বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪ ০০:০০ টা

এবার কাবরেরার বিদায়ঘণ্টা!

সভাপতি হিসেবে সালাউদ্দিন ভাইয়ের আক্ষেপ থাকতেই পারে। কেননা সেই ভালো দিয়ে লাভ কী যদি দল জিততে না পারে। এ আক্ষেপ আমারও। কিন্তু এটাতো ঠিক এখন আমরা বলতে পারছি বাংলাদেশ ভালো খেলছে।

ক্রীড়া প্রতিবেদক

এবার কাবরেরার বিদায়ঘণ্টা!

বিশ্বকাপ বাছাই পর্ব ফুটবলে ফিলিস্তিনের বিপক্ষে অ্যাওয়ে ও হোম-দুই ম্যাচেই বাংলাদেশ পরাজিত হয়েছে। কুয়েতে ৪২ মিনিট পর্যন্ত সমানতালে খেললেও শেষ পর্যন্ত জামালরা আর পেরে ওঠেননি। ০-৫ গোলে হেরেছেন। বসুন্ধরা কিংস অ্যারিনায় হোম ম্যাচে দুর্দান্ত খেলেও বাংলাদেশ স্বস্তিতে মাঠ ছাড়তে পারেনি। নির্ধারিত ৯০ মিনিট জামালরা তুলনামূলক ভালো খেললেও আট মিনিটের ইনজুরিতে রক্ষণভাগের ভুলে ৯৪ মিনিটে গোল খেয়ে বাংলাদেশ হেরে যায়। ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশের চেয়ে ৮৬ ধাপ এগিয়ে ফিলিস্তিন। মান ও পারফরম্যান্সের দিক দিয়ে এগিয়ে থাকা ফিলিস্তিনের কাছে দুটি হারই প্রত্যাশিত। তার পরও ঘরের মাঠে বাংলাদেশের পারফরম্যান্স প্রশংসিত হচ্ছে। গোলের সুযোগ হাতছাড়া করায় পয়েন্ট পেতে ব্যর্থ হয়েছে লাল-সবুজের দল।

হেরেও বাংলাদেশের লড়াকু মনোভাব ফুটবলমহলে প্রশংসিত হচ্ছে। তবে দেশের ফুটবলের অভিভাবক কাজী সালাউদ্দিন সন্তুষ্ট নন। দুই ম্যাচে বাংলাদেশের পারফরম্যান্স দেখে তিনি কোচিং স্টাফদের ওপর নাখোশ। এমনকি কোচিং স্টাফ বদলানোরও আভাস দিয়েছেন।

কোচিং স্টাফ বলতে তো হেড কোচ হাভিয়ের কাবরেরাও রয়েছেন। তাহলে কি স্প্যানিশ এই কোচের বিদায়ঘণ্টা বাজতে শুরু করেছে? বাফুফে সভাপতি নাকি এমনও মন্তব্য করছেন, ‘আমি থাকলে তাকে (কাবরেরা) রাখার প্রশ্নই ওঠে না।’ সভাপতির মুখে যখন এমন কথা, তাহলে তো কোচের বিদায়টা সময়ের ব্যাপার বলা যায়। কুয়েতে ০-৫ গোলে হারার পর দলের পজিশন সাজানো নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সভাপতি। বলেছেন, যার যে পজিশনে খেলার অভ্যাস নেই তাকে সেখানে খেলিয়ে দলের বিপর্যয় ডেকে আনা হয়েছে।

১৯৭৩ সালে জাতীয় দলের অভিষেকের পর ফুটবলে কত যে কোচ পরিবর্তন হয়েছে তার হিসাব মেলানো মুশকিল। সে ক্ষেত্রে সালাউদ্দিন যদি চেয়ে থাকেন তাহলে কোচবদল অবাকের কিছু হবে না। প্রশ্ন উঠেছে-কাবরেরাকে বিদায় জানিয়ে নতুন কোচ নিয়োগ দেওয়াটা যুক্তিসংগত হবে কি না? এ ব্যাপারে জাতীয় দলের সাবেক তিন তারকা ফুটবলার আশরাফ উদ্দিন আহমেদ চুন্নু, শেখ মো. আসলাম ও কায়সার হামিদের প্রতিক্রিয়া নেওয়া হয়। তিন সুপারস্টারের একই সুর-কাবরেরাকে চাকরিচ্যুত করলে ফুটবলে বিপর্যয় নেমে আসবে।

চুন্নু বলেন, ‘সভাপতি হিসেবে সালাউদ্দিন ভাইয়ের আক্ষেপ থাকতেই পারে। কেননা সেই ভালো দিয়ে লাভ কী যদি দল জিততে না পারে। এ আক্ষেপ আমারও। কিন্তু এটা তো ঠিক, এখন আমরা বলতে পারছি বাংলাদেশ ভালো খেলছে। কাবরেরাকে নিয়োগ দেওয়ার পর আমিও অবাক হয়েছিলাম। কেননা যে লোকের ক্লাব পর্যায়েও কোচিং দেওয়ার অভিজ্ঞতা ছিল না তিনি একটি দেশের জাতীয় দলের কোচ হলেন কীভাবে? পরে দেখলাম কাবরেরার ভিতর কোয়ালিটি রয়েছে। তিনি আসার আগে ৪৫ মিনিট খেলেই খেলোয়াড়রা হাঁপাত। না ছিল দম, না টেকনিক। ২০২২ সালের জানুয়ারিতে কাবরেরা কোচ হওয়ার পর থেকে জাতীয় দলে পরিবর্তন লক্ষ্য করছি। সবচেয়ে বড় কথা, তিনি খেলোয়াড়দের মানসিকতায় পরিবর্তন আনেন। স্পিড, টেকনিক সব মিলিয়ে আস্থা তৈরি করেন; যা আমরা মাঠেই প্রমাণ পাচ্ছি।’

চুন্নু বলেন, ‘সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশে দাঁড়াতেই পারত না। কাবরেরার কোচিংয়ে বাংলাদেশ কেমন খেলেছে তা সবাই দেখেছে। ফাইনাল খেলতে পারেনি, তবু প্রতিটি ম্যাচে প্রশংসা পাওয়ার মতো পারফরম্যান্স প্রদর্শন করেছে। দল যখন কোমর সোজা করে দাঁড়াতে শুরু করেছে তখনই কি না জানতে পারলাম কাবরেরাকে রাখতে চান না সভাপতি। এটা যে কতটা আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত হবে তা বোঝার দরকার রয়েছে। জিততে পারছে না, ক্ষতি কী! কাবরেরাকে দীর্ঘমেয়াদে রাখা হোক, আমি বলব দেশের ফুটবলে হতাশা কাটবেই। সভাপতির কাছে অনুরোধ থাকবে-কোচ পরিবর্তনের কালচার বন্ধ করুন।’

শেখ মো. আসলাম বলেন, ‘ফুটবলে ব্যর্থতার দায়ভার সভাপতিকে নিতেই হবে। তিনি আবার কোচবদলের ইচ্ছা প্রকাশ করেন কীভাবে? বদল হলে তো পুরো বাফুফেরই বদল দরকার। তা ছাড়া কোচ কাবরেরা তো ভালোই করছেন। বাংলাদেশের খেলার ধারা পাল্টে দিচ্ছেন। ফল অবশ্যই আসবে, কাবরেরাকে সময় দিতে হবে। আমার সোজাসাপটা কথা-ফুটবল উন্নয়নে কাবরেরার বিকল্প দেখছি না। এখানে আরেকজন কোচ আনা মানে দেশের ফুটবলে বিপদ ডেকে আনা।’

কায়সার হামিদের কথা, ‘কোচ তো অনেক দেখেছি, জাতীয় দলের ব্যর্থতা দেখেছি। কিন্তু হাভিয়ের কাবরেরা দায়িত্ব নেওয়ার পর পরিবর্তন দেখছি। যার ওপর আস্থা রাখা যায় কাবরেরা সেই মানের কোচ। যারা মাঠে দম ফেল করত তারাই গতিময় ফুটবল খেলছে। কাবরেরাকে আরও কয়েক বছর রাখলে আমার বিশ্বাস, বাংলাদেশ উন্নতির দিকে যাবে। তাকে বদল মানে ইচ্ছা করে ফুটবলে বিপর্যয় ডেকে আনা।’

 

সর্বশেষ খবর