বৃহস্পতিবার, ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

ব্যাটিং স্বর্গে ব্যাটারদের হাসি

মেজবাহ্-উল-হক, চট্টগ্রাম থেকে

ব্যাটিং স্বর্গে ব্যাটারদের হাসি

উইকেটে অনেক সবুজ ঘাস। কিন্তু রানে ভরা। টি-২০ ক্রিকেটের জন্য আদর্শ উইকেট বলতে যা বোঝায় তার সব কিছুই আছে চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের পিচে। এমন উইকেটে যেমন ছক্কা-চারের বন্যা বইয়ে যায়, তেমনি পেসাররাও বাড়তি বাউন্স পেয়ে মনের মতো করে প্রতিপক্ষের ব্যাটারদের ওপর আক্রমণ করতে পারেন। ঘাস থাকায় স্পিনারদের জন্য কাজটা অনেক কঠিন। তবে এমন উইকেটেই একজন স্পিনারের সত্যিকারের শক্তিমত্তা বোঝা যায়!

ঢাকার উইকেটের সঙ্গে এখানকার উইকেটের বড় পার্থক্য গড়ে দেয় বাউন্স! মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামের পিচে বল নিচু হয়ে আসতে আসতে হঠাৎ বেশি বাউন্স করেছে। বল ঠিকঠাক ব্যাটে আসে না, আবার আন-ইভেন বাউন্সে বিব্রত হয়ে আউট হয়ে যান ব্যাটাররা।

কিন্তু সাগরিকার উইকেট হচ্ছে ব্যাটসম্যানদের জন্য স্বর্গ। বল সহজেই ব্যাটে আসে। বাউন্স নিয়ে কোনো টেনশনও থাকে না। তাই রান করাটা তুলনামূলক অনেক সহজ। একটু বাজে বল হলেই তা চলে যাচ্ছে গ্যালারিতে। অনেক সময় ভালো বলও বাউন্ডারি হয়ে যাচ্ছে।

চট্টগ্রাম পর্বের প্রথম দিনে দুই ম্যাচেও প্রথমে ব্যাট করা দুই দল দুই শতাধিক রানের স্কোর করে। নজর কাড়ছেন স্থানীয় তারকা ব্যাটাররা। স্থানীয় তারকাদের মধ্যে প্রথম ম্যাচে বাইশগজে ঝড় তুলেছিলেন লিটন কুমার দাস। পরের ম্যাচে সাকিব আল হাসানের ব্যাটিং ছিল রীতিমতো সাইক্লোন!

গতকাল সাগরিকায় ঝড় বইয়ে দিলেন লোকাল হিরো তামিম ইকবাল। ফরচুন বরিশালের হয়ে খেলেছেন ৭১ রানের ক্যাপ্টেন্সনক! তার ইনিংসে ছিল ৪টি ছক্কার সঙ্গে ৭টি দৃষ্টিনন্দন চারের মার।

তবে নজর কেড়েছে স্লগ ওভারে ব্যাট হাতে নামা মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন। তিনি সুযোগ পেয়েছিলেন মাত্র ৬ বল, তাতেই সাগরিকা কাঁপিয়ে দিলেন। ২৩ রানের একটি টর্নেডো ইনিংস খেললেন। দুটি ছক্কা এবং দুটি চার। শুধু ব্যাটিং নয় বোলিংয়েও এ ম্যাচে সাইফুদ্দিন ছিলেন সুপার। ৩১ রান দিয়ে নিয়েছেন ৩ উইকেট। ইনজুরিতে থেকে ফিরে আসা এই পেস বোলিং অলরাউন্ডার প্রতি ম্যাচেই নিজেকে আলাদা করে চেনাচ্ছেন। সাইফুদ্দিনের এমন ক্যারিশম্যাটিক পারফরম্যান্সই জানান দিচ্ছে, জাতীয় দলে তার ফেরাটা এখন কেবলই সময়ের ব্যাপার মাত্র।

গতকাল দুর্দান্ত ঢাকার বিরুদ্ধে শুরুতে তামিম-ঝড় এবং শেষ দিকে সাইফুদ্দিন-তান্ডবে ১৮৬ রান করে ফরচুন বরিশাল। তবে মাঝের ওভারগুলোতে গতি কমে না গেলে এ ম্যাচেও হতে পারত দুই শতাধিক রান। কিন্তু ঢাকার জন্য এ ১৮৭ রানের টার্গেটই যে পাহাড়সম। চট্টগ্রামের ব্যাটিং স্বর্গেও হাসেনি তাদের ব্যাট। ১৫৯ রানেই আটকে যায় ঢাকা। হেরে যায় ২৭ রানে। চলতি আসরে এটি দুর্দান্ত ঢাকার টানা নবম হার। তবে ঢাকা পরাজয় বরণ করলেও অপরাজিত ৮৯ রানের অনবদ্য ইনিংস খেলেছেন তাদের অস্ট্রেলিয়ান তারকা অ্যালেক্স রস। ৪৯ বলের ইনিংসে ছিল ৭ ছক্কা এবং ৫ চারের মার। কিন্তু দলকে জেতাতে পারেননি রস। দুই শতাধিক রান তাড়া করতে নেমে যে দলটি পাওয়ার প্লেতেই সেরা চার ব্যাটসম্যানকে হারায় সেই দলকে জেতানো কঠিন। তাই অ্যালেক্স রসও পারেননি। তিনি কেবল একপ্রান্ত আগলে রেখে নিজের কাজটি করে গেছেন। ক্যারিশম্যাটিক ব্যাটিং করে বুঝিয়ে দিয়েছেন চট্টগ্রামের উইকেটে রান করা কত সহজ।

তবে এমন ব্যাটিং স্বর্গেও কেউ কেউ অস্বস্তিতে ভুগছেন। কোনো ব্যাটার আবার উইকেটে গিয়ে সেট হলেও আউট হয়ে যাচ্ছেন। এমন চমৎকার উইকেটেও যারা সেট হয়ে বড় ইনিংস খেলতে পারছেন না তাদের উদ্দেশে ক্রিকেট বিশ্লেষক ও ধারাভাষ্যকার আতহার আলী খান বলেন,  ‘এমন উইকেটে সেট হয়ে যাওয়ার পর উইকেট বিলিয়ে দেওয়াটা অপরাধ!’

দিনের দ্বিতীয় ম্যাচে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স ৭ উইকেটে হারিয়েছে খুলনা টাইগার্সকে। প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ২০ ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে ১৬৪ রান করে খুলনা। জবাবে কুমিল্লা তৌহিদ হৃদয়ের ৯১* রানের সুবাদে ৭ উইকেট হাতে রেখে জিতে যায়। এই জয়ে রংপুরের পাশাপাশি কুমিল্লার প্লে অফে খেলাটা অনেকটাই নিশ্চিত।

অনেক ব্যাটারকে দেখা যাচ্ছে সেই ‘অপরাধ’ করতে! টেকনিকে সমস্যা থাকলে ভালো উইকেট হলেও তো লাভ নেই! কিন্তু স্কিলফুল ব্যাটাররা ঠিকই এমন উইকেটের সুবিধাটা তুলে নিচ্ছেন। সাগরিকার বাইশগজে গিয়ে ঝড় তুলছেন, ছক্কা-চারের ফুলঝুড়ি ফুটিয়ে বড় ইনিংস খেলছেন। সাগরিকায় এসে সাকিব-লিটন-তামিমদের ব্যাট যেন প্রাণ খুলে হাসছে।

সর্বশেষ খবর