মঙ্গলবার, ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

এক নান্দনিক ইনিংসের আর্তনাদ

মেজবাহ্-উল-হক, চট্টগ্রাম থেকে

এক নান্দনিক ইনিংসের আর্তনাদ

যে উইকেটে খেলা হলো তা জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের অন্য উইকেটগুলোর মতো ব্যাটিং স্বর্গ নয়! উইকেট বেশ স্লো! বামহাতি বোলাররা বাড়তি সুবিধা পেয়েছেন। ডানহাতি ব্যাটসম্যানের জন্য রান করা অনেক কঠিন ছিল। এমন চ্যালেঞ্জিং উইকেটেও ব্যাটিংয়ে ক্যারিশম্যা দেখালেন লিটন কুমার দাস। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের অধিনায়ক লিটন দাস ৫৮ বলে খেললেন ৮৫ রানের অসাধারণ এক ইনিংস। সাতটি চারের সঙ্গে তিনটি বিশাল ছক্কা। নিখুঁত এক ইনিংস। অপরপ্রান্তের ব্যাটাররা যখন ধুঁকছেন তখন ঝড়োগতি রান তুলছেন লিটন।

আরিফুল হককে ডিপ ব্যাকওয়ার্ড স্কোয়ার লেগ দিয়ে সুইপ করে অসাধারণ এক ছক্কা হাঁকান। লিটনের দ্বিতীয় ছক্কাটি ছিল আরও চমৎকার। পেসার তানজিম সাকিব স্লোয়ার দিয়ে ব্যাটারকে বোকা বানাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু লিটন বুঝতে পেরে ডিপ মিডউইকেট দিয়ে বল গ্যালারিতে পাঠিয়ে দেন। এরপর স্লগসুইপ করে সিলেটের ইংলিশ পেসার বেনি হাওয়েলকে যেভাবে ছক্কা হাঁকিয়েছেন তা ছিল দেখার মতো।

বাউন্ডারি সাতটির মধ্যে দুটি ছিল ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্ট দিয়ে, অন্যগুলো মিডঅন, থার্ডম্যান, মিড-অফ, মিড-উইকেট এবং কাভার দিয়ে। মাঠের চারপাশ দিয়ে বাউন্ডারি আদায় করে নিয়েছেন।  মাঠের চারপাশ দিয়ে শট খেলেছেন লিটন। কিন্তু ক্যাপ্টেনের এমন দিনেও তার দল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স হেরে যায় ১২ রানে।

গতকাল প্রথম ইনিংসেই ব্যাকফুটে চলে গিয়েছিল ভিক্টোরিয়ান্স। ১৬০ রানের উইকেটে কুমিল্লার বোলারদের ব্যর্থতায় ১৭৭ রান করে সিলেট স্ট্রাইকার্স। মাত্র ৩১ বলে ৬২ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন বেনি হাওয়েল। স্লো উইকেটে ১৭৮ রানের টার্গেট টপকাতে নেমে নেমে নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারাতে থাকে ভিক্টোরিয়ান্সের ইনিংস আটকে যায় ১৬৫ রানেই।

ওপেনিংয়ে নেমে একপ্রান্তে ঝড় তুলেছিলেন, আরেকপ্রান্তে যেন রানই হচ্ছিল। মারকুটে বিদেশিরাও এমন উইকেটে সুবিধা করতে পারেননি। জনসন চার্লস ২১ বল থেকে করেন মাত্র ১২ রান। মঈন আলী ৫ বল খেলে রানের খাতাই খুলতে পারেননি। স্থানীয়দের মধ্যে সুপার ফর্মে থাকা তৌহিদ হৃদয়ও ঝড় তুলতে বাধ্য। আন্দ্রে রাসেল ১৪ বলে ২৩ রান করলেও তা জয়ের জন্য যথেষ্ট ছিল না। টানা ৫ জয়ের পর এ ম্যাচে দুই টি-২০ মাস্টার ক্যারিবিয়ান তারকা আন্দ্রে রাসেল এবং সুনীল নারাইন আরও শক্তিশালী হয়ে মাঠে নেমেছিল কুমিল্লা। কিন্তু কোনো লাভ হলো না। লিটনের কাছে এই হারটা রিয়ালিটি চেক।

পরাজয়ের মধ্যেও পজিটিভ দিকও খুঁজে বের করেছেন লিটন। তিনি বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য একটা রিয়ালিটি চেক। এখনো কোয়ালিফায়ারে যাওয়ার সুযোগ আছে আমাদের হাতে। আরও দুটি ম্যাচ আছে। জিতলেই টপে থাকতে পারব। তবে এ ম্যাচ থেকে আমরা বুঝতে পারলাম, বড় তারকা থাকলেও হারতে হতে পারে।’ ব্যাটিংয়ে সম্মিলিত ব্যর্থতার দিনে যেন আলাদা করেই চোখে পড়ছে লিটনের স্ট্রক ঝলমলে ইনিংসটি। সুপার ক্লাস এক ইনিংস। কয়েক দিন আগে লিটনের ব্যাটিংয়ের প্রশংসা করতে গিয়ে ধারাভাষ্যকার আতহার আলী খান বলেছিলেন, লিটন দাস এমন এক ব্যাটসম্যান, যার যে কোনো ইনিংস তরুণ ব্যাটারদের জন্য আদর্শ। সে ইনিংস যত ছোটই কিংবা বড়! লিটন দাসের ব্যাটিং দেখা হচ্ছে চোখের স্বস্তি- এক অনুষ্ঠানে এমন দাবি করেছিলেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানও!

ভারতের যেমন রাহুল দ্রাবিড়, বাংলাদেশের তেমন লিটন দাস- যেন ক্রিকেটের জীবন্ত ব্যাকরণ বই! ক্ল্যাসিক্যাল এক একটি শট। যতক্ষণ বাইশগজে থাকেন প্রতিপক্ষের বোলারকে অস্বস্তি নিয়ে বল করতে হয়। নিজেদের দিনে তারা অতিমানবী, অসাধারণ। কিন্তু ক্রিকেট তো আর একজনের খেলা নয়- টিম গেম! একজন ক্যারিশম্যাটিক ইনিংস খেললেও অন্যদের সহযোগীর ভূমিকা পালন করতে হয়। কিন্তু কালকের ম্যাচের ব্যাটিংয়ে লিটন যেন অন্যকারও সমর্থন পেলেন না। তাই দলও হারল। আর দল হারলে ব্যক্তিগত অর্জন কেবলই পরিসংখ্যানের খেড়োখাতায় পড়ে রয়। ম্যাচ শেষে তাই লিটনের মুখেও হতাশার বাণী, ‘আমি যদি ৫০ রানও করতাম, আর দল যদি জয় পেত সেটাই বেশি ভালো লাগত। দল হারায় আমি আপসেট।’-এ যেন নান্দনিক এক ইনিংসেরই আর্তনাদ!

সর্বশেষ খবর