শুক্রবার, ১ মার্চ, ২০২৪ ০০:০০ টা
বিপিএল ফাইনাল আজ

ফরচুনের বাধা সেই ভিক্টোরিয়ান্স

মেজবাহ্-উল-হক

ফরচুনের বাধা সেই ভিক্টোরিয়ান্স

মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে দিবা-রাত্রির ম্যাচে টসই গড়ে দিচ্ছে ম্যাচের ভাগ্য। সেমিফাইনালের মোড়কে ঢাকা দুই কোয়ালিফায়ারেই দেখা গেছে, যে দল টস জিতে পরে ব্যাটিং নিয়েছে তারাই জিতেছে। তাই আজ বিপিএলের দশম আসরের ফাইনালে মাঠে নামার আগে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স অধিনায়ক লিটন দাস ও ফরচুন বরিশাল অধিনায়ক তামিম ইকবালের যত ভয় এই টস নিয়েই।

পরে ব্যাট করা দল বাড়তি সুবিধা পায়। প্রথমে ব্যাট করতে নামলে কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হয় ব্যাটারদের। আন-ইভেন বাউন্স থাকে। বলের গতি ঠিকঠাক বোঝা যায় না। প্রথমে ব্যাট করতে নামলে ইনিংসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত ‘ব্যাটিং পাওয়ার প্লে’ ভেস্তে যাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে। 

আর পরে ব্যাট করলে একে তো প্রতিপক্ষের মোট রান দেখে টার্গেট সেট করা যায়, দ্বিতীয় ব্যাটিং পাওয়ার প্লে খুবই ভালোভাবে কাজে লাগানো সম্ভব হয়!

তাহলে কি ফাইনালে প্রথমে ব্যাট করলে জয়ের কোনো সম্ভাবনা নেই? অবশ্যই আছে। সেক্ষেত্রে পাওয়ার প্লে হ্যান্ডেল করতে হবে ক্যালকুলেটিভভাবে। প্রথম ছয় ওভারে রান করা হলেও উইকেট হারানো যাবে না। মাঝের ওভারগুলোতে বাইশগজে ঝড় তুলতে হবে। আর স্লগ ওভারে প্রতিপক্ষের বোলারদের ওপর দিয়ে রীতিমতো টর্নেডো চালাতে হবে। পরে বোলিং করলে বোলারদের দায়িত্ব থাকে অনেক বেশি। ভালো করতে না পারলে দুই শতাধিক রানের টার্গেটও নিরাপদ নয়।

প্রথম কোয়ালিফায়ারেই দেখা গেছে, রংপুর রাইডার্সের ১৮৬ রানের টার্গেটে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স পৌঁছে গেছে ৯ বল হাতে রেখেই।

তারপরও ফাইনাল ম্যাচের টেম্পারমেন্ট আলাদা। এখানে বাইশগজের লড়াইয়ের পাশাপাশি দুই দলের ¯œায়ুর লড়াইও হবে। অধিনায়ক ও কোচের বুদ্ধিমত্তাও এক্স ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করতে পারে।

আজকের ম্যাচে ভিক্টোরিয়ান্স ও ফরচুনের লড়াইয়ের আড়ালে দেশসেরা দুই ওপেনার ক্যাপ্টেন লিটন দাস ও ক্যাপ্টেন তামিম ইকবালের মধ্যে লড়াই। মুখোমুখি অবস্থানে দুই কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দীন ও ডেভ হোয়াটমোর।

বিপিএলের সবচেয়ে সফল কোচ হচ্ছেন সালাউদ্দীন। তিনি প্রথম থেকেই ভিক্টোরিয়ান্সের দায়িত্বে। এর আগে চারবার শিরোপাও এনে দিয়েছেন কুমিল্লাকে। তবে মজার বিষয় হচ্ছে, ফাইনালে এখন পর্যন্ত অপরাজিত সালাউদ্দীনের কুমিল্লা। যে কয়বার ফাইনাল খেলেছে প্রতিবারই চ্যাম্পিয়ন। শেষ দুই আসরে টানা চ্যাম্পিয়ন এই ভিক্টোরিয়ান্স। এবার টানা তৃতীয়বারের মতো ফাইনাল খেলছে, এখন হ্যাটট্রিক শিরোপার অপেক্ষা।

ডেভ হোয়াটমোরের ঝুলিতে আছে একটি বিশ্বকাপ। তার কোচিংয়েই ১৯৯৬ সালে প্রথমবারের মতো ওয়ানডে বিশ্বকাপ জিতেছিল শ্রীলঙ্কা। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশ জাতীয় দলের সফল কোচও ছিলেন। এবার অস্ট্রেলিয়ার এই কোচের কাঁধে বিপিএল জয় করার চ্যালেঞ্জ।

হোয়াটমোর দারুণ একটি দল পেয়েছেন। বাংলাদেশের ইতিহাসের সেরা পাঁচ ক্রিকেটারের তিনজন- তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ তার দলে। ক্যাপ্টেন তামিম দুর্দান্ত ব্যাটিং করে সামনে থেকে দলকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। টুর্নামেন্টে এখন তিনি সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। মুশফিকের ক্যারিশমেটিক ব্যাটিংয়ে শেষ ম্যাচটি জিতেছে ফরচুন। এ ছাড়া মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন ও সৌম্য সরকারের মতো ক্রিকেটার আছে বরিশালে। দলটি বিদেশি ক্রিকেটাররাও দারুণ ফর্মে। ক্যারিবীয় তারকা কাইল মায়ার্স প্রতি ম্যাচেই দাপুটে পারফর্ম করছেন। প্রোটিয়া ঝড় ডেভিড মিলার আছেন এই দলে। সব মিলে পারফেক্ট এক টিম। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মতোই দল ফরচুন বরিশাল।

তবে প্রতিপক্ষ কুমিল্লা বলেই যত ভয়। কারণ এর আগেও তিনবার ফাইনালে উঠেছিল বরিশাল। কিন্তু শিরোপা এখনো অধরা। তিনবারের মধ্যে দুবারই তারা হেরেছে এই কুমিল্লার বিরুদ্ধে। এবার ফরচুনের সামনে বাধা সেই ভিক্টোরিয়ান্স।

প্রতিবারের মতো এবারও কুমিল্লা সুপার এক টিম। মারকুটে ব্যাটার লিটন দাস নেতৃত্ব দিচ্ছেন সামনে থেকে। তৌহিদ হৃদয়ের তান্ডবে ব্যাটিং তো ক্রিকেট ভক্তদের হৃদয় হরণ করে নিচ্ছে। তার স্ট্রাইকরেট ১৫০ আর গড় ৪১। কী দুর্দান্ত ব্যাটিং। হৃদয় বাইশ গজে সেট হয়ে গেলেই কুমিল্লার বাজিমাত। টি-২০ ক্রিকেটের সেরা দুই মাস্টার ক্রিকেটার ক্যারিবীয় ঝড় আন্দ্রে রাসেল ও সুনীল নারাইন তো আছেনই। ইংলিশ তারকা মঈন আলীও বাজিমাত করে দেওয়ার জন্য প্রস্তুত। তাই আজ বিপিএলের শিরোপা জয়ের দাবিদার এই ভিক্টোরিয়ান্সও।

এখন দেখা যাক, বিপিএলে কুমিল্লা ক্যারিশমা দেখিয়ে পঞ্চম চ্যাম্পিয়ন হয় নাকি প্রথমবারের মতো শিরোপা জিতে বাজিমাত করে দেয় বরিশাল।

সর্বশেষ খবর