইম বোলার থাকে। এ ছাড়া দু-একজন পারটাইমারও থাকে। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মতো সব রকমের রসদই আছে। এখন দরকার কেবল মাঠে সঠিক নির্দেশনা দিয়ে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা। শেষ দুই ম্যাচে ক্যাপ্টেন হিসেবে এ কাজটি যেন নুরুল হাসান সোহান খুব ভালোভাবেই করতে পেরেছেন তা বলার অপেক্ষা রাখে না।