শনিবার, ২ মার্চ, ২০২৪ ০০:০০ টা

বাবার স্বপ্ন সত্যি করলেন ছেলেরা

ক্রীড়া প্রতিবেদক

বাবার স্বপ্ন সত্যি করলেন ছেলেরা

বাবা ফুটবলার ছিলেন বলে ছেলেকেও সে পথে যেতে হবে এমন কোনো কথা নেই। কিংবা ক্রিকেটারের ছেলে ক্রিকেটার হবেন ভাবাও ঠিক না। ষাটের দশক থেকে সত্তরের দশকের মাঝামাঝি পর্যন্ত দেশের প্রথম শ্রেণির ফুটবলে মাঠ কাঁপান রাজশাহীর শামসুল ইসলাম মোল্লা। যিনি শামসু নামে ব্যাপক পরিচিত ছিলেন। দীর্ঘদিন ঐতিহ্যবাহী মোহামেডানে খেলার পর ১৯৭৪ সালে শামসু আবাহনীতে যোগ দেন। দুই দলে তার চমৎকার নৈপুণ্য এখনো চোখে ভাসে। শামসুকে বলা হতো লাকি ফুটবলার। অনেক ম্যাচে বদলি হিসেবে নেমেও শেষের দিকে তারই গোলে দল জিতেছে এমন বহু রেকর্ড রয়েছে। শামসুর আরেক ভাই জালুও মোহামেডানে খেলতেন। পরে ওয়ান্ডারার্সে খেলে ক্যারিয়ারে ইতি টানেন।

বাপ-চাচা খ্যাতনামা ফুটবলার ছিলেন। তাই অনেকে ভেবেছিলেন এ বংশের কেউ খেলোয়াড় হলে ফুটবলারই হবেন। কিন্তু তা আর হয়নি, শামসুর ছেলে হয়েছেন দেশের স্বনামধন্য ক্রিকেটার। খালেদ মাসুদ পাইলট পরিচিতির দিক দিয়ে বাবা শামসুকে ছাড়িয়ে গেছেন। বাংলাদেশের ক্রিকেটের এমন গৌরবময় অবস্থানে উইকেটরক্ষক পাইলটের অবদান স্মরণীয় হয়ে থাকবে। জাতীয় দলকে তিনি নেতৃত্বও দেন।

আসা যাক আরেক বাবার কথা। ইকবাল খান। তিনিও সত্তরের দশকে ফুটবলে পরিচিত মুখ। ঢাকা ফুটবলে ওয়াপদা ও ইস্টএন্ডে খেলে তারকা খ্যাতি পান। বড় দলের বিপক্ষে তাঁর দর্শনীয় গোলগুলো এখনো চোখে ভাসে। নামকরা এই স্ট্রাইকার জাতীয় দলেও ডাক পেয়েছিলেন। ইনজুরির কারণে স্বপ্নের জার্সিতে আর অভিষেক হয়নি। চট্টগ্রামে ফুটবল অগ্রগতির পেছনে ইকবালই রেখেছিলেন বড় ভূমিকা। তাঁর নেতৃত্বে চট্টগ্রাম মোহামেডান টানা ছয়বার লিগ জিতে দেশের ফুটবলে ইতিহাস গড়ে। চট্টগ্রামে আবাহনী প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পেছনেও তাঁর অবদান যথেষ্ট।

স্বনামধন্য ফুটবলার হওয়ার পরও ইকবালের ছোট ভাই আকরাম খান ক্রিকেটার হিসেবে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পান। তাঁরই নেতৃত্বে আইসিসি ট্রফিতে চ্যাম্পিয়ন হয়ে বিশ্বকাপ ক্রিকেটে বাংলাদেশের অভিষেক হয়। দেশের ক্রিকেটে অন্যতম জনপ্রিয় নাম আকরাম। ইকবালের দুই ছেলে নাফিস ইকবাল ও তামিম ইকবালও চাচার পথ অনুসরণ করে ক্রিকেটই বেছে নেন। শুধু বেছেই নেননি, পরে দুই ভাই হয়ে যান দেশের সুপারস্টার ক্রিকেটার। বিশেষ করে তামিম তো দেশের ক্রিকেটের বড় বিজ্ঞাপন।

জাতীয় দলের সাবেক ক্রিকেটার জাহাঙ্গীর আলমের ছেলে জিসান আলমও ক্রিকেটই বেছে নিয়েছেন। অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে সুযোগও পান। হকির কিংবদন্তি সোনা মিঞার ছেলে রাসেল মাহমুদ জিমিও হয়েছেন দেশের হকির পরিচিত মুখ।

ফুটবলার শামসু ও ইকবাল জাতীয় দলে না খেললেও তাঁদের স্বপ্ন পূরণ হয় ছেলেরা ক্রিকেটে জাতীয় দলে খেলায়। একই অবস্থা সাবেক তারকা ক্রিকেটার হালিম শাহের। ইনজুরির কারণে জাতীয় দলে সুযোগ না পেলেও দেশের ক্রিকেটে পরিচিত মুখ ছিলেন হালিম শাহ। মোহামেডান, ব্রাদার্স ও ওয়ারীর হয়ে ঢাকা লিগে দাপটের সঙ্গে খেলেছেন। অনূর্ধ্ব-১৯ দলে খেললেও মূল জাতীয় দলে না খেলার আক্ষেপটা থেকে যায় হালিমের। ক্রিকেটকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিদায় না জানিয়ে তিনি পাড়ি জমান কানাডায়। সেখানেই প্রবাসজীবন যাপন করছেন।

কানাডায় ক্রিকেটের চেয়ে ফুটবলে জনপ্রিয়তা বেশি বলেই হালিমের ছেলে সৈয়দ কাজেম শাহ ফুটবলের দিকে ঝুঁকে পড়েন। সেখানে স্কুল ও কলেজ টুর্নামেন্টে দক্ষতার সঙ্গে খেলেন। কাজেম দুই মৌসুম পেশাদার লিগে পুলিশের হয়ে খেলছেন। তার খেলায় চোখ ধরে যায় কোচ হাভিয়ের কাবরেরার। বিশ্বকাপ বাছাইয়ে ফিলিস্তিনের বিপক্ষে ২৮ সদস্যের জাতীয় দলে প্রাথমিক স্কোয়াডে কাজেমের জায়গা হয়েছে। শুধু তাই নয়, সংবাদ সম্মেলনে কোচ কাজেমের যে প্রশংসা করেছেন তাতে তার জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়াটা সময়ের ব্যাপারই বলা যায়।

সর্বশেষ খবর