বুধবার, ২৭ মার্চ, ২০২৪ ০০:০০ টা

মুহূর্তের ভুলে সব শেষ

বসুন্ধরা কিংস অ্যারিনায় জামালদের প্রথম হার

রাশেদুর রহমান

মুহূর্তের ভুলে সব শেষ

মুহূর্তের ভুলে সব শেষ। এত এত ট্রেনিং, পরিকল্পনা, দৃষ্টিনন্দন ফুটবল প্রদর্শন, সবই বৃথা! গোলের খেলায় গোল না পেলে বাকি সবই যে অর্থহীন। গতকাল বসুন্ধরা কিংস অ্যারিনায় এটা হাড়ে হাড়ে বুঝেছেন কোচ হাভিয়ের কাবরেরা। ফুটবলাররাও নিশ্চয়ই বুঝেছেন। বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে ফিলিস্তিনের বিপক্ষে হোম ম্যাচে শেষ মুহূর্তে গোল হজম করে ১-০ ব্যবধানের পরাজয় নিয়ে মাঠ ছাড়লেন জামাল ভূইয়ারা।

বসুন্ধরা কিংস অ্যারিনায় বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলতে শুরু করে গত বছর। আফগানিস্তানের বিপক্ষে দুটি প্রীতি ম্যাচ খেলে বাংলাদেশ। সেই ম্যাচ দুটি ড্র করেছিল দুই দল। এরপর মালদ্বীপকে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের ম্যাচে পরাজিত করে। গত বছর লেবাননকে এই মাঠে রুখে দেন জামালরা। পঞ্চম ম্যাচটাও কী অপরাজিত থেকেই শেষ করবে বাংলাদেশ! আশায় ছিলেন কিংস অ্যারিনার উপচে পড়া দর্শকরা। ম্যাচের ৯২ মিনিট পর্যন্ত বাংলাদেশের পক্ষেই তো ছিল ম্যাচটা। বিশেষ করে ৯২ মিনিটে ফিলিস্তিনের আমিদ লাল কার্ড পেয়ে মাঠ ছাড়লে অন্তত একটা পয়েন্ট নিশ্চিত ধরে নিয়েছিলেন সবাই। বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের ম্যাচে একটা পয়েন্টও কী কম ছিল! এটা পেলে স্বাধীনতা দিবসে ছোট্ট একটা উপহার পেয়ে যেতেন দর্শকরা। তা হলো না মুহূর্তের ভুলে। ম্যাচের যোগ করা সময়ে (৯০+৫) বাংলাদেশের ডিফেন্স ফাঁকা পেয়ে সুযোগের সদ্ব্যবহার করে সফরকারী দল। ডি বক্সের ডান দিক থেকে অধিনায়ক মুসাবের শটে বল পেয়ে হেড করেন বাতরান। ডি বক্সের ভিতরে বল পেয়ে ডান পায়ের মাটি গড়ানো শটে গোল করেন মাইকেল মিলাদ। এ গোলটাই জয় উপহার দেয় ফিলিস্তিনকে। ম্যাচের বাকি সব ঘটনা চাপা পড়ে যায়। কী দুরন্ত সাহসে অন্তত তিনটা গোল বাঁচিয়েছেন মিতুল মারমা। ফাহিম-রাকিবের যৌথ আক্রমণে কতবার ফিলিস্তিনের ডিফেন্স লাইন ভেঙে যায়। সবকিছুই ১-০ স্কোরলাইনের নিচে চাপা পড়ে যায়।

ম্যাচটা বাংলাদেশ দুরন্ত সাহসে ভর করেই খেলেছে। ভুল যে কিছু হয়নি তা নয়। সেসব ভুলের মাসুল গুনতে হয়নি নির্ধারিত নব্বই মিনিটে। যেমন ৪৮ মিনিটে দাব্বাগ মিতুলকে একা পেয়েও গোল করতে পারেননি। বাংলাদেশও এমন সুযোগ পেয়েছে। ফাহিম দুটো সুযোগ হারান। ৪৪ মিনিটে জামালের পাসে ডি বক্সে বল পেয়েছিলেন ফাহিম। গোলরক্ষককে পেয়েছিলেন একা। কিন্তু কাজে লাগাতে পারেননি সুযোগটা। এরপরও রাকিব আর ফাহিম গোল করার সুযোগ পেয়েছেন। গোল পাননি। জয় না হোক, অন্তত একটা পয়েন্ট নিয়েই মাঠ ছাড়বে বাংলাদেশ; এমন বিশ্বাস দৃঢ় হচ্ছিল সমর্থকদের। কিন্তু শেষ মুহূর্তে সব তালগোল পাকিয়ে ফেললেন তপু-বিশ্বনাথরা।

বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামে ফুটবলের অবদানের কথা সবাই স্বীকার করেন। গতকাল স্বাধীনতা দিবসে বাংলাদেশ-ফিলিস্তিন ফুটবল ম্যাচে সে কথাই মনে করলেন সমর্থকরা। বসুন্ধরা কিংস অ্যারিনার গ্যালারিতে অনেকেই পোস্টার-ফেস্টুন নিয়ে এসেছেন। এর মধ্যে বড় এক ব্যানারে লেখা ছিল ‘স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং ফুটবল’। বাংলাদেশ ফুটবল নিয়ে স্বাধীনতার পর থেকে কত শত ম্যাচই না খেলেছে। যতটুকু রেকর্ড পাওয়া গেল, তাতে ২৬ মার্চ খেলল এবারই প্রথম। এই ম্যাচে র‌্যাঙ্কিংয়ে, শক্তিতে, কৌশলে নানা দিক দিয়ে ফিলিস্তিনের চেয়ে অনেকটা পিছিয়ে থাকার পরও বাংলাদেশের ফুটবলারদের মধ্যে ছিল হার না মানার আবেগ। মিশেছিল, মুক্তি সংগ্রামের চেতনা। সেই সাহসেই দারুণ একটা ম্যাচ খেলেছিলেন জামালরা। তবে পয়েন্ট হাতছাড়া হয়ে গেল মুহূর্তের ভুলে।

ম্যাচজুড়ে ‘বাংলাদেশ, বাংলাদেশ’ শব্দে দর্শকরা মাতিয়ে রেখেছিলেন কিংস অ্যারিনার গ্যালারি। তবে ম্যাচের পর ‘ফিলিস্তিন, ফিলিস্তিন’ স্লোগান তুলেছেন অনেক দর্শক। ফিলিস্তিনের মানুষের প্রতি জানিয়েছেন সমর্থন।

সর্বশেষ খবর