শিরোনাম
শনিবার, ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

বিস্ফোরক সাকিবে কাঁপছে সাগরিকা

রংপুর রাইডার্সের ৮ নম্বর জয়

মেজবাহ্-উল-হক, চট্টগ্রাম থেকে

বিস্ফোরক সাকিবে কাঁপছে সাগরিকা

সাগরিকার বাইশগজে সাকিব আল হাসান যেন এক আগ্নেয়গিরি! ব্যাট হাতে যখনই নামছেন, ঘটে যাচ্ছে অগ্ন্যুৎপাত! কী দুর্দান্ত ব্যাটিং। অবিশ্বাস্য একেকটি শট। কখনো উড়িয়ে মারছেন, আবার কখনো গড়িয়ে মেরেই বাউন্ডারি আদায় করে নিচ্ছেন। চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে আগের ম্যাচে খেলেছিলেন মাত্র ৩১ বলে ৬৯ রানের বিস্ফোরক ইনিংস। গতকাল রাতেও দেখালেন ৩৯ বলে ৬২ রানের আরেকটি ঝলক!

বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের ক্যারিশমেটিক ফিফটিতে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের বিরুদ্ধে ১৮৭ রান করে রংপুর রাইডার্স। তারপর চ্যালেঞ্জার্সকে ১৬৯ রানে আটকে দিয়ে ১৮ রানের জয় তুলে নিল উত্তরাঞ্চলের দলটি। এই আসরে এটি রংপুরের ৮ নম্বর জয়।

সাকিবের ব্যাটিং যেন ঠিক হাইলাইটসের মতো! যতক্ষণ বাইশগজে থাকছেন রানের বন্যা বইয়ে দিচ্ছেন। কখনো ছক্কা, কখনো চার আবার কখনো দ্রুতগতিতে দৌড়ে সিঙ্গেলসের জায়গায় ডাবলস রান নিয়ে সবাইকে অবাক করে দিচ্ছেন। কালকের ইনিংসে সাকিব ৩ ছক্কা এবং ৫ বাউন্ডারি হাঁকান। আর প্রতিটি শটেই যেন ঠিকরে বের হচ্ছিল আত্মবিশ্বাসের দ্যুতি!

অথচ এই টুর্নামেন্টের শুরুর দিকে ব্যাটিং নিয়ে কতই না ধুঁকলেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার! চোখের সমস্যার কারণে কয়েক ম্যাচে ব্যাটিংই করেননি। কয়েক ম্যাচে নিতান্ত বাধ্য হয়ে ব্যাট হাতে নেমেছিলেন বটে, সেটাও ৭-৮ নম্বরে। কী বাজে পরিস্থিতির মধ্য দিয়েই না যেতে হয়েছে তাকে! তবে এই কঠিন সময়েও সাকিবের পাশে ছিল রাইডার্স টিম ম্যানেজমেন্ট। তারা কেবল বোলার সাকিবকে নিয়েই সন্তুষ্ট ছিলেন। কিন্তু বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার নিজেকে কেবল বোলার হিসেবে মেনে নিতে পারছিলেন না। তাই তো বিপিএল চলাকালীন চোখের চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর চলে যান। তারপর ফিরে এসে নতুন করে যুদ্ধ শুরু করেন। সেটা ফেরার লড়াই।

প্রিয় কোচদের নিয়মিত পরামর্শ নিলেন। দিনরাত একাকার করে অনুশীলন করলেন। কখনো দলের সঙ্গে, কখনো একাকী! যখন নিজেকে ফিট মনে করলেন তখনি ব্যাট হাতে নিজের প্রিয় পজিশন তিন নম্বরে নেমে পড়লেন তিনি। তারপর থেকে টানা চার ম্যাচে চলছে সাকিব-ম্যাজিক!

চলতি আসরে ফিট হয়ে সাকিব প্রথমবারের মতো তিন নম্বরে ব্যাট করতে নামেন মিরপুরে দুর্দান্ত ঢাকার বিরুদ্ধে। ওই ম্যাচে খেলেন ২০ বলে ৩৪ রানের ইনিংস। পরের ম্যাচে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের বিরুদ্ধে মাত্র ১৬ বলে করেন ২৭ রান। আর সাগরিকায় এসে সাকিব যেন রীতিমতো বাইশগজে তাণ্ডব শুরু করে দিলেন। টানা দুই ম্যাচে দুই হাফ সেঞ্চুরি। আগের ম্যাচের ফিফটি ছিল ২০ বলে, গতকাল করেন ৩৩ বলে।

তবে গতকাল নিজের প্রিয় পজিশনে নামতে পারেননি। দলের প্রয়োজনে ক্যারিবীয় তারকা ব্রেন্ডন কিংকে সুযোগ করে দিতে নেমেছিলেন চার নম্বরে। কিন্তু পজিশন পরিবর্তন করেও সাকিব ঠিকই দাপট দেখিয়েছেন, তবে আগের ম্যাচের তুলনায় গতি খানিকটা কম ছিল। তারপরও কাল বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের ব্যাটিংয়ের স্ট্র্রাইক রেট ছিল ১৫৯। যা যে কোনো টপ অর্ডার ব্যাটারের জন্য ঈর্ষণীয়। আগের ম্যাচে চারে নেমে মাত্র ৩৬ বলে ৬০ রানের ঝোড়ো ইনিংস খেলা মেহেদী কাল ছয় নম্বরে নেমেও ব্যাট হাতে তাণ্ডব চালিয়েছেন। ১৭ বলে খেলেছেন ৩৪ রানের ইনিংস। ইনিংসে মেহেদীর হাঁকানো ছক্কা চারটি ছিল দেখার মতো। আগের ম্যাচে খুলনার বিরুদ্ধে রংপুর করেছিল ২১৯ রান। রানের পাহাড় গড়ার নেপথ্যে ছিল তৃতীয় উইকেট জুটিতে সাকিবের সঙ্গে শেখ মেহেদীর মাত্র ৪৮ বলে ১০৯ রান। গতকাল এই দুই তারকা জুটি বাঁধলেন পঞ্চম উইকেটে। তারপরও দলীয় খাতায় ৩৪ বলে যোগ করেলেন ৬৮ রান। হয়তো জুটিটি পাঁচ নম্বরের পরিবর্তে তৃতীয় হলে এ ম্যাচেই রংপুরের স্কোর লাইনটা ১৮৭ না হয়ে ২০০ পেরিয়ে যেত! কেননা যে দুই ব্যাটসম্যানকে সুযোগ দিতে মেহেদীকে চার থেকে ছয় নম্বরে নেমে যেতে হয়েছিল সেই দুজন সুবিধা করতে পারেননি (কিং ৯ বলে ২, সোহান ৯ বলে ৫ রান)!

অবশ্য সব প্ল্যান যে সব সময় কাজ করবে এমন নয়! রাইডার্স ৮ নম্বর জয় তুলে নিয়েছে, সেটাই টিম ম্যানেজমেন্টের কাছে বড় বিষয়!

সর্বশেষ খবর