রবিবার, ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

সেই মায়ার্সের আরেক মায়াবী বিকাল

মেজবাহ্-উল-হক, চট্টগ্রাম থেকে

সেই মায়ার্সের আরেক মায়াবী বিকাল

২০২১ সালের ৭ ফেব্রুয়ারির এক মায়াবী বিকাল! চট্টগ্রামের এই সাগরিকায় ঘটে যায় এক অবিশ্বাস্য ঘটনা। বার্বাডোজের এক ক্রিকেটার এই জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে তার অভিষেক টেস্টে ডাবল সেঞ্চুরি করে নিশ্চিত হারা ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে জিতিয়ে দিয়ে মহানায়ক হয়ে যান! সেদিনের সেই ক্রিকেটার হচ্ছেন গতকাল ফরচুন বরিশালের জয়ের নায়ক কাইল মায়ার্স।  

সাগরিকায় অনেক প্রথমের সঙ্গী ক্যারিবীয় এই তারকা। মায়ার্স ২০২১ সালে সেই অভিষেক টেস্টে যে ঐতিহাসিক ঘটনার জন্ম দিয়েছিলেন, তা এখনো টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে বিরল এক ঘটনা। সেই টেস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে পুরো তিন ইনিংসে ডমিনেট করে বাংলাদেশ। ইনিংস ঘোষণা করে ক্যারিবীয়দের ৩৯৫ রানের বিশাল টার্গেট ছুড়ে দিয়েছিল টাইগাররা। নিজেদের প্রথম ইনিংসে ২৫৯ রানে অলআউট হওয়া ক্যারিবীয়রা আর শেষ ইনিংসে কতই বা করবে?

কিন্তু তাদের যে ছিল এক রূপকথার নায়ক কাইল মায়ার্স। যিনি অভিষেক টেস্টেই অপরাজিত ২১০ রানের অনবদ্য এক ইনিংস খেলে ঐতিহাসিক এক জয় এনে দেন ওয়েস্ট ইন্ডিজকে। চট্টগ্রামের এই ভেন্যুতে এমনিতেই স্পিন খেলা কঠিন। আর পঞ্চম দিন হলে তো কথাই নেই। কিন্তু সব প্রতিবন্ধকতাকে সেদিন দূরে ঠেলে দিয়ে রচনা করেন এক মহাকাব্য!

উইন্ডিজের একপ্রান্তে যখন একের পর এক উইকেট পড়ছে,  তখন আরেকপ্রান্তে মায়ার্স মেজিক্যাল ব্যাটিং শো চালিয়ে যান। তার অবিশ্বাস্য ইনিংসেই বিকালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ পায় ঐতিহাসিক এক জয়।

এমন ম্যাচের কথা কি কেউ কখনো ভুলতে পারে! মায়ার্সও ভোলেননি। বরং সেই ইনিংসকে স্মরণীয় করে রেখেছেন ২১০ সংখ্যাকে জার্সি নম্বর বানিয়ে।

সেই পয়মন্ত ভেন্যু সাগরিকায় বিপিএলের নিজের প্রথম ম্যাচে খেলতে নেমেই বাজিমাত করে দিলেন। সিলেট স্ট্রাইকার্সের বিরুদ্ধে ফরচুন বরিশালের হয়ে খেলতে নেমে ব্যাট হাতে মাত্র ৩১ বলে ৪৮ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলার পর বল হাতে ৪ ওভারে মাত্র ১২ রান দিয়ে ৩ উইকেট নিয়ে ম্যাচের সব আলোই যেন নিজের দিকে টেনে নিলেন। এমন আগ্রাসী অলরাউন্ড পারফরম্যান্সের পর ম্যাচসেরার পুরস্কারও ওঠে ক্যারিবীয় তারকার হাতে।

গতকাল জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলার সময় মেয়ার্স যেন খানিকটা নস্টালজিক হয়ে পড়েন। বছর তিনেক আগের সেই গ্রেট ইনিংসের ছবি যেন তার স্মৃতিপটে ভেসে ওঠে। মেয়ার্স বলেন, ‘এখানে খেলার দারুণ স্কৃতি আছে আমার। সর্বশেষ যখন এখানে খেলেছিলাম তখন আমি অভিষেকেই ডাবল সেঞ্চুরি করেছিলাম। ফলে এখানে ফিরে আসার বিষয়টি দারুণ। ফিরতে পেরে আমি বেশ আনন্দিত।’

ডাবল সেঞ্চুরি হাঁকানো মাঠে খেলতে নামার সময় কি মনে রোমাঞ্চকর অনুভূতি করছিল কি না! মায়ার্স বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে ট্রেনিংয়ের সময় এটা ভেবেছিলাম। আমি একটু ভিন্ন অনুভূতি পেয়েছিলাম। মানসিকভাবে হয়তো কিছুটা শান্তি লাগছিল, কারণ এখানে ভালো স্মৃতি আছে আমার।’ মায়ার্সের ম্যাচে গতকাল ফরচুন বরিশাল জয় পায় ১৮ রানে। প্রথমে ব্যাট করে তারা ৬ উইকেট হারিয়ে করেছিল ১৮৩ রান। ১৮৪ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ১৬৫ রানে আটকে যায় সিলেটের ইনিংস।

ফরচুনের জার্সিতে বাইশগজে ঝড় তুলেছিলেন মুশফিকুর রহিমও। তিনি ৩২ বলে খেলেছেন ৫২ রানের ইনিংস। এ ম্যাচে মায়ার্স-মুশফিক তান্ডবে রানের পাহাড় গড়ে ফরচুন।

ব্যাটিংয়ের চেয়েও বোলিংয়ে ছিলেন আরও বেশি আগ্রাসী! ইনিংসের প্রথম ওভারে বল হাতে নেমে কোনো রান না দিয়ে তুলে নেন হ্যারি টেক্টর ও নাজমুল হোসেন শান্তর উইকেট। চার ওভারে এক মেডেন এবং ১২ রানে তিন উইকেট শিকার করেন। মায়ার্সের দাপুটে বোলিংয়ে গতকাল শুরুতেই ম্যাচ থেকে ছিটকে যায় সিলেট স্ট্রাইকার্স। টেস্টের অভিষেকে নিজের দেশকে আলোড়িত করেছেন, আর বিপিএলে অভিষেকে ফরচুন বরিশালকে জয় এনে দিলেন। সাগরিকায় মায়ার্স আরেকটি মায়াবী বিকাল কাটালেন।

সর্বশেষ খবর