শনিবার, ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা
আরেকটি লাইফলাইন পেল সিলেট

সেই রুবেল এখন ‘খলনায়ক’!

রুবেল বল হাতে নিয়ে প্রথম বলেই হজম করলেন ছক্কা। পরের দুই বলে দুটি সিঙ্গেল। শেষের তিন বলে আরও দুটি ছক্কা ও একটি চার। ১৯তম ওভারে রুবেলকে নাস্তানাবুদ বানিয়ে জয় তুলে নিল সিলেট স্ট্রাইকার্স। মাত্র দুই ওভার বল করে ৩৬ রান দিলেন জাতীয় দলের সাবেক এই পেসার।

মেজবাহ্-উল-হক

সেই রুবেল এখন ‘খলনায়ক’!

ম্যাচে তখন রুদ্ধশ্বাস পরিস্থিতি! জয়ের জন্য ১২ বলে সিলেট স্ট্রাইকার্সের প্রয়োজন ১৯ রান। মিরপুরের রহস্যময় উইকেট বলেই দারুণ সুযোগ ছিল খুলনা টাইগার্সের সামনেও।

এমন কঠিন মুহূর্তে হয়তো এনামুল হক বিজয়ের মনে পড়েছিল ৯ বছর আগে বিশ্বকাপে ইংল্যান্ড-বধের সেই সুখ-স্মৃতি! অস্ট্রেলিয়ার অ্যাডিলেডে নিশ্চিত হেরে যাওয়া যে ম্যাচে শেষ মুহূর্তে জাদুকরী এক স্পেলে পেসার রুবেল হোসেন বাংলাদেশকে এনে দিয়েছিলেন অবিস্মরণীয় এক জয়। হয়তো সে কারণেই আগের ওভারে ১২ রান দেওয়া খরুচে বোলার রুবেলের হাতেই মহাগুরুত্বপূর্ণ সময় বল তুলে দেন খুলনা ক্যাপ্টেন। কিন্তু বিজয় যেন ভুলেই গিয়েছিলেন ২৫ বছর বয়সী এক আগ্রাসি পেসারের সঙ্গে জাতীয় দলের বাইরে থাকা ৩৪ বছর বয়সী এই রুবেলের পার্থক্য আকাশ-পাতাল!

রুবেল বল হাতে নিয়ে প্রথম বলেই হজম করলেন ছক্কা। পরের দুই বলে দুটি সিঙ্গেল। শেষের তিন বলে আরও দুটি ছক্কা ও একটি চার। ১৯তম ওভারে রুবেলকে নাস্তানাবুদ বানিয়ে জয় তুলে নিল সিলেট স্ট্রাইকার্স। মাত্র দুই ওভার বল করে ৩৬ রান দিলেন জাতীয় দলের সাবেক এ পেসার।

এখানেই শেষ নয়! সিলেটের জয়ের নায়ক আইরিশ তারকা হ্যারি টেক্টর যে ৬১ রানের ইনিংস খেলেছেন, সেই ইনিংসের সঙ্গেও জড়িয়ে আছে রুবেলের নাম! স্ট্রাইকার্সের এই জয়ের নায়ক রানের খাতা খোলার আগেই সহজ ক্যাচ দিয়েছিলেন। কিন্তু রুবেল হোসেনের হাত ফসকে বল মাটিতে পড়ে যায়! প্রতিদ্বন্দ্বীপূর্ণ ম্যাচে এমন সহজ ক্যাচ মিসের জন্য কঠিন মূল্য দিতে হলো পুরো দলকে। রুবেলের কল্যাণে নতুন জীবন পাওয়া টেক্টরই খুলনাকে ম্যাচ থেকেই ছিটকে দিলেন।

জাতীয় অনেক স্মরণীয় ঘটনার সাক্ষী, ইতিহাসের নায়ক সেই রুবেল হোসেন বিপিএলের চলতি আসরে প্রথমবারের মতো গতকাল খেলতে নেমেই যেন ‘খলনায়ক’ হয়ে গেলেন। ক্রিকেট এমনই- যেমন সাফল্য এনে দেয়, আবার কখনো নায়ক থেকে ভিলেনও বানায়!

যে মাশরাফি বিন মর্তুজাকে বলা হয় বাংলাদেশের ইতিহাসে সেরা অধিনায়ক। অথচ সেই নড়াইল এক্সপ্রেসের নেতৃত্বে চলতি আসরে একটি জয়ও পায়নি সিলেট স্ট্রাইকার্স। প্রথম পাঁচের ম্যাচের সবকটিতে হেরে দলটি যখন পয়েন্ট তালিকার তলানিতে তখন চারদিক থেকে ধেয়ে আসতে থাকে সমালোচনা। তারপর অনেকটা বাধ্য হয়েই ব্যস্ততার কথা বলে বিপিএল থেকে নিজেকে সরিয়ে নেন মাশরাফি।

এরপর মোহাম্মদ মিথুনের নেতৃত্বে যেন বদলে গেল সিলেট। পরের চার ম্যাচের মধ্যে তিনটিতেই জয় পেল স্ট্রাইকার্স। গতকাল তারা খুলনাকে হারিয়েছে ৭ উইকেটের ব্যবধানে। এটি সিলেটের জন্য আরেকটি লাইফলাইন। কারণ কাগজে-কলমে এখনো প্লে-অফ খেলার সম্ভাবনা আছে।

তবে সিলেটের জন্য এখন প্রতিটি ম্যাচই ‘ডু অর ডাই’! প্রতি ম্যাচই তাদের জন্য ফাইনাল। আর এ ভাবনাটাই যেন বদলে দিয়েছে স্ট্রাইকার্সকে! দাপট দেখাচ্ছে সিলেটের বিদেশিরা। হাফসেঞ্চুরি করে টেক্টর ম্যাচসেরা হলেও দলের জয়ে বড় অবদান ছিল শেষ মুহূর্তে জিম্বাবুইয়ান তারকা রায়ান বার্লের ১৬ বলে খেলা ৩২ রানের টর্নেডো ইনিংসটি। বোলিং সামিত প্যাটেল ৪ ওভারে মাত্র ২২ রান দিয়ে নিয়েছেন একটি উইকেট। তবে সিলেটের বোলিং আক্রমণে সবচেয়ে কম রান দিয়েছেন স্থানীয় স্পিনার সানজামুল ইসলাম। তিনি চার ওভারে মাত্র ১৬ রান দিয়েছেন, সঙ্গে একটি উইকেট।

অন্যদিকে, দল হেরে যাওয়ায় খুলনা ক্যাপ্টেনের ৬৭ রানের হার না মানা ইনিংসটা বৃথা গেল। গতকাল ইনিংস ওপেন করতে নেমে শেষ পর্যন্ত একপ্রান্ত আগলে রেখেছিলেন এনামুল হক বিজয়। খুলনার হয়ে দুটি ঝড়ো ইনিংস খেলেছেন হাবিবুর রহমান সোহান (৩০ বলে ৪৩ রান) ও আফিফ হোসেন (১৬ বলে ২৪ রান)। স্থানীয় তিন ব্যাটসম্যানে ভর করেই ৩ উইকেটে ১৫৩ রান করেছিল খুলনা। মিরপুরে ১৫৪ রানের টার্গেটটা চ্যালেঞ্জিং হলেও রুবেলকান্ডে নিরাপদেই গন্তব্যে পৌঁছে গেছে সিলেট স্ট্রাইকার্স!

 

 

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর