সোমবার, ১ এপ্রিল, ২০২৪ ০০:০০ টা
সাক্ষাৎকার

বাংলাদেশও এগিয়েছে ফুটবলে

বসুন্ধরা কিংস বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে শততম ম্যাচ খেলেছে। এর মধ্যে ৮৫ ম্যাচেই জয় পেয়েছে। গোল করেছে ২৫০টি। চারটি লিগ শিরোপা জয় করেছে। কিংসের সফলতার পেছনের কারিগর ছিলেন দলটির স্প্যানিশ কোচ অস্কার ব্রুজোন। তার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন রাশেদুর রহমান-

বাংলাদেশও এগিয়েছে ফুটবলে

অভিনন্দন আপনাকে। বসুন্ধরা কিংস লিগে ১০০ ম্যাচ খেলে ৮৫টি ম্যাচ জয় করেছে। কোচ হিসেবে বিষয়টাকে কীভাবে দেখছেন?

২০১৮ সালে যোগ দেওয়ার সময়ই আমার এই ক্লাবের আইডিয়াটা ভালো লেগেছিল। কেবল ট্রফি জয় করাই নয়, ধারাবাহিকভাবে নিজেদের মান উন্নয়নের চেষ্টা করার লক্ষ্য ছিল আমাদের। আমরা সেই পথেই হেঁটেছি।

 

এই সফলতার রহস্য কী?

বসুন্ধরা গ্রুপ আমাদের চলার পথে সব সময়ই সঙ্গে থেকেছে। বসুন্ধরা কিংস পরিকল্পনা করেছে। সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সহযোগিতা করেছে বসুন্ধরা গ্রুপ। আমাদের জন্য উন্নতমানের অবকাঠামো তৈরি করা হয়েছে। এই ক্লাবের একটা বিশেষত্ব আছে। ক্লাব সভাপতি মিস্টার ইমরুল হাসান আমাদেরকে সব সময়ই গাইড করছেন। এই ক্লাবে প্রত্যেকেরই ভিন্ন ভিন্ন দায়িত্ব রয়েছে। তারা নিজেদের দায়িত্বটা ঠিকভাবে পালন করছেন। আমাদের সফলতার পেছনে সবার অবদান রয়েছে। কোচিং স্টাফ ও ম্যানেজমেন্ট সবার ব্রেইনই এখানে কাজ করে।

 

আপনি ছয় বছরে ৯টা ট্রফি জয় করেছেন। কোন ট্রফিটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল? আর কী কী জয় করতে চান?

সত্যি বলতে আমরা এক সপ্তাহের পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করি। প্রতি সপ্তাহেই ভিন্ন ভিন্ন প্রতিপক্ষ থাকে। তাদেরকে সামনে রেখে পরিকল্পনা করি। সেভাবেই অনুশীলন করি। লড়াই করি। অনেক দূরের কথা ভাবলে, কেবল চাপই বাড়বে। আমরা যেভাবে সামনে এগোচ্ছি, এতে করে ফুটবলাররা আত্মবিশ্বাসী থাকে। লক্ষ্য পূরণ করাটা তখন সহজ হয়ে যায়।

আমাদের জয় করা ট্রফিগুলোর মধ্যে প্রথমটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। সেটা ছিল আমাদের প্রথম মৌসুম। নতুন একটা দুনিয়া বলতে পারেন। এখানে অনেক ঐতিহ্যবাহী দল ছিল। তাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে শিরোপা জয় করাটা সহজ ছিল না।

 

বাংলাদেশের ফুটবল কতটা বদলেছে বলে মনে করেন?

বিপিএল এখন অনেক এগিয়েছে। ফিজিক্যাল খেলার চেয়ে পরিকল্পনা কাজে লাগানোর দিকে মনোযোগ দিচ্ছে। কেবল বসুন্ধরা কিংসই নয়, শেখ রাসেল এবং শেখ জামালের মতো ক্লাবগুলোও এখন খেলার ধরন বদলেছে। বিপিএল উন্নত হচ্ছে। এর প্রভাব পড়ছে জাতীয় দলের খেলাতেও। বিপিএল ভালো না করলে জাতীয় দল ভালো করবে না। ছয় বছর আগের পরিস্থিতির সঙ্গে তুলনা করলে আমি বলব, বিপিএলের মান আগের চেয়ে বেড়েছে। জাতীয় দলের মানও বেড়েছে। ফুটবলাররা এখন প্রতিপক্ষের অর্ধ্বে বল রাখতে পারছে। গতি বেড়েছে। তবে আরও উন্নতি করা সম্ভব।

 

স্থানীয় ফুটবলাররা একসময় গোলই করতে পারত না। এখন রাকিবসহ আরও অনেকেই গোল করছেন। এটা কীভাবে সম্ভব হলো?

বাংলাদেশের নিজস্ব কালচার রয়েছে। আমি ফুটবলারদের পক্ষেই কথা বলব। এখানকার ফুটবলারদের বেশ কিছু গুণ রয়েছে। যেমন প্রতিপক্ষের কাছ থেকে বল কেড়ে নেওয়া, বল দখলে রাখা, গতি এবং দৌড়ানোর ক্ষমতা। এসব খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিপক্ষের সঙ্গে একই টেম্পোতে খেলতে পারছে তারা। আমি অতীতের কথা বলতে চাই না। তবে বর্তমানে আমরা ভালো করার জন্য ধারাবাহিকভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছি। আমরা উন্নতি করতে পারি। পরিকল্পনা কাজে লাগাতে পারি। বল পুনঃদখল করা। প্রতিপক্ষের অর্ধ্বে বল রাখা। আর স্ট্রাইকারের কথা বললে, বেশ কিছু বিষয় ভাবতে হবে। এই স্থানটা হচ্ছে সবচেয়ে দামি। কারণ, এখানে ফুটবলারকে একই সঙ্গে অনেক গুণের অধিকারী হতে হয়। গতি, কৌশল এবং নিখুঁত শট নেওয়ার ক্ষমতা থাকতে হয়। এগুলোর ঘাটতি পূরণের জন্য আমরা কাজ করছি। আগের চেয়ে উন্নতি করছে স্থানীয় ফুটবলাররা।

 

বাংলাদেশ সম্পর্কে কিছু বলুন...

প্রতিটা বছরই আমি এখানকার মানুষ এবং সংস্কৃতির সঙ্গে আরও বেশি করে মিশে যাচ্ছি। আমার কাছে এখন বাংলাদেশকেই নিজের বাড়ি বলে মনে হয়। স্পেনে মাঝেমধ্যে যাই বটে, তবে এখানেই এখন আমার বাড়ি।

 

বাংলাদেশে ২০১৮ সালে আসার সময় ভেবেছিলেন এতদিন থাকবেন এখানে?

এটা সত্যিই বিস্ময়কর। বাংলাদেশে আসার আগে আমি কখনোই খুব বেশিদিন এক ক্লাবে ছিলাম না। আমার কাছে মনে হতো দু-তিন বছরের বেশি এক ক্লাবে থাকা ঠিক নয়। ক্লাবগুলোর অনেক বেশি চাহিদা থাকে। সেগুলো পূরণ করা সহজ কাজ হয় না। তবে আমাকে আবারও ক্লাব সভাপতির কথা বলতে হবে। তিনি আমাদেরকে বিশ্বাস জুগিয়েছেন সব সময়ই। আমাদের সুন্দর গল্পটা ছয় বছর ধরে এগিয়ে চলেছে।

 

 

সর্বশেষ খবর