রবিবার, ১০ মার্চ, ২০২৪ ০০:০০ টা

লজ্জার ব্যাটিংয়ে সুযোগ হাতছাড়া

তুশারার হ্যাটট্রিক সিরিজ জয় শ্রীলঙ্কার

মেজবাহ্-উল-হক

লজ্জার ব্যাটিংয়ে সুযোগ হাতছাড়া

গতি এবং সুইংয়ে পরাস্ত ক্যাপ্টেন নাজমুল হোসেন শান্ত। ঠিকই একই রকম সুইংয়ে পরের বলেই বোল্ড তৌহিদ হৃদয়। টানা তৃতীয় বলটিও একই ডেলিভারি দিলেন লঙ্কান পেসার নুয়ান তুশারা। বোকা বনে গেলেন অভিজ্ঞ মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। টানা তিন বলে তিন উইকেট নিয়ে হ্যাটট্রিক পূরণ করলেন তুশারা। বাংলাদেশের ইতিহাস গড়ার রাস্তাটাও তখনই বন্ধ হয়ে গেল।

জিতলেই প্রথমবারের মতো শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে টি-২০ সিরিজ জিতত বাংলাদেশ। দারুণ সুযোগও তৈরি হয়েছিল। কিন্তু ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে উল্টো ২৮ রানে হেরে গেল স্বাগতিকরা।

গতকাল টস হেরে ব্যাট করতে নেমে শ্রীলঙ্কা ৭ উইকেটে ১৭৪ রান করে। লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ১৪৬ রানেই অলআউট টাইগাররা। ২-১ ব্যবধানে সিরিজ জিতল শ্রীলঙ্কা। তিন ম্যাচের দাপুটে ব্যাটিং করে সিরিজ সেরা লঙ্কান ওপেনার কুশল মেন্ডিস।

সিলেটের ব্যাটিং স্বর্গে কাল বাংলাদেশের শুরুটাই ছিল বিভীষিকাময়। তৃতীয় ওভারে লিটন দাস আউট হয়ে যান। ধনাঞ্জয়া ডি সিলভার বলে যেন ক্যাচ প্র্যাকটিস করালেন টাইগার ওপেনার। এরপরই আসে দুঃস্বপ্নের সেই ওভার! টানা তিন বলে শান্ত, হৃদয় ও মাহমুদুল্লাহকে ড্রেসিংরুমের পথ ধরিয়ে দেন তুশারা। এই এক ওভারেই যেন ম্যাচ থেকে ছিটকে যায় বাংলাদেশ।

তারপরও টি-২০ ফরম্যাট বলে একটা ক্ষীণ আশা ছিলই। তাছাড়া সৌম্য সরকার ও জাকের আলীর মতো তারকারা তো আছেন! প্রথম ম্যাচে জাকের আলী যেভাবে বাইশগজে তান্ডব তালিয়েছেন এ ম্যাচেও যদি তেমন করে দেখান। 

কিন্তু সৌম্য এবং জাকের কেউ-ই পারলেন না। দুজনই ব্যর্থ। আগের ওভারে হ্যাটট্রিক পূরণ করা তুশারা পরের ওভারে এসে সেই একই রকম ডেলিভারিতে সৌম্যকে বোল্ড করলেন। একই রকম ডেলিভারি দিয়েও টি-২০তে টপাটপ উইকেট তুলে নেওয়া যায়- তা বুঝে গিয়েছিলেন লঙ্কান এই পেসার। তার সুইং ও গতি বিধ্বস্ত করে দিল বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইনআপ।

এ ম্যাচে ক্যারিশম্যাটিক কিছু করে দেখাতে পারলেন না জাকের আলীও। ১৩ বল থেকে মাত্র ৪ রান করে তিনি লঙ্কান ক্যাপ্টেন ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গার শিকারে পরিণত হলেন।

 

রানের পাহাড় টপকাতে নেমে ৩২ রানেই বিদায় নেন বাংলাদেশের প্রথম ছয় ব্যাটসম্যান। শুরুতেই লিটন, সৌম্য, শান্ত, হৃদয়, মাহমুদুল্লাহ ও জাকেরকে হারানোর পর মনে হচ্ছিল দলীয় ‘ফিফটি’ হবে কি না! কিন্তু এমন ম্যাচেও জাদু দেখালেন ৮ নম্বর ও ৯ নম্বর ব্যাটসম্যান রিশাদ হোসেন ও তাসকিন আহমেদ।

লঙ্কান বোলারদের ওপর রীতিমতো তান্ডব চালিয়েছেন দুই লোয়ার অর্ডার ব্যাটার। রিশাদ একে একে ৭ সাতটি ছক্কা হাঁকান। এক ম্যাচে বাংলাদেশের হয়ে টি-২০তে সর্বোচ্চ ছক্কা হাঁকানোর নতুন রেকর্ড এটি। প্রথম ম্যাচেই ছয় ছক্কা হাঁকিয়ে এই রেকর্ড ভেঙেছিলেন জাকের আলী। এ ম্যাচে রিশাদ দাপট দেখিয়ে জাকেরকেও ছাপিয়ে গেলেন।

গতকাল যেন মরা ম্যাচেও আশার আলো জ্বালিয়েছিলেন রিশাদ। মাত্র ২৬ বলে ঝড়ো হাফ সেঞ্চুরি করেন। রিশাদের প্রতিটি ছক্কাই ছিল দেখার মতো। যে লঙ্কানরা ইনিংসের শুরুর দিকে ক্যারিশম্যাটিক বোলিং করে নিয়মিত ব্যাটারদের আতঙ্কিত করেছেন, সেই বোলারদেরই যেন তুলাধোনা করে ছাড়লেন রিশাদ। যতক্ষণ উইকেটে ছিলেন, আশাও ছিল বাংলাদেশের। এক সময় মনে হচ্ছিল যেন অসম্ভবকেই সম্ভব করতে চলেছেন। কিন্তু শেষ রক্ষা করতে পারেননি। ছক্কা হাঁকাতে গিয়েই টেকশানার বলে বাউন্ডারি লাইনে ক্যাচ হয়ে যান। আউট হওয়ার আগে ৩০ বলে খেলেন ৫৩ রানের ইনিংস।

রিশাদ দলে জায়গা পেয়েছেন একজন বিশেষজ্ঞ লেগ-স্পিনার হিসেবে। কিন্তু গতকাল তিনি দেখিয়ে দিলেন ব্যাট হাতে কম যান না। তার এক-একটি ছক্কায় যখন বল আঁছড়ে পড়ছিল সিলেট স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে, তখন মনে হচ্ছিল ক্যারিবীয় কোনো তারকা ব্যাটার হয়তো ব্যাট করছেন। এ ম্যাচে দারুণ ব্যাটিং করে নিজের অলরাউন্ডসত্তা উন্মোচিত করলেন।

কাল তাসকিন আহমেদের ২১ বলে ৩১ রানের ইনিংসটাও প্রশংসার দাবি রাখে। শেষ দিকে তার ছক্কা দুটি ছিল অসাধারণ।

নিয়মিত ব্যাটারদের লজ্জাজনক ব্যাটিংয়ে ম্যাচে বাংলাদেশ সিরিজ হারলেও দর্শকের মন জয় করে নিয়েছেন লেজের ব্যাটাররা।

সর্বশেষ খবর