শুক্রবার, ৮ মার্চ, ২০২৪ ০০:০০ টা
সিলেটে সবুজ উইকেটে অনুশীলন

স্পোর্টিং উইকেটে খেলার চ্যালেঞ্জ

মেজবাহ্-উল-হক

স্পোর্টিং উইকেটে খেলার চ্যালেঞ্জ

বাংলাদেশও পাখির চোখ করে রেখেছে আমেরিকা বিশ্বকাপকে। সে কারণেই শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে টি-২০ সিরিজে সিলেটে সম্পূর্ণ স্পোর্টিং উইকেট বানিয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড। ঘরের মাঠে স্পোর্টিং উইকেটে খেলায় অভ্যস্ত হয়ে গেলে বিশ্বকাপে গিয়ে নতুন করে আর চ্যালেঞ্জ মনে হবে না।

 

ক্রিকেটে দ্বিপক্ষীয় সিরিজের উইকেটে ‘রহস্য’ লুকিয়ে থাকে! উইকেটের নেপথ্যের ঘটনা কেবল স্বাগতিকরা জানে! প্রতিপক্ষের দুর্বলতা এবং নিজেদের শক্তিমত্তার কথা বিবেচনা করে উইকেট থেকে বাড়তি সুবিধা আদায় করে নেওয়ার প্রয়াস থেকেই এ রহস্য!

সে কারণে ঘরের মাঠে দ্বিপক্ষীয় সিরিজে স্বাগতিকরা দাপুটে পারফর্ম করে। তবে আইসিসির টুর্নামেন্ট হলে ভিন্ন কথা! তখন স্বাগতিকরা উইকেট থেকে খুব একটা সুবিধা পায় না। ক্রিকেটের অভিভাবক সংস্থা আইসিসি নিজেদের মতো করে স্পোর্টিং উইকেট বানায়।

স্পোর্টিং উইকেট বলতে বোঝায় সবার জন্য সমান সুবিধা থাকবে এমন পিচ! অর্থাৎ ব্যাটার কিংবা বোলার  (পেসার ও স্পিনার) যে কেউ ভালো করতে পারেন। একজন ক্রিকেটার কতটা ভালো, তার স্কিলের আসল পরীক্ষা হয় স্পোর্টিং উইকেটে।

সামনেই টি-২০ বিশ্বকাপ। প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের আয়োজন করছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এ আসর ঘিরে ইতোমধ্যেই পরিকল্পনা কষতে শুরু করেছে বড় দলগুলো। বাংলাদেশও পাখির চোখ করে রেখেছে আমেরিকা বিশ্বকাপকে। সে কারণেই শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে টি-২০ সিরিজে সিলেটে সম্পূর্ণ স্পোর্টিং উইকেট বানিয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড। ঘরের মাঠে স্পোর্টিং উইকেটে খেলায় অভ্যস্ত হয়ে গেলে বিশ্বকাপে গিয়ে নতুন করে আর চ্যালেঞ্জ মনে হবে না।

এমন উইকেটে খেলার কারণে ক্রিকেটাররাও আগে থেকেই নিজেদের শক্তিমত্তা এবং দুর্বলতা সম্পর্কে জানতে পারবেন। প্রস্তুতিটাও নিতে পারবেন সে অনুযায়ী।

শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে সিলেটে টি-২০ সিরিজের দুই ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ। সবুজ ঘাসের উইকেট। কিন্তু রানে ভরা। উইকেটে যখন ঘাস থাকে তখন স্যাঁতস্যাঁতে ভাবটা কমে যায়। তাই উইকেট স্লো হওয়ার আর কোনো সম্ভাবনা থাকে না। আন-ইভেন বাউন্সও থাকে না। এমন উইকেটে বল সহজেই ব্যাটে আসে। দলের স্কোরও অনেক বড় হয়।

এ জন্যই সিলেটে প্রথম টি-২০ ম্যাচে দেখা যায়, শ্রীলঙ্কা প্রথমে ব্যাট করে ২০৬ রান করেও স্বস্তিতে ছিল না। বাংলাদেশ লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ২০৩ রান করে। শেষ ওভারে তো একটুখানি ভুল না করলে জিতেই যেত টাইগাররা। দ্বিতীয় ম্যাচেও একই রকম উইকেটে খেলা হয়েছে।

বাংলাদেশের বোলারদের ক্যারিশমেটিক বোলিংয়ের জন্য ১৬৫ রানের বেশি করতে পারেনি লঙ্কানরা। লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ১১ বল আগেই জিতে যায় স্বাগতিকরা। এখানেই বোঝা যায়, উইকেট যে ২০০ শতাধিক রানের ছিল!

তবে এমন উইকেটে পরে ব্যাটিং করা দল বাড়তি সুবিধা পায়। কারণ, প্রতিপক্ষের রান ও ব্যাটিং স্টাইল দেখে তারা পরিকল্পনা সাজানোর সুযোগ পান। আর দিবা-রাত্রির ম্যাচ হলে তো কথাই নেই। কারণ, পরে ব্যাটিং করা দল অনেক বেশি সুবিধা পেয়ে যায়। রাতে অনেক সময় শিশিরের কারণে বল গ্রিব করা কঠিন হয়ে যায়। ঠিকমতো স্পিন হয় না।

সে কারণেই বলা হয়, স্পোর্টিং উইকেটে দিবা-রাত্রির ম্যাচে টস জয় মানেই জয়! তবে আত্মবিশ্বাস সবসময়ই এক্স-ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করে। প্রথমে ব্যাট করে রান অনেক বেশি করতে পারলে প্রতিপক্ষ টেনশনে পড়ে যায়। বাড়তি চাপের কারণে বাইশগজে টিকে থাকাও কঠিন হয়।

শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে টি-২০ সিরিজে পিছিয়ে পড়েও ১-১ সমতা এনেছে বাংলাদেশ। ঘরের মাঠে স্পোর্টিং উইকেটে খেলতে নেমে দুই ম্যাচেই দাপট দেখিয়েছেন টাইগাররা। দুই ম্যাচেই স্বাগতিকদের শরীরী ভাষা বলে দিচ্ছিল তারা কতটা আত্মবিশ্বাসী!

যদিও ঘরের মাঠে স্পোর্টিং উইকেটে খেলাটা সবসময়ই চ্যালেঞ্জিং। অনভ্যস্ততার কারণে এমন উইকেটে খেলতে গেলে ম্যাচ হারার সম্ভাবনা বেশি থাকে। বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা তো আর সচরাচর এমন উইকেটে খেলেন না। তবে বিশ্বকাপের আগে ম্যাচে হার-জিতের চিন্তা না করে এমন স্পোর্টিং উইকেটে তৈরি করে যেন সাহসিকতা পরিচয়ই দিয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড।

টাইগাররা এমন উইকেটে নিয়মিত খেলতে থাকলে সাময়িক সমস্যা হলেও ভবিষ্যতে যে অনেক ভালো কিছু হবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না! হয়তো আমেরিকা বিশ্বকাপেই দেখা যেতে পারে অন্য এক বাংলাদেশকে।

সর্বশেষ খবর