শুক্রবার, ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

নারী সাফের ফাইনালে মহানাটক

ক্রীড়া প্রতিবেদক

নারী সাফের ফাইনালে মহানাটক
ম্যাচ কমিশনার টসের সিদ্ধান্ত বাতিল করে টাইব্রেকার চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। তবে ততক্ষণে ভারত মাঠ ছেড়ে চলে যায়। এরপর তারা আর মাঠে না আসায় প্রায় পাঁচ ঘণ্টার ফাইনালে দুই দলকেই চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করা হয়। দুই দলের অধিনায়কের হাতে ট্রফি তুলে দেন ক্রীড়ামন্ত্রী নাজমুল হাসান পাপন।

মহা নাটকীয়তার ফাইনালে যুগ্ম চ্যাম্পিয়ন হলো বাংলাদেশ ও ভারত। গতকাল কমলাপুর স্টেডিয়ামে সাফ অনূর্ধ্ব-১৯ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে নির্ধারিত সময়ে ১-১ গোলে ড্র করে দুই দল। এরপর টাইব্রেকারে ১১টি করে গোল করে দুই দলই। ম্যাচ কমিশনার টস করার সিদ্ধান্ত নেন। জিতে যায় ভারত। তবে এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করে বাংলাদেশ। কারণ বাইলজে টস উল্লেখ নেই। কিছুক্ষণ পর ম্যাচ কমিশনার টসের সিদ্ধান্ত বাতিল করে টাইব্রেকার চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। তবে ততক্ষণে ভারত মাঠ ছেড়ে চলে যায়। এরপর তারা আর মাঠে না আসায় প্রায় পাঁচ ঘণ্টার ফাইনালে দুই দলকেই চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করা হয়। পরে সাফ কর্মকর্তাদের অনুরোধে ভারতের অধিনায়ক নিত ুলিন্ডা মাঠে ফিরেন এবং বাংলাদেশের অধিনায়ক আফিদি খন্দকারের সঙ্গে ট্রফি নেন ক্রীড়ামন্ত্রী নাজমুল হাসানের হাত থেকে।

মহানাটকের ফাইনাল শেষ হয়ে যেতে পারতো নির্ধারিত সময়েই। ভারত ১-০ গোলে এগিয়ে ছিল শেষ মিনিট পর্যন্ত। তবে হার না মানা বাংলাদেশের ফুটবলাররা শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত লড়াই করেন। যোগ করা সময়ে সাগরিকা ডি বক্সের ভিতর থেকে দুর্দান্ত এক গোল করেন। সমতায় ফেরেন লাল-সবুজের জার্সিধারী মেয়েরা।

টাইব্রেকারে সমানে সমানে লড়াই চলছিল। প্রথম পাঁচ শটে দুই দল ৫-৫। এরপর সাডেন ডেথে গড়ায় ম্যাচ। বাংলাদেশ ৯-৮ ব্যবধানে এগিয়ে যাওয়ার পর শুরু হয় নাটকীয়তার। ভারতের হিনা তাদের ৯ নম্বর শটটা নিতে আসেন। প্রথমবার শট নেন। দারুণ দক্ষতায় শটটা রুখে দেন বাংলাদেশের গোলরক্ষক স্বর্ণা রানী। তবে রেফারি শটটা বাতিল করেন। স্বর্ণা শটের আগেই গোললাইন থেকে বেরিয়ে এসেছেন, এ অভিযোগে পুনরায় হিনাকে শট নেওয়ার সুযোগ দেন নেপালি রেফারি অঞ্জনা রায়। অবশ্য টিভি রিপ্লেতে দেখা গেছে স্বর্ণা গোল লাইনে দাঁড়িয়েই শট রুখে দেন। দ্বিতীয়বার শট নিয়ে গোল করেন হিনা। এর পরও দুই দলই সমান সমান গোল করতে থাকে। দুই দলের ১১ জনই টাইব্রেকারে শট নিয়ে গোল করেন। ১২ নম্বর শট নেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নেন দুই দলের ফুটবলাররা। রেফারিরা মাঠে ছোট্ট একটা মিটিং করে টসের সিদ্ধান্ত নেন। সে টসে জিতে যায় ভারত। মুহূর্তেই তারা উল্লাসে ফেটে পড়ে। তবে নাটকীয়তা তখনো শেষ হয়নি। প্রতিবাদ জানায় বাংলাদেশ দলের অফিশিয়াল ও ফুটবলাররা। বাদ-প্রতিবাদ চলতেই থাকে। এরই ফাঁকে উল্লাস করতে করতে থেমে যান ভারতীয় মেয়েরা। কিছু সময় অপেক্ষা করে দলবলসহ মাঠ ছেড়ে চলে যান তারা। অফিশিয়ালদের আলোচনা চলতেই থাকে। বাংলাদেশ দল তখনো অপেক্ষায়। মাঠে একসময় তারা ওয়ার্ম-আপও শুরু করে দেয়। কিছুক্ষণ পর ম্যাচ কমিশনার টসের সিদ্ধান্ত ভুল ঘোষণা করেন। তবে এ সিদ্ধান্ত মানতে রাজি হয়নি ভারত। তারা নিজেদের চ্যাম্পিয়ন দাবি করতে থাকে। তাদেরকে সময় বেঁধে দেওয়া হয়। মাঠে এসে টাইব্রেকারের পেনাল্টি শুটআউট চালিয়ে যেতে হবে। বাংলাদেশ দল মাঠেই ছিল। ভারত মাঠে না আসার সিদ্ধান্তে ছিল অনড়। পরে অবশ্য সাফের জেনারেল সেক্রেটারী আনোয়ারুল হক হেলালের অনুরোধে অধিনায়ক ও ম্যানেজার মাঠে ফিরে আসেন। সাফের জাতীয় দলের ফাইনাল নয়। তারপরও অনূর্ধ্ব- ১৯ ফাইনালে যে নাটক ঘটল তা ফুটবলে বিরল ঘটনাই বলা যায়। এ জন্য দায়ী ম্যাচ কমিশনারই। তিনি বাইলজে না থাকার পরও টসের সিদ্ধান্ত দিলেন কেন? যাক ভুল ভুলই। পরে আবার শুট আউটের সিদ্ধান্ত দেন। ভারত তা মানেনি। ঘোষণা দেওয়া হয় ৩০ মিনিটের মধ্যে ভারত মাঠে না নামলে বাংলাদেশকে বিজয়ী ঘোষণা করা হবে। যা বাইলজে স্পষ্ট রয়েছে। এরপরও বাংলাদেশকে একক চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করা হলো না কেন?

গ্রুপ পর্বে ভারতকে হারিয়ে দারুণ আত্মবিশ্বাসী ছিলেন বাংলাদেশের মেয়েরা। সে আত্মবিশ্বাস নিয়েই ফাইনালে ভারতের মুখোমুখি হন আফিদারা। তবে ম্যাচের শুরুতে এগিয়ে যায় ভারত। ৮ মিনিটে ভারতের পক্ষে গোল করেন শিবানী দেবী। প্রথমার্ধে এগিয়ে থেকেই বিরতিতে যায় ভারত। তবে দ্বিতীয়ার্ধে বাংলাদেশ জোরালো আক্রমণ করে ভারতের গোলমুখে। নির্ধারিত ৯০ মিনিটেও সমতায় ফিরতে পারেনি বাংলাদেশ। যোগ করা সময়েরও একেবারে শেষ মুহূর্তে গোল করেন সাগরিকা। উল্লাসে ফেটে পড়ে বাংলাদেশ দল। কমলাপুরের গ্যালারি থেকে গর্জে ওঠেন হাজার হাজার দর্শক। ম্যাচ গড়ায় টাইব্রেকারের নাটকীয়তায়।

সর্বশেষ খবর