সোমবার, ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

সুসময়ের সাকিব দুঃসময়ের সাকিব

মেজবাহ্-উল-হক, চট্টগ্রাম থেকে

সুসময়ের সাকিব দুঃসময়ের সাকিব

সাকিব আল হাসান চলতি বিপিএলে তার সেরা দুটি ইনিংস খেলেছেন এই চট্টগ্রামে এসে। সাগরিকায় প্রথম ম্যাচে খুলনা টাইগার্সের বিরুদ্ধে মাত্র ৩১ বলে খেলেছেন ৬৯ রানের সাইক্লোন ইনিংস। পরের ম্যাচে স্বাগতিক চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের বিরুদ্ধে ৩৯ বলে করেছেন ৬২ রান!

আর বোলিংয়ে বরাবরের মতোই দাপট ছিল। যদিও শেষ ম্যাচে কোনো উইকেট পাননি। তবে আসরে এখন পর্যন্ত ১৩ উইকেট নিয়ে তিনি টুর্নামেন্টে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারির তালিকায় এখন তৃতীয় স্থানে।

ইম্প্যাক্ট ক্রিকেটার হিসেবে তার অবস্থান দুইয়ে। অর্থাৎ দলের প্রয়োজনে কার্যকরী পারফরম্যান্সের বিচারে বিপিএল আসরে এখন পর্যন্ত দ্বিতীয় স্থানে রেখেছেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার।

তবে একটি জায়গায় সাকিব এখন পর্যন্ত সবার সেরা- সেটি হচ্ছে স্ট্রাইক রেটের দিক দিয়ে। বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের এ মুহূর্তে ব্যাটিং স্ট্রাইক রেট ১৭২।

সাকিবের লম্বা ক্রিকেট ক্যারিয়ারে অনেক বড় বড় অর্জন আছে। যেমন এ বিপিএলেই সবচেয়ে বেশিবার টুর্নামেন্টসেরা ক্রিকেটার হয়েছেন তিনি। আইপিএলে কলকাতা নাইট রাইডার্সের শিরোপা জয়ে বড় ভূমিকা রেখেছেন। কিন্তু এর আগে সাকিবকে কখনোই এতটা আগ্রাসি রূপে ব্যাট করতে দেখা যায়নি সাকিবকে!

এ আসরের শুরুর দিকের কথা চিন্তা করেন! কী দুঃসময়ই না গেছে। চোখের সমস্যার জন্য বল ঠিকঠাক দেখতে পাচ্ছিলেন না। রংপুর রাইডার্সের হয়ে প্রথম দুই ম্যাচে মাত্র ২ করে রান করেছেন। তাকে দেখে মনে হচ্ছিল, বাইশগজে গিয়ে আন্দাজে ব্যাট চালাচ্ছেন। কিন্তু সাকিব তো আন্দাজে ব্যাট চালানোর মতো আনারি ব্যাটসম্যান নন, তারপরও প্রাণান্তর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন রান করার জন্য।

ব্যাট হাতে দ্ইু ম্যাচ ফ্লপের পর অনুধাবন করতে পারলেন- এভাবে হবে না! তাই খেলার মাঝ পথেই চোখের চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর গেলেন। একটি ম্যাচও মিস করলেন। দুই ম্যাচে ব্যাট হাতে বাইশগজেই নামলেন না। এক ম্যাচে লেজের দিকে যদিওবা নামলেন, রানের খাতা খোলার আগেই আউট!

এরপরই শুরু হলো সাকিবের আসল লড়াই। চোখের সমস্যা থেকে কিছুটা কাটিয়ে ওঠার পর দিন রাত একাকার করে ব্যাটিং অনুশীলন শুরু করে দিলেন। আর এখন তার ফলটাও পাচ্ছেন। শেষ চার ম্যাচ থেকে সাকিব তার সেরা ৩-৪ পজিশনে ব্যাট করছেন। প্রতিটি ম্যাচেই বাইশগজে রীতিমতো তান্ডব চালাচ্ছেন। চার ম্যাচের ৩৪, ২৭, ৬৯, ৬২- চার ইনিংস দিয়েই লাইমলাইটে চলে এসেছেন। প্রত্যেকটি ইনিংস ছিল তার খুনে মেজাজের। বাইশগজে গিয়ে বোলারকে রীতিমতো নাস্তানাবুত করে ছেড়েছেন।

প্রথমের ম্যাচগুলোতে সাকিব ব্যাট হাতে ভালো করতে না পারলেও বল হাতে কিন্তু ঠিকই দুর্বার ছিলেন। প্রতিটি ম্যাচেই অসাধারণ বোলিং করেছেন। আর এখন ব্যাটে ঝড় তোলায় সময়ের সেরা অলরাউন্ডার সাকিবকে দেখা যাচ্ছে। নিজের সুসময়ে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার যে কতটা ভয়ংকর প্রতিপক্ষের ক্রিকেটাররা টের পাচ্ছেন।

তবে একটা উদগ্রীব হওয়ার মতো বিষয় দেখা যাচ্ছে, নিজের সুসময় কিংবা দুঃসময়ে গ্যালারির শতভাগ সমর্থন পাননি বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। খারাপ সময়ে দুয়োধ্বনি তো শুনতেই হয়েছে, এমনকি ভালো সময়েও দর্শকের একটা অংশ গ্যালারিতে ‘ভুয়া-ভুয়া’ গর্জন তুলছে। বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের প্রতি দর্শকের আচরণ বড় অদ্ভুত!

তাই বলে দর্শকরা যে সাকিবের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন এমন ভাবার কোনো উপায় নেই। একটা বিষয় স্ফটিকের মতো স্বচ্ছ হয়ে গেছে, সাকিব আল হাসান খারাপ খেলুক কিংবা ভালো, তার বিরুদ্ধে ‘ভুয়া, ভুয়া’ স্লোগান উঠুক কিংবা ‘সাকিব-সাকিব’  জয়ধ্বনি উঠুক- বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারকে ক্রিকেটপ্রেমীরা মাঠেই দেখতে চান।

লোকাল হিরো তামিম ইকবালের ম্যাচেও চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের গ্যালারি ভরেনি, কিন্তু সাকিবের সব শেষ ম্যাচে দেখা গেছে স্টেডিয়াম তো কানায় কানায় পূর্ণ। এমনকি পাশের ফ্লাইওভার থেকেও এত বেশি মানুষ খেলা দেখছিলেন যে, এক সময় মেরিন ড্রাইভের রাস্তাই বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল।

সাকিব আল হাসানের ম্যাচে দর্শকের উপচেপড়া ভিড়ই সাক্ষ্য দেয় বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের প্রতি ক্রিকেটপ্রেমীদের ভালোবাসা!

 

সর্বশেষ খবর