বুধবার, ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

সাগরপাড়ে রানের জলোচ্ছ্বাস

মেজবাহ্-উল-হক, চট্টগ্রাম থেকে

সাগরপাড়ে রানের জলোচ্ছ্বাস

দুপুরে যখন সাগরে ছিল জোয়ারের পিক-সময়, ঠিক তখন সাগরিকার জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের বাইশগজে রীতিমতো জলোচ্ছ্বাস বইয়ে দিল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স! আর এই জলোচ্ছ্বাসে ভেসে গেল চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স।

চট্টগ্রাম পর্বের প্রথম ম্যাচেই হয়ে গেল বিপিএলে দলীয় সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড। গতকাল প্রথমে ব্যাট করে উইল জ্যাকসের সাইক্লোন গতির সেঞ্চুরি এবং লিটন দাস ও মঈন আলীর টর্নেডো ফিফটিতে ৩ উইকেটে ২৩৯ রান করে কুমিল্লা। বিপিএলের ইতিহাসে যৌথভাবে দলীয় সর্বোচ্চ রান। ২০১৯ সালে রংপুর রাইডার্স করেছিল ২৩৯ রান। এবার তাদের রেকর্ডে যেন ভাগ বসাল ভিক্টোরিয়ান্স।

ভিক্টোরিয়ান্স জেতে ৭৩ রানের বিশাল ব্যবধানে। কাল চ্যালেঞ্জার্স ২৪০ রানের পাহাড় টপকাতে নেমে ১৬৬ রানেই গুটিয়ে যায়। ভিক্টোরিয়ান্সের সেঞ্চুরিয়ান জ্যাকসই হয়েছেন ম্যাচের সেরা।

এক ম্যাচে অনেক স্মরণীয় ঘটনা। এমন ম্যাচে হ্যাটট্রিক করেছেন ভিক্টোরিয়ান্সের ইংলিশ তারকা মঈন আলী। ব্যাট হাতেও তিনি খেলেছেন মাত্র ২৪ বলে ৫৩ রানের হার-না মানা ইনিংস। তবে ইনিংস ওপেন করতে নেমে ম্যাচের প্রায় পুরো আলো নিজের দিকে টেনে নিয়েছেন ইংলিশ তারকা উইল জ্যাকস ৫৩ বলে ১০৮ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে। রেকর্ডের এই ম্যাচে টনিক হিসেবে কাজ করেছে অবশ্যই লিটনের শুরুর ব্যাটিং তান্ডব এবং লেগ স্পিনার রিশাদ হোসেনের ঘূর্ণি। সব মিলেই গতকাল সাগরিকায় এক স্মরণীয় ম্যাচ উপহার দিয়েছেন কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দীনের শিষ্যরা।

শুরুটা করেছিলেন লিটন- মাত্র ২৬ বলে হাফ সেঞ্চুরি। আউট হওয়ার আগে ৩০ বলে করেন ৬০ রান। লিটন ঝড়েই ভিক্টোরিয়ান্স তাদের পাওয়ার প্লেতে করে ৬২ রান।

মজার বিষয় হচ্ছে, লিটন যখন বাইশগজে প্রতিপক্ষের বোলারদের তুলাধুনা করছিলেন তখন অপর প্রান্তে ধৈর্র্যের মূর্ত প্রতীক হয়ে তাকে যেন কেবলই সঙ্গ দিচ্ছিলেন আরেক ওপেনার উইল জ্যাক। কিন্তু লিটন আউট হওয়ার পর বেরিয়ে আসেন খোলস থেকে। মাঠের চারপাশ দিয়ে একের পর এক ছক্কা-চার হাঁকাতে থাকেন। ১০ ছক্কা এবং ৫ চারে দর্শকদের দারুণ বিনোদন দিয়েছেন। স্লগ ওভারে মঈন আলীর সঙ্গে জ্যাকসের জুটিটা ছিল দেখার মতো। এই পার্টনারশিপে ৫৩ বলে আসে ১২৮ রান।

এভারেস্ট জয়ের মিশন নিয়ে বাইশগজে চ্যালেঞ্জার্সের শুরুটাও ছিল দারুণ। পাওয়ার প্লেতে বিনা উইকেটে ৬১ রান করে। ওপেনিং জুটিতে মাত্র ৪৫ বলে আসে ৮০ রান। কিন্তু দুই রানের ব্যবধানে দুই ওপেনার তানজিদ (৪১) ও জশ ব্রাউন (৩৬) আউট হওয়ার পর বালির বাঁধের মতো ভেঙে পড়ে চট্টগ্রামের ইনিংস। লেগ স্পিনার রিশাদ হোসেনের ঘূর্ণিতেই পথ হারিয়ে বসে চ্যালেঞ্জার্স। চার ওভারে মাত্র ২২ রান দিয়ে নিয়েছেন ৪ উইকেট।

রিশাদে মুগ্ধ ভিক্টোরিয়ান্স ক্যাপ্টেন লিটন, ‘উইকেট খুবই ব্যাটিংবান্ধব ছিল। তারা (চট্টগ্রামের দুই ওপেনার) যেভাবে শুরু করেছিল, একটু হলেও আমরা ব্যাকফুটে যাচ্ছিলাম। সব মূল বোলারই রান দিচ্ছিল। এক্ষেত্রে রিশাদের প্রথম দুই ওভার গুরুত্বপূর্ণ। ও আমাদের ম্যাচে ফিরিয়েছে।’ তবে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স কোচের দাবি, তাদের আসলে ম্যাচ থেকে ছিটকে দিয়েছেন লিটন দাস। তুষার ইমরান বলেন, ‘এই ম্যাচে শুরুতে আমরা ভালোই বোলিং করেছি- বিশেষ করে প্রথম চার ওভার। কিন্তু পঞ্চম ওভারে লিটন এসে আক্রমণ করে। ওই ওভারেই ম্যাচের মোমেন্টাম চেঞ্জ হয়ে যায়।’

 লিটন ওই সময় আক্রমণ না করলে এত রান হতো না।’ আর স্কোর বোর্ডে পাহাড়সমান রান জমা না হলে যে ম্যাচের চিত্রও পাল্টে যেত সে কথাও জানালেন চ্যালেঞ্জার্স কোচ।

এমন ম্যাচে স্বাগতিক চট্টগ্রাম হারলেও বিপিএল যেন নতুন জীবন ফিরে পেল। কারণ, বিপিএলের মতো সেলিব্রেটি টুর্নামেন্টে দর্শকরা ছক্কা-চার দেখার জন্যই আসেন। দুই ইনিংস মিলে ২৯টি ছক্কা এবং ৩২টি চার হয়েছে। আর ৬১ বাউন্ডারির ম্যাচে রানের জলোচ্ছ্বাস তো হবেই!

সর্বশেষ খবর