বৃহস্পতিবার, ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা
চট্টগ্রাম পর্ব শেষ...

সেরার লড়াইয়ে এগিয়ে সাকিব

মেজবাহ্-উল-হক

সেরার লড়াইয়ে এগিয়ে সাকিব

অন্য সতীর্থরা যেখানে আইসিসি র‌্যাঙ্কিংয়ে সেরা পাঁচে জায়গাই করে নিতে পারেন না, সেখানে সাকিব আল হাসান কেন বারবার বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার হন এবং বছরের পর শীর্ষ স্থান ধরে রাখেন- সেই উত্তরটা বোধহয় এবারের বিপিএলেই পেয়ে গেছেন ক্রিকেটামোদীরা!

হতাশার মধ্য দিয়েই শুরু হয়েছিল সাকিবের এই বিপিএল-যাত্রা। চোখের সমস্যার কারণে ব্যাটিংয়ে মারাত্মকভাবে প্রভাব পড়েছিল। কিন্তু মুহূর্তের জন্যও যেন নড়বড়ে হয়ে যায়নি বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের ‘দৃঢ়চেতা’ মনবল।

সাকিব এমনই এক ক্রিকেটার যিনি কখনোই চূড়ান্ত লড়াইয়ে পরাজিত হওয়ার আগে মনোবল হারিয়ে ফেলেন না। তাই প্রথম কয়েক ম্যাচে যখন দেখলেন ব্যাট হাতে তিনি পারছেন না তখন বাইশগজে নামলেনই না। এরপর ভক্ত-সমালোচকরা যখন আলোচনা-সমালোচনায় ব্যস্ত তখন সাকিব একাকী অন্যরকম এক যুদ্ধ শুরু করে দিলেন।  বিপিএলের ম্যাচ খেলা বাদ দিয়ে সিঙ্গাপুর গিয়ে চোখের চিকিৎসা করে এলেন, তারপর ব্যাট হাতে ভয়ংকর রকমের পরিশ্রম করে নিজেকে প্রস্তুত করেই মাঠে ফিরলেন। এ সময় বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার দলের সঙ্গে থাকলেও যেন নিজের জন্য আলাদা মনস্তাত্ত্বিকভাবে জগৎ তৈরি করে নিয়েছিলেন। তারপর বাইশগজে ফিরলেন আগের চেয়ে আরও ভয়ংকর হয়ে।

বাইশগজে সাকিব এতটাই দাপট দেখাচ্ছেন যে, শেষ পাঁচ ম্যাচের পারফরম্যান্স দিয়েই বিপিএলে টুর্নামেন্টসেরার লড়াইয়ে সবাইকে ছাড়িয়ে গেছেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব।

মজার বিষয় হচ্ছে, তার ব্যাটিং ব্যর্থতা নিয়ে যখন কথা উঠছিল তখনো কিন্তু বল হাতে তিনি ঠিকই দাপুটে পারফর্ম করছিল ম্যাচের পর ম্যাচ। রংপুর রাইডার্স ফ্র্যাঞ্চাইজি তো কেবল বোলার সাকিবকে পেয়েই সন্তুষ্ট ছিল। কিন্তু নিজের একপাশ-অফ (ব্যাটিং সাইড) রেখে খেলা চালিয়ে যাওয়ায় মোটেও স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছিলেন না সাকিব।

অথচ প্রতিটি ম্যাচেই তার বোলিং ফিগার কী দারুণ! অন্যদের চেয়ে এক ম্যাচ কম খেলেও তিনি সর্বোচ্চ উইকেট শিকারির তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন। ১১ ম্যাচে নিয়েছেন ১৭ উইকেট। বোলিং এভারেজও দারুণ-১৫.৫৩। এ তালিকায় শীর্ষে রয়েছেন দুর্দান্ত ঢাকার বোলার পেসার শরিফুল ইসলাম। প্লে-অফের দৌড় থেকে রাজধানীর দলটি বাদ পড়ায় এখন উইকেট সংখ্যা বাড়ানোর আর কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু রংপুর রাইডার্সের সামনে দুই কিংবা তিনটি ম্যাচ।

প্রথম কোয়ালিফায়ারে সাকিবের দল খেলবে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের বিরুদ্ধে। জিতলে সরাসরি ফাইনালে চলে যাবে। আর হারলেও খেলতে হবে দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ার ম্যাচ। তখন ওই ম্যাচে জিতলে ফাইনাল, আর হারলে বিদায়।

তাই কেবল বোলিং দিয়েই টুর্নামেন্টসেরা হওয়ার দৌড়ে শীর্ষে থাকবেন সাকিব। এমনকি শরিফুলকে টপকে যাওয়া এখন তার জন্য কেবলই সময়ের ব্যাপার মাত্র।

কিন্তু শেষ পাঁচ ম্যাচে সাকিব যে আগ্রাসি মুডে ব্যাটিং করেছেন- তাতে সবাইকে টপকে অনেক ওপরে চলে গেছেন টুর্নামেন্টসেরা হওয়ার লড়াইয়ে। শেষ পাঁচ ম্যাচে সাকিবের পাঁচ ইনিংস- ২৪ (১৯ বলে, ভিক্টোরিয়ান্সের বিরুদ্ধে), ২৯ (১৫ বলে, ফরচুনের বিরুদ্ধে), ৬২ (৩৯ বলে, চ্যালেঞ্জার্সের বিরুদ্ধে), ৬৯ (৩১ বলে, টাইগার্সের বিরুদ্ধে), ২৭ (১৬ বলে, চ্যালেঞ্জার্সের বিরুদ্ধে)। সব মিলে চলতি আসরে সাকিব ৯ ম্যাচে ব্যাটিং করে ১৬৮.২৪ স্ট্রাইকরেটে ২৭.৬৬ গড়ে করেছেন ২৪৯ রান।

বল হাতে ১৫ উইকেট এবং ব্যাট হাতে ১৫৪ রান করে এই তালিকায় রয়েছেন রাইডার্সে সাকিবের সতীর্থ শেখ মেহেদি হাসানও। যদিও সাকিবের সঙ্গে তার দূরত্বটা অনেক বেশিই। খানিকটা দূরে হলেও এই তালিকায় নাম রয়েছেন দুই তামিম ও তৌহিদ হৃদয়। তানজিদ তামিম ৩৮২ রান করে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। চমক দেখিয়ে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স যদি চ্যাম্পিয়ন হয়ে যায় তাহলে ছোট তামিম টুর্নামেন্টসেরা হলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। আর কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স ফাইনালে উঠলে কিংবা চ্যাম্পিয়ন হলে হৃদয়ের সম্ভাবনা বেড়ে যাবে।

ফরচুন বরিশালকে চ্যাম্পিয়ন করতে পারলে সেরা হয়ে যেতে পারেন তাদের দলনায়ক তামিম ইকবালও। কিন্তু চট্টগ্রাম পর্ব শেষে এখন পর্যন্ত সেরার তালিকায় সবচেয়ে বেশি উজ্জ্বল সাকিবই। তাছাড়া টুর্নামেন্টে রংপুর রাইডার্স দুর্দান্ত দাপট দেখাচ্ছে। শিরোপার সম্ভাবনাও যেমন বেশি উত্তরাঞ্চলের দলটির, তেমনি সেরা হওয়ার দৌড়েও বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর